Image description

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে চরম উদ্বেগ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। সম্প্রতি ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ঘটে যাওয়া চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। বিশেষ করে ঢাকার বনশ্রীতে একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি ও চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে একশ ভরি স্বর্ণ লুটের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা বহুগুণে বেড়েছে।

 

এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ, র‍্যাব ও সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিও উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। ইতোমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে, যার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শহীদ মিনারে বিক্ষোভ উল্লেখযোগ্য। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে গণপদযাত্রাও অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 

গত কয়েক মাসে একের পর এক চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী একটি বাসে ডাকাতি, বনশ্রীতে স্বর্ণ ব্যবসায়ীর ওপর হামলা, ধানমন্ডিতে সশস্ত্র মহড়া, মিরপুরে এক রাতে ছয়টি দোকানে ডাকাতি, উত্তরায় বাসে অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনতাই এবং মোহাম্মদপুরে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা—এসব ঘটনা নাগরিকদের নিরাপত্তাহীনতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিভিন্ন সূত্র বলছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা।

 

বনশ্রীতে স্বর্ণ ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের ওপর হামলার ঘটনার ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, মোটরসাইকেলে আসা সাতজন দুর্বৃত্ত তাকে প্রথমে গুলি করে, পরে কুপিয়ে আহত করে একশ ভরির বেশি স্বর্ণ ও টাকা ছিনিয়ে নেয়। এই ঘটনার কিছুক্ষণ আগে আফতাবনগরে গুলির শব্দ শোনা গেলেও এর কারণ জানা যায়নি।

 

এছাড়া, ধানমন্ডির শংকর এলাকায় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে একদল সশস্ত্র ব্যক্তির মহড়ার ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা মসজিদে মাইকে ঘোষণা দেন যে, ডাকাতদল প্রবেশ করেছে। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, তারা কোনো অপরাধের প্রমাণ পায়নি। একইভাবে মিরপুর ১০ নম্বরে এক রাতে ছয়টি দোকানে ডাকাতির ঘটনায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।

 

পুলিশের আইজি বাহারুল হক রাজশাহীতে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে তারা বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশ, র‍্যাব ও এন্টি টেরোরিজম ইউনিট যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু অভিযান দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়, অপরাধীদের মূল শেকড় উপড়ে ফেলা প্রয়োজন।

 

বিশ্লেষকরা বলছেন, পুলিশ বাহিনী বর্তমানে একটি জটিল বাস্তবতার মুখোমুখি। রাজনৈতিক অস্থিরতার পর থেকে পুলিশের একাংশ নিষ্ক্রিয় রয়েছে। অনেকে চাকরি হারানোর ভয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাগ্রস্ত। অপরাধ দমনে পুলিশের পেশাদারিত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

 

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আজ থেকেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তবে সাধারণ মানুষ এই আশ্বাসে কতটা ভরসা করতে পারবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।

 

নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেবল বাহিনীগুলোর অভিযানই যথেষ্ট নয়, বরং অপরাধের সামাজিক ও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতাও বন্ধ করা প্রয়োজন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত না হলে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক আরও বাড়বে, যা সামগ্রিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে। তথ্যসূত্র : বিবিসি বাংলা