
রাজধানীর বনশ্রীতে আনোয়ার হোসেন (৪৩) নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি করে তার সঙ্গে থাকা বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ও নগদ এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ডি ব্লকের ২০ নম্বর বাসার সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত ব্যবসায়ী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, দারোয়ানের স্ত্রী যদি গেট খুলে দিত তাহলে আজকে আমার এই গুলির ঘটনা ঘটতো না।
রোববার রাতের মুহুর্মুহু গুলি আর ছিনতাইয়ের লোমহর্ষক ঘটনা সম্পর্কে ঢাকা পোস্টকে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি এ আক্ষেপের কথা বলেন।
স্বর্ণ ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, রাতে দোকান বন্ধ করে বাসায় ফেরার পথে আমার বন্ধুর দোকানে দাঁড়াই। সেখানে ৫ মিনিট তার সঙ্গে কথা বলে বাসার উদ্দেশে রওনা করি। আমার বাসার সামনে গিয়ে মোটরসাইকেলটি দাঁড় করাই। আমি দারোয়ানকে গেট খুলতে বলি। এর মধ্যে তিনটা হোন্ডা এসে আমাকে ঘেরাও করে ফেলে। এটি দেখে দারোয়ানের বউ গেট লাগিয়ে দেয়। তখনও তারা আমাকে গুলি বা কুপিয়ে আহত করেনি। আমি দারোয়ানকে বারবার গেট খুলতে বলি কিন্তু সে গেট খুলেনি। আপনারাতো ভিডিওতে দেখছেন তখন তারা আমার ব্যাগ নিয়ে টানাটানি করছিল। পরে আমাকে কুপিয়ে এবং গুলি করে আমার ব্যাগে থাকা ১৪০ ভরির মতো স্বর্ণ ও নগদ এক লাখ টাকা নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, দারোয়ানের স্ত্রী গেট খুলে দিলে আমি কিন্তু বাসার ভেতরে ঢুকে যেতে পারতাম। তাহলে তারা আমার ব্যাগ এবং টাকা কিছুই নিতে পারত না। আমাকে গুলি ও কুপিয়ে জখমও করতে পারত না।
আহত স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরও বলেন, ব্যাক দিতে না চাওয়ায় তারা আমাকে কুপিয়ে জখম করে। ৩টি গুলি করে। আমার দুই পায়ে দুটি গুলি করে। অন্ডকোষের নিচে একটি গুলি লাগে। তবে এখন পর্যন্ত চিকিৎসক জানিয়েছেন- আমার শরীরে কোনো গুলি নেই এবং অণ্ডকোষের একটি অপারেশন হবে। শরীরের যে কয়েকটি ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে সেগুলোর অপারেশন করা হয়েছে।
আনোয়ার হোসেন বলেন, এক সপ্তাহ আগে ডিবি পরিচয় দিয়ে আমাকে নানাভাবে ভয় ভীতি দেখায় দুর্বৃত্তরা। আমাকে বলেছিল আমি নাকি অবৈধ স্বর্ণ কিনি। আমার নামে নাকি মামলা আছে। এসব কথা বলে তারা আমার কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা নেয়। পরে তাদের আরও ১০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ছিল। তখন আমি তাদের ফোন দেই যে ভাই সরাসরি এসে ১০ হাজার টাকা নিয়ে যান। তখন ওই ব্যক্তি ফোনের ওপার থেকে জানায়- ‘আমি ঢাকার বাইরে আছি, পরে এসে দেখা করব।’ এরপর আমি আবার ফোন দিলে অপর প্রান্ত থেকে বলেছিল- ‘ভাই আমার সিমটি হারিয়ে গিয়েছিল ওই লোকটি প্রতারক ছিল’।
তিনি বলেন, আমাকে তিনটি নম্বর থেকে ফোন দিয়েছিল সে নম্বরগুলো হলো- ০১৯৪১৮৯৫৫২০, ০১৭০৭২২৯০৯৫, ০১৮৪৬৭৪০৭৪৭।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মোস্তাক আহমেদ বলেন, আমি কিছুক্ষণ আগে ওই রোগীকে দেখে আসলাম। বর্তমানে সে হাসপাতালের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডের দুই নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন আছে। তার কাঁধে একটি ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। যার কারণে তিনি ওই হাতটি এখন নড়াচড়া করতে পারছেন না। তবে সেখানে অপারেশন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এক্স-রে করে আমরা তার শরীরের ভেতরে গুলি আছে সেটি এখনো দেখতে পাইনি। ধারণা করছি, তার অণ্ডকোষে একটি গুলি লেগেছে। সেটির অপারেশন করা হবে। আবারও তার অণ্ডকোষ ও কোমরে এক্স-রে করা হবে। তাহলে বলা যাবে সম্পূর্ণভাবে যে তার শরীরে কোনো গুলি এখনো আছে কি নাই। তবে তিনি এখন সুস্থ আছেন। আশঙ্কার কোনো কিছু নেই।