
হবিগঞ্জের বাহুবলে স্কুল শিক্ষিকা ও উপজেলা জামায়াতের মহিলা ইউনিটের দায়িত্বশীল মিনারা আক্তারের হত্যার ঘটনায় তোলপাড় চলছে। ঘটনার দু’দিন অতিবাহিত হলেও রহস্য উদ্ঘাটন বা কাউকে গ্রেপ্তারে সক্ষম হয়নি পুলিশ। গত শুক্রবার নিজ গৃহে আলোচিত ওই খুনের ঘটনায় জেলা জুড়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে সিলেট বিভাগ জামায়াতে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। হবিগঞ্জ পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তাব্যক্তি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনাকে টার্গেট কিলিং হিসেবে অভিহিত করেন স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। স্থানীয় জামায়াতের তরফে আলোচিত ঘটনাকে আওয়ামী দোসর চক্রের পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় জামায়াত নেত্রী মিনারাকে হত্যা করা হলেও (৩৫) অক্ষত ছিল তার সাত মাস বয়সী শিশু। ঘটনার পর ওই শিশুকে অক্ষত অবস্থায় খাটের নিচে পাওয়া গেছে। এ সময় কোনো মালামাল লুট হয়নি। নিহত মিনারার স্বামী আব্দুল আহাদ উপজেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি এবং জামায়াত সমর্থিত শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি। তাদের সঙ্গে স্থানীয় কারও কোনো বিরোধ ছিল না। পরিবারও কাউকে সন্দেহ করতে পারছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি পশ্চিম জয়পুর গ্রামের সোহান ও বুরহান চৌধুরীর কাছ থেকে ৩ শতক ১০ পয়েন্ট জমি ক্রয় করেন জামায়াত নেতা আব্দুল আহাদ। ক্রয়কৃত জমিতে বাড়ি নির্মাণ শুরু করেন। ইটের গাঁথুনি আর দরজা জানালার কাজ শেষে কয়েক মাস ধরে গৃহে বসবাস শুরু করেন। ওই জমি শাহজাহান নামের প্রভাবশালী এক আওয়ামী লীগ নেতা ক্রয়ে আগ্রহ ছিলেন। উপযুক্ত মূল্য নিয়ে আশঙ্কা থাকায় বিক্রেতা তার কাছে বিক্রয়ে অনীহা প্রকাশ করেন।
জামায়াত সূত্র জানায়, মিনারা জামায়াতে ইসলামীর মহিলা বিভাগের রুকন (সদস্য) এবং উপজেলা মহিলা ইউনিটের দায়িত্বশীল ছাড়াও বাহুবলের মিরপুর পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষিকা ছিলেন। ঘটনার দিন সকালে বাড়ি থেকে বের হন নিহতের স্বামী আব্দুল আহাদ। এ সময় মিনারার সঙ্গে তার সাত মাস বয়সী শিশু সন্তান ছিল। বড় মেয়ে বাড়িতে ছিল না। সিলেট মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি ও হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) নির্বাচনী এলাকায় জামায়াত মনোনীত প্রার্থী মো. শাহজাহান আলী বলেন, চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনার দুইদিন অতিবাহিত হলেও রহস্য উদ্ঘাটনে অগ্রগতি হয়নি। প্রশাসন কোনো ভূমিকা নিচ্ছে না। এলাকায় বখাটে, মাদকাসক্ত, পাতি নেতা, বড় নেতা, সবার প্রতি নজরদারি রাখতে হবে। দ্রুত হবিগঞ্জ জেলার সকল উপজেলাসহ এলাকার সকল নেতৃবৃন্দদেরকে নিয়ে আলোচনার মধ্যদিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। মিনারার স্বামী আব্দুল আহাদ বলেন, চার মাস আগে এখানে বাড়ি বানিয়ে বসবাস শুরু করেছি। আমার কোনো শত্রু নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দোষীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনুক। হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এ এন এম সাজেদুর রহমান বলেন, পুলিশের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনী মাঠে কাজ করছে। হত্যাকাণ্ডের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সব দিক বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা অবশ্যই আইনের আওতায় আসবে।