Image description

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় আহতদের দেখতে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) বা পঙ্গু হাসপাতালে গিয়েছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ‘নো ট্রিটমেন্ট, নো রিলিজ’ নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। যার প্রমাণ প্রসিকিউশনের হাতে এসেছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম।

রোববার আদালতে পূর্বনির্ধারিত বিষয়ে শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন অফিসের সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান তিনি। এমন নির্মমতার প্রমাণসমূহ যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যাচাই-বাছাই ও ফরেনসিক করার পর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী মামলার প্রমাণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে আদালতের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান চিফ প্রসিকিউটর।

তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা যখন পঙ্গু হাসপাতালে পরিদর্শনে গিয়েছিলাম তখন সেখানে চিকিৎসারত আহত রোগী ও তাদের স্বজনরা জানিয়েছেন, হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পূর্বে একবার পঙ্গু হাসপাতাল পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে হাসিনা বলেছিলেন, ‘নো ট্রিটমেন্ট, নো রিলিজ’। অর্থাৎ কর্তব্যরত চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আহতদের কোনো চিকিৎসা না দিতে এবং কাউকে এখান থেকে বাইরে না যেতে দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল বলে জানান তিনি।

চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন,  রোগীদের পাশাপাশি এই নির্দেশাবলীর কথা সেখানকার ডাক্তাররাও আমাদেরকে জানিয়েছেন। এর তথ্য- প্রমাণাদি আমাদের হাতে আছে, আমরা সেটাই আজ আদালতকে জানিয়েছি।

এসময়, সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে আমাদের যেসব সন্তান শহীদ হয়েছেন, তাদের মৃতদেহ প্রশাসনের নির্দেশে সুরতহাল করতে দেয়া হয়নি, কাউকে কাউকে ডেথ সার্টিফিকেটও দেয়া হয়নি। এমনকি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে যাওয়ার পর যারা সেখানেই শহীদ হয়েছেন তাদের ডেথ সার্টিফিকেটে গুলিতে মারা গেছে- এই কথাটিও লিখতে দেয়া হয়নি। শ্বাসকষ্ট কিংবা জ্বরে মারা গেছে এ ধরনের কথা লিখতে বাধ্য করা হয়েছে। আন্দোলনে শহীদের লাশ দাফন করতে যাচ্ছে জানতে পারলে রাস্তায় পুলিশ তাদের পরিবারের ওপর হামলা ও আক্রমণ করেছে।

তিনি আরও বলেন, আদালত আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন যে, শহীদদের সুরতহাল প্রতিবেদন বা পোস্টমর্টেম রিপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য এবং কেন সেগুলো নেই। আমরা আদালতকে জানিয়েছি যে, সেই মুহূর্তে মানবতাবিরোধী অপরাধের মাত্রা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, দ্রুত শহীদদের লাশ দাফন করতে বাধ্য করা হয়েছে। তাই এ কারণে তাদের কোনো পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেয়া হয়নি। ঘটনাটি কোনো স্বাভাবিক বিষয় নয় বরং তা মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি জাজ্বল্যমান প্রমাণ। এটিই প্রমাণ করে কী ধরনের নিষ্ঠুরতার সঙ্গে জুলাই-আগস্টে হত্যাকাণ্ডগুলো চালানো হয়েছিল।

এদিকে জুলাই আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর চানখাঁরপুল ও রামপুরা এলাকায় সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত ৩ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য আগামী ২২শে এপ্রিল দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ ছাড়াও অপর একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে রাজধানীর বাড্ডা রামপুরা এলাকার তৎকালীন এসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকারকে আগামী ২৭শে ফেব্রুয়ারি, ২রা মার্চে আরশাদ হোসেনকে এবং ৩রা মার্চে ইমাজ হোসেন প্রামাণিককে জিজ্ঞাসাবাদ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

রোববার প্রসিকিউশনের করা একটি আবেদন মঞ্জুর করে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম, বিএম সুলতান মাহমুদ, শহিদুল ইসলাম সরদার এবং গাজী এমএইচ তামিম।

শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন অফিসের সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম বলেন, রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় মামলার আসামি আরশাদ হোসেন ও ইমাজ হোসেন গণহত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। বিশেষত, আরশাদ হোসেন অত্যন্ত উদ্ধত একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী এক শিক্ষার্থীর মুখ চেপে ধরেছিলেন তিনি। কে তাদের এ ধরনের অপরাধ করতে উদ্বুদ্ধ করেছে, নির্দেশ দিয়েছে, সেটা জানতে তাদেরকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। 

একইসঙ্গে, রামপুরায় জীবন বাঁচাতে চারতলার কার্নিশে ঝুলে থাকা যুবক আমির হোসেনকে ২ জন পুলিশ মোট বারো রাউন্ড গুলি করে হত্যা করার চেষ্টা করে। সে অপরাধে অভিযুক্ত সাবেক এস আই চঞ্চল চন্দ্র সরকারকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আদালত নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, তদন্ত সংস্থার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিছু যাচাই-বাছাই ও ফরেনসিক প্রক্রিয়া বাকি আছে। জিজ্ঞাসাবাদের পর প্রাপ্ত তথ্য পেলে সেগুলোকেও যাচাই-বাছাই ও তদন্ত করা হবে। আশা করছি- নির্ধারিত সময়ের আগেই আমরা প্রতিবেদনগুলো আদালতের কাছে দাখিল করতে সক্ষম হবো।