
আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির নবম আসরে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান-ভারত মহারণ আজ। টুর্নামেন্টের ‘এ’ গ্রুপের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে দু’দল। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টায়। পাকিস্তান সফরে নিজ সরকারের অনুমতি না থাকায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সবগুলো ম্যাচ দুবাইয়ে খেলছে ভারতীয় ক্রিকেট দল। ধারণা করা হচ্ছে পাকিস্তান-ভারত ম্যাচে দুবাই স্টেডিয়ামে ২৫ হাজার দর্শক সমাগম হবে। পাশাপাশি কোটি ক্রিকেটপ্রেমী দর্শক টেলিভিশনে দেদখে উপভোগ করবেন হাইভোল্টটেজ এই ম্যাচটি। টুর্নামেন্টে দু’দলের এটি দ্বিতীয় ম্যাচ। প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হার দিয়ে এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরু করে স্বাগতিক পাকিস্তান। টুর্নামেন্টে ভালোভাবে টিকে থাকতে হলে ভারতের বিপক্ষে জিততেই হবে তাদেরকে। অন্যদিকে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে দারুণ জয়ের স্বাদ পায় ভারত। জয়ের ধারা অব্যাহত রেখে সেমিফাইনালের পথে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়াই এখন মূল লক্ষ্য টিম ইন্ডিয়ার। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে শুধুমাত্র আইসিসির ইভেন্টেই মুখোমুখি হয় পাকিস্তান ও ভারত। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কোনো দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলেনি এ দু’দল। ২০০৮ সালে এশিয়া কাপের জন্য সবশেষ পাকিস্তান সফর করেছিল ভারতীয় ক্রিকেট দল। এরপর ১৭ বছর ধরে পাকিস্তানের মাটিতে পা রাখেননি রোহিত শর্মারা। তাই আইসিসি ইভেন্টে পাকিস্তান-ভারত ম্যাচ নিয়ে সারাবিশ্বের কোটি কোটি ক্রিকেট ভক্তদের আগ্রহ, উন্মদনা থাকে আকাশ ছোঁয়া। বিক্রি শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যে পাকিস্তান-ভারত ম্যাচের সব টিকিটি শেষ হয়ে যায়। এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির চলমান আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৬০ রানে হেরে যাওয়ায় চাপের মধ্যে থেকেই ভারতের বিপক্ষে খেলতে নামবে স্বাগতিকরা। আট জাতির টুর্নামেন্টে সেমিফাইনালের পথে টিকে থাকতে হলে ফেভারিট ভারতকে হারাতেই হবে পাকিস্তানের। পাকিস্তানকে হারানোর পাশাপাশি রান রেট ভালো থাকায় ‘এ’ গ্রুপে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে অবস্থান করছে নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশকে ৬ উইকেটে হারিয়ে আসর শুরু করায় নিউজিল্যান্ডের সমান ২ পয়েন্ট আছে ভারতেরও। কিন্তু রান রেটে পিছিয়ে তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে টিম ইন্ডিয়া। একটি করে হারে কোনো পয়েন্ট না পাওয়া বাংলাদেশ আছে তৃতীয় স্থানে এবং পাকিস্তানের অবস্থান সবার শেষে। গ্রুপের শীর্ষ দুই দল সেমিফাইনালে খেলবে।
টুর্নামেন্টের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ম্যাচে মুখোমুখি হওয়ার আগে ভারতের বিপক্ষে জয় ছাড়া অন্য কিছুই ভাবছে না পাকিস্তান। ম্যাচের আগে পাকিস্তানি ব্যাটার সালমান আগা বলেন, ‘আমাদের সামনে এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ। টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে হলে জয় ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। ভারত শক্তিশালী দল। জিততে হলে তাদের চেয়ে ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে আমাদের। তবে জয়ের লক্ষ্য নিয়েই আমরা মাঠে নামবো।’ তিনি যোগ করেন,‘বিশ্বের সেরা দলগুলোর বিপক্ষে জিততে চাইলে এবং বিশ্বের সেরা দলগুলোর মধ্যে একটি হতে চাইলে আমাদেরকে ধারাবাহিকতা আনতে হবে। এক ম্যাচে ভালো, অন্য ম্যাচে খারাপ খেললে চলবেনা আমাদের।’
গত সপ্তাহে ঘরের মাঠে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে রেকর্ড ৩৫৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ম্যাচ জিতেছিল পাকিস্তান। কিন্তু টুর্নামেন্টের ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৪২ রানে অলআউট হয় তারা। ভারত ম্যাচের আগে পাকিস্তান শিবিরে বড় ধাক্কা বাঁ-হাতি ব্যাটার ফখর জামানকে হারানো। ইনজুরির কারণে পুরো টুর্নামেন্ট থেকেই ছিটকে গেছেন ফখর। ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ফখরের ১১৪ রানের ইনিংসের সুবাদেই ভারতকে বড় ব্যবধানে (১৮০ রানে) হারিয়েছিল পাকিস্তান। ফখরের বদলি হিসেবে দলে ডাক পেয়েছেন আরেক বাঁ-হাতি ব্যাটার ইমাম-উল-হক। ওয়ানডে ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে ভারত সবশেষ হেরেছিল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেই। এরপর ছয় ম্যাচের মধ্যে পাঁচটিতেই জিতেছেন রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলিরা। একটি ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়। ২০২৩ সালে আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপে আহমেদাবাদে সবশেষ দেখা হয়েছিল পাকিস্তান-ভারতের। ঐ ম্যাচে স্বাগতিক ভারত ৭ উইকেটে জয় পেয়েছিল। ১৯৯৬ সালে ভারত ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথভাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ আয়োজনের পর এই প্রথম আইসিসির কোনো ইভেন্টে স্বাগতিক হবার সুযোগ পেয়েছে পাকিস্তান। দীর্ঘ ২৯ বছর পর আইসিসির ইভেন্ট আয়োজনকে স্মরণীয় করে রাখতে আজ ভারতকে হারাতেই হবে পাকিস্তানের। আর ম্যাচ হেরে গেলে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায়ের শঙ্কায় পড়ে যাবে স্বাগতিকরা।
অন্যদিকে ভারতের ভাবনায়ও জয় ছাড়া অন্য কিছু নেই। পাকিস্তানকে হারিয়ে আগেভাগেই সেমির পথ পরিস্কার করতে চায় তারা। দুবাইয়ে নিজেদের প্রথম ম্যাচে পেসার মোহাম্মদ সামি দুর্দান্ত বোলিং এবং ওপেনার শুভমান গিলের দারুণ সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ২১ বল হাতে রেখে ২২৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ম্যাচ জিতে ভারত। বল হাতে পেসার মোহাম্মদ সামি ৫৩ রানে ৫ উইকেট শিকারের পর ব্যাট হাতে অপরাজিত ১০১ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলেন গিল। ওয়ানডেতে টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করে দারুণ ছন্দে আছেন তিনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতলেই সেমিফাইনালের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাবে ভারত। তাই তো এ ম্যাচ নিয়ে সামি বলেন,‘পাকিস্তান ম্যাচ আমাদের জন্য বড় পরীক্ষা। এ ম্যাচে কোনো কিছুই সহজে হবে না। দলের সবাইকে সেরা ক্রিকেট খেলতে হবে এবং পাকিস্তানকে চাপে রাখতে হবে। যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করে এ ম্যাচে জয়ের ব্যাপারে আমরা আত্মবিশ্বাসী।’ তিনি আরও বলেন,‘ম্যাচ জয়ের পাশাপাশি ভালো খেললে সেটি ধরে রাখা উচিত। আমার মনে হয় না, আইসিসি টুর্নামেন্ট বা কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করার দরকার আছে। ধারাবাহিকতায় থাকতে পারলে সাফল্য আসবেই।’
ওয়ানডে ম্যাচে জয়ের দিক দিয়ে পাকিস্তানের চেয়ে পিছিয়ে আছে ভারত। এর আগে ওয়াডেতে ১৩৫ বার মুখোমুখি হয়েছে দু’দল। এরমধ্যে পাকিস্তানের জয় ৭৩টি আর ভারত জিতেছে ৫৭ ম্যাচ। ৫ টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। তবে শেষ ৫ দেখায় কোনো জয় নেই পাকিস্তানের। ৫ ম্যাচের ৪টিতে হেরেছে তারা। আর একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। যে চার ম্যাচে পাকিস্তান হেরেছে, তার সবগুলোই বড় ব্যবধানে। ভারত জিতেছে ৯ উইকেট, ৮৯ রান, ২২৮ রান ও ৭ উইকেটে। দুবাইয়ে সবশেষ দুই দেখায় ২০১৮ সালের এশিয়া কাপে ভারতের জয়ের ব্যবধান ৮ ও ৯ উইকেট। পাকিস্তান-ভারত ম্যাচে অবশ্য পরিসংখ্যান, অতীত এসব খাটে না। মাঠের খেলায় যারা জ্বলে উঠবে, দিনটি তাদেরই। দু’দলের খেলোয়াড়রাও তা জানে। কারণ, এখানে মিশে আছে ঐতিহ্য আর অহংবোধ, খেলা ছাপিয়ে যার মূল্য অনেক।