
ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে গণহত্যা করে শেখ হাসিনা দিল্লি পারিয়েছেন। দলটির ওবায়দুল কবির পলিয়েছে। গণমাধ্যশে খবর বের হয়েছে ভারতের কোলকাতায় আওয়ামী লীগের কিছু নেতা সংগঠন গোছানোর লক্ষে সংগঠিত হয়েছে। বাংলাদেমে ১৮ ফেব্রুয়ারি হরতাল দিলেও নীরবে পালিত হয়েছে দিবসটি। দলের নেতাকর্মীদের বিপদে ফেলে হাসিনা বোন রেহানাকে নিয়ে পালানোয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা হাসিনার ওপর বিক্ষুব্ধ। দলটির গুলিস্তানের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগের শক্তি এখন দিল্লিতে। আর্ন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি বাংলার এখ খবরে বলা হয়েছে আওয়ামী লীগের কিছু নেতা এখনো দিল্লিই আওয়ামী লীগের জন্য কিছু একটা করবে।
বিবিসির খবরে বলা হয়, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল বা নিষিদ্ধ করার দাবি যখন জোরালো হচ্ছে, সেই সময় সারা দেশে প্রবল চাপের মুখে থাকা দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীদের অনেকে ভারত কী ভূমিকা নিচ্ছে সেই অপেক্ষায় আছেন। অনেকের বিশ্বাস এবং প্রত্যাশা, ভারত কিছু একটা ভূমিকা রাখবে যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়াবে এবং পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরকালে সেখানে তাকে স্বাগত জানিয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের প্ল্যাকার্ড বহন করতে দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের আলোচনা-বক্তব্য-মন্তব্যে ভারতের ভূমিকা নিয়ে একটা প্রত্যাশা লক্ষ্য করা যায়।
আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। দলটির বহু নেতা পালিয়ে বা তাদের ভাষায় ‹আত্মগোপন করে› ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অবস্থান করছেন। দেশে ও দেশের বাইরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের কর্মী-সমর্থকরা প্রত্যাশা করছেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সঙ্গে ভারত যে ভূমিকা নিয়েছে এরপর তারা একটি চাপ সৃষ্টি করতে পারে। নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একাধিক রাজনৈতিক কর্মী বিবিসি বাংলাকে তাদের ধারণার কথা জানান। তারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা, বিশেষ করে সনাতন বা হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর-মন্দিরে যেসব হামলা হয়েছে সেটি ভারত ভালো চোখে দেখছে না এবং ভারত তাদের স্বার্থেই এ পরিস্থিতিতে কিছু একটা উদ্যোগ নেবে বলে ‹আভাস› পেয়েছেন।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের বোঝাপড়ার সারমর্ম হলো, ভারতের একটা ভূমিকা থাকবে। দেশে অবস্থানরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মধ্যমসারির একজন নেতা মনে করেন, ভারত এরই মধ্যে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার কথায়–– ভারতের স্বার্থ এখানে জড়িত। ভারত অবশ্যই কিছু একটা করবে। আমার তো মনে হয় ভারত ইতিমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে। তারা কাজ শুরু করেছে। এক্ষেত্রে ভারত-আমেরিকা একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়ে এগোবে মনে হচ্ছে। হতে পারে বাংলাদেশের ব্যাপারে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ বাড়ানো হবে। এছাড়া বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহায়তার ক্ষেত্রেও ভারত ভূমিকা রাখতে পারে।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বক্তব্য-মন্তব্যে এবং রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের মতেও আওয়ামী লীগের ভারত নির্ভরতার বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাশেদা রওনক খান বলেন, রাজনীতিতে ফেরার ক্ষেত্রে ভারতের সাহায্যের বিষয়টি তার ভাষায় ‹আওয়ামী লীগ পুরোদমে বিশ্বাস করে থাকে। একদম যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা বিভিন্ন টক শো বা আলোচনায় আমরা দেখতে পাই যে তারা আশা করছে ভারত আবার তাদের সহায়ক শক্তি হিসেবে সাহায্য করবে ফিরে আসার ক্ষেত্রে। এটা তো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বক্তব্যে খুব স্পষ্ট।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, বাংলাদেশে রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর সঙ্গে ভারত নির্ভরতার কোনো সম্পর্ক নেই।
দলটির য্গ্মু সাধারণ সম্পাদক আ.ফ.ম. বাহাউদ্দিন নাছিম অবশ্য এটি স্বীকার করেন যে বৃহৎ গণতান্ত্রিক এবং প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারত কী অবস্থান নেবে সেটার গরুত্ব রয়েছে। তিনি বরেন, গণতান্ত্রিক চেতনায় বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে অবশ্যই ভারত এখানে ইতিবাচক এবং গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি এবং এই বিশ্বাসের সাথে বাংলাদেশের জনগণের যেমন শ্রদ্ধা আছে, ভারতের ১৪০ কোটি জনগণের সমৃদ্ধ চিন্তা আছে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
৫ অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানের আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশিদের জন্য পর্যটন ভিসা বন্ধ রয়েছে। মেডিকেল ভিসাও ছয় মাসে খুব নগণ্য সংখ্যক দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আলোচনার কথাও জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
ভারতের ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রফেসর শ্রীরাধা দত্ত বাংলাদেশ নিয়ে গবেষণা করেন। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের এই বিশ্লেষক বলেন, ভারত চায় একটি নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে।
ভারতের ভূমিকা নিয়ে যে প্রত্যাশা আওয়ামী লীগের- সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মাইনরিটি ইস্যু নিয়ে নিশ্চই অনেক আলোচনা হয়েছিল। তো সেইজন্য হয়তো একটা ধারণা কোথাও হয়েছিল যে বাংলাদেশের সাথে ইন্ডিয়ার যে ঘনিষ্ঠতা সেইখানে হঠাৎ একটা ব্রেক হয়েছে। আমার মনে হয় না কোনো সার্বভৌম দেশ কোনোভাবে যতই সে পারস্পারিকভাবে ঘনিষ্ঠ হোক অন্য কাউকে আউটসোর্স করে দেবে। যেটা একটা ধারণার কথা উঠেছিল মাঝখানে। আমরা আশা করছি ইলেকশন হবে, জিনিসটা আবার স্থিতিশীল হবে এবং নরম্যালসি চলে আসবে। তবে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে নিয়েই একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হোক সেটা হয়তো দিল্লির প্রত্যাশা থাকবে। আমার মনে হয় না সেরকমভাবে ইন্ডিয়া পার্টিকুলারলি কখনও আওয়ামী লীগের হয়ে কথা বলবে বা বলতে চাইবে। তবে জাতি হিসেবে আমরা দেখতে চাইবো প্রতিবেশী দেশে সবসময় অবাধ, সুষ্ঠু এবং বহুদলীয় নির্বাচন হোক। সেই হিসেবে চাইবো যে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগও নিশ্চয়ই পার্টিসিপেট করুক নির্বাচনে।
এদিকে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে রাজনৈতিক বাস্তবতা হলো সক্রিয় সবগুলো দল আওয়ামী লীগ বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে ঐক্যবদ্ধ। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা এবং নির্বাচন করার সুযোগ না দেয়ারও জোরালো দাবি রয়েছে। একই সঙ্গে ভারত বিরোধী অবস্থানও তীব্র হয়েছে।