Image description

ঝিনাইদহের শৈলকূপায় প্রতিপক্ষ নিষিদ্ধ ঘোষিত জাসদ গণবাহিনীর হাতে দুই সঙ্গীসহ নিহত পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির সামরিক কমান্ডার হানিফ ছিলেন মৃত্যুদণ্ডের আসামি। শেখ হাসিনার সময় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিশেষ ক্ষমায় মুক্তি পেয়ে আবার সন্ত্রাসে ফিরে যান। একই সঙ্গে হরিণাকুন্ডু উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের সহ-সভাপতি নিযুক্ত হন এই এই দুডজন হত্যা মামলার আসামি।

জানা যায়, কারাগার থেকে এলাকায় ফিরে আবার তার অন্ধকার জগতের সঙ্গীদের সাথে চক্র গড়ে তোলেন হানিফ। এলাকায় প্রভাব বিস্তার এবং কাইতপাড়া বাওড় দখলে নেন। এসব দখলদারি নিয়েও তার সঙ্গে অন্য চরমপন্থী গ্রুপের দ্বন্দ্ব ছিল।

শুক্রবার রাত ১১টায় শৈলকুপা ত্রীবেনী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর শ্মশান ঘাটে প্রতিপক্ষের গুলিতে দুই সঙ্গীসহ খুন হন হরিণাকুন্ডু উপজেলার আহাদনগর গ্রামের রাহাজ উদ্দীনের ছেলে অসংখ্য হত্যা মামলার আসামি হানেফ আলী (৫২)। অন্য দুজন হলেন তার শ্যালক শ্রীরামপুর গ্রামের উম্মাদ আলীর ছেলে লিটন (৩৫) ও কুষ্টিয়া ইবি থানার পিয়ারপুর গ্রামের আরজাদ আলীর ছেলে রাইসুল ইসলাম (৪০)।

একই স্থানে ২০০৩ সালের ৫ ডিসেম্বর পাঁচজনকে হত্যা করা হয়। ওই হত্যাকাণ্ডের সাথেও জাসদ গণবাহিনী জড়িত ছিল বলে পুলিশ তখন জানিয়েছিল।

শুক্রবারের ঘটনার বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, রাত নয়টার দিকে তিন-চারটি গুলির শব্দ শুনতে পায় এলাকাবাসী। এরপর ভয়ে আর কেউ ঘর থেকে বের হয়নি। পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনটি মরদেহ ও দুটি মোটরসাইকেল পড়ে থাকতে দেখে। তিনজনকেই মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়।

জাসদ গণবাহিনীর শীর্ষ নেতা কালুর নেতৃত্বে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ ও স্থানীয়রা। কালুর বাড়ি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পশ্চিম আব্দালপুর গ্রামে। জাসদ গণবাহিনীর কথিত নেতা কালু একটি চিরকুট লিখে এই তিন হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছেন। তবে আদৌ সেটা সত্য কি না পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।

ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া জানান, খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে শৈলকুপা উপজেলার ত্রিবেনী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর শ্মশানঘাট এলাকার একটি ক্যানালের পাশ থেকে নিহতদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনজনের মাথায় গুলির চিহ্ন রয়েছে। পাশে দুটি মোটরসাইকেল ও নিহতদের ব্যবহৃত হেলমেট পড়ে ছিল।

হানিফ প্রায় দুই ডজন হত্যা মামলাসহ বহু মামলার আসামি। হরিণাকুন্ডুর কুলবাড়িয়া গ্রামের আলফাজ উদ্দিন হত্যা মামলায় আদালত তার ফাঁসির আদেশ দেন। উচ্চ আদালতে ফাঁসির রায় বহাল থাকলেও হাসিনা সরকারের সময় রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের বিশেষ ক্ষমায় মুক্তি পান হানিফ।

কারাগার থেকে এলাকায় ফিরে হানিফ আবার তার অন্ধকার জগতের সঙ্গীদের সাথে চক্র গড়ে তোলেন। এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতে থাকেন এবং কাইতপাড়া বাওড় দখলে নেন। এসব দখলদারি নিয়েও চরমপন্থী গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল।

এ ছাড়া হানিফ কারগার থেকে বেরিয়ে হরিণাকুন্ডু উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের সহ-সভাপতি নিযুক্ত হন। আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে এলাকায় প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তার করেন। ৫ আগস্টের পর বিএনপির সাথে সখ্য গড়ে তোলার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু সেটি আর হয়ে ওঠেনি।