
অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন বলেছেন, জুলাই বিপ্লবের পর দেশের জনগণের মধ্যে একটি বৈষম্যহীন, দারিদ্র্যমুক্ত ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের যে স্বপ্ন তৈরি হয়েছে, তা বাস্তবায়নে যাকাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশে বর্তমানে এক লাখ কোটি টাকার যাকাত হয়। যদি এ টাকার যাকাত সঠিকভাবে ব্যবহৃত হতো— তাহলে বাংলাদেশে কেউ অভুক্ত থাকতো না।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্ট আয়োজিত দুইদিন ব্যাপী ১৩তম যাকাত ফেয়ারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে কিন্তু আর্থিক বৈষম্য এখনও প্রকট। আমার যে প্রতিষ্ঠান আছে সেটি খুব ভালো চলছে, এর কারণ আমরা ঠিকভাবে যাকাত দিচ্ছি। যাকাতে বরকতের মূল্য অপরিসীম। যাকাতের পাশাপাশি টেক্স নিশ্চিত করতে না পারলে সামাজিক বৈষম্য দূর করা যাবেনা। আসুন সবাই মিলে যাকাত দেই এবং আমাদের সম্পদের বণ্টনের ইসলামিক দায়টা স্বীকার করি।
শেখ বশির উদ্দিন বলেন, ‘ধনীদের দ্বারা দেশের অর্থনৈতিক পলিসি গত ১৫ বছরে এমনভাবে তৈরি হয়েছে যে এই অবস্থা যদি চালু থাকে এবং ধনীরা দেশের আমদানি শুল্ক রফতানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা শুরু করলে সম্পদের সুষম বণ্টন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আমাদের সিস্টেম পলিসি, রাজস্ব বৃদ্ধি, মনিটরিং পলিসি সঠিকভাবে ডিস্ট্রিবিউশন মাথায় না রেখে সংস্কার করতে যাই তাহলে এ আন্দোলন মলিন হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘ইসলামিক সোশ্যাল ফাইন্যান্সের মাধ্যমে আমরা একটি বৈষম্যহীন ও মানবিক মর্যাদাপূর্ণ সমাজ গড়ে তুলতে পারি যেখানে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল জনগোষ্ঠী ধাপে ধাপে স্বাবলম্বী হয়ে উঠে, যা টেকসই উন্নয়নের একটি সমন্বিত মডেল ও নতুন বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসাইন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘মানুষের চিন্তা ও হৃদয়ে উদ্ভূত করতে হবে। মানুষের ভেতরে আগ্রহ তৈরি করতে না পারলে কোনো কিছু নিয়ে কাজ করা যায় না। আমাদের নীতি জগৎটাকে প্রভাবিত করতে হবে। সাধারণ মানুষ কেন্দ্রিক সুনির্দিষ্ট চিন্তা ও কাজ আরও বাড়াতে হবে। জ্ঞানের জগৎটাকে আমরা প্রভাবিত করতে না পারলে বিশ্ব ব্যাংক ও আই এম অফ এর প্রেস ক্রিপশনের ওপর আমাদের নির্ভর করতে হবে। তরুণদের আহবান জানাবো নৈতিকতা সবসময় আপনারা ধরে রাখার চেষ্টা করুন। অদক্ষ বা অলস তরুণ আমাদের দরকার নাই। আইটি, কারিগরিসহ অন্যান্য দক্ষতার পাশাপাশি চিন্তায়ও দক্ষ হতে হবে।’
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাজ্যের ম্যানচেষ্টার ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির এসাসিয়েট প্রফেসর ড. ইমরানুল হক। এ সময় গেষ্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ল্ড যাকাত অ্যান্ড ওয়াকফ ফোরামের সেক্রেটারি জেনারেল দাতুক প্রফেসর গাজালী মেহাম্মদ নূর, সিজেডএম উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি এবং সাবেক মন্ত্রী লে. জে. (অব.) এম নুরুদ্দীন খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- এনবিআর এর সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক, সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্টের শরিয়াহ সুপারভাইজারী বোর্ডের সদস্য প্রফেসর মোখতার আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য দেন সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া।