Image description
 

গেল সোমবার বিশিষ্ট অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট , ব্লগার, লেখক পিনাকী ভট্টাচার্য ফ্রান্স ২৪ এর শোতে বাংলাদেশের বিপ্লব নিয়ে কথা বলেছেন।যেখানে চ্যানেলটি পিনাকী ভট্টাচার্যকে বর্তমান বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের একজন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে উল্লেখ করে।

ফ্রান্স ২৪ শোর প্রতিবেদক বলেন,পিনাকী ভট্টাচার্যের ইউটিউব চ্যানেলটি ৩০ লক্ষেরও বেশি অনুসারী নিয়ে এক অবিস্মরণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। পাশাপাশি, তিনি তার নতুন বই "ফুলকমারি" এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সমাজ এবং জনগণের সংকটকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরছেন।

প্রতিবেদক পিনাকী ভট্টাচার্যের কাছে গত বছরের ছাত্রদের প্রতিবাদের পেছনের কারণ এবং এর মধ্যে যে উত্তেজনা ছিল, সে সম্পর্কে জানতে চাইলে পিনাকী সাফ জানিয়ে দেন,গত ১৬ বছর ধরে দেশে স্বৈরশাসন চলে আসছিলো, যেখানে জনগণের মতামতকে একদম অগ্রাহ্য করা হয়েছে। নির্বাচনের ব্যবস্থাও পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং রাজনীতির মাঠে এক ধরনের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ছাত্ররা যখন এই অবিচারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসে, তখন তারা শুধু নিজের জন্য নয়, বরং পুরো জাতির জন্য আওয়াজ তুলেছিল। এ ছিল গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার সংগ্রাম, যা আজও চলছে।”

 

পিনাকী আরো বলেন,“রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। সরকার ক্ষমতায় থাকতে গিয়ে সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে শত শত মানুষকে হত্যা করেছে। সেই সময় গোপন কারাগার ছিল এবং প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম একটি কারাগার রয়েছে, কিন্তু পরে জানলাম যে, সেখানে কয়েক শতাধিক গোপন কারাগার ছিল।”

প্রতিবেদক বলেন,বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি কি আজকের দিনেও একই রকম সংকটপূর্ণ কিনা  বিশেষ করে জাতিসংঘের রিপোর্টের পর।

পিনাকী জানান, জাতিসংঘের রিপোর্ট তাঁকে অবাক করেনি। বাংলাদেশে যা ঘটেছে, তা বিশ্বের সামনে এক নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এই রিপোর্টের মাধ্যমে বোঝা যায় শুধু জনগণের অধিকার নয়, তাদের জীবন রক্ষার সংগ্রামও চলছিল। কিন্তু সরকারের অবৈধ শাসন-ব্যবস্থা দেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে, এমনকি বিচার বিভাগের স্বাধীনতাও লুণ্ঠিত হয়েছে। এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া অত্যন্ত জরুরি।

পিনাকী আরো যুক্ত করে বলেন,“আমাদের দেশের পুনর্গঠন অত্যন্ত জরুরি। নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে সংবিধানে কিছু পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। তবে,পুরো জাতির জন্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে নতুন একটি রাজনৈতিক রূপ দরকার, যা আমরা "দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র" হিসেবে ধারণা করি। এক্ষেত্রে, দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন এবং তাদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত জরুরি।”

পিনাকী ভট্টাচার্যের ইউটিউব চ্যানেল এবং বই "ফুলকুমারী" নিয়েও আলোচনা হয় এই আনুষ্ঠানে।"ফুলকমারি" বইটি কীভাবে বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থা এবং বর্তমান সংকটকে দেখায় তা নিয়েও বিস্তারিত কথা বলেন পিনাকি ভট্টাচার্য।

সম্প্রতি পিনাকী ভট্টাচার্যের ফুলকুমারী বইটি দেশে বিদেশে ব্যাপক সমাদৃত হয়।যেখানে বইটি  ‘Fulkumari The Tale of a Refugee and a Rat in Pandemic Paris’ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে।বইটি ইতোমধ্যে আমাজনের হিস্টোরিক্যাল ইন্ডিয়া অ্যান্ড সাউথ এশিয়া বায়োগ্রাফি বিভাগে দুই নম্বর বেস্ট সেলার হিসেবে স্থান পেয়েছে। বইটির সম্পাদনা করেছেন ডেভিড সেলিম সেয়ার্স।

বইটিতে প্যারিসে এক বাংলাদেশি শরণার্থীর গল্প উঠে এসেছে, যিনি মহামারীকালে তার একাকিত্ব কাটিয়েছেন একটি ইঁদুরের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে। ইঁদুরটির নাম দেন তিনি ‘ফুলকুমারী’। প্রতিদিন ফুলকুমারীকে একটি করে গল্প শোনানোর মাধ্যমে তিনি তার অতীত জীবনের গল্প বুনেছেন। এই গল্পগুলোতে উঠে এসেছে বিপ্লব, দুর্ভিক্ষ, মুক্তিযুদ্ধ এবং পরিবারের স্মৃতিময় মুহূর্ত।

লেখক পিনাকী ভট্টাচার্য বইটির বর্তমান সাফল্যে বেশ উচ্ছ্বসিত। এক ফেসবুক পোস্টে তিনি জানান, বইটি (Fulkumari The Tale of a Refugee and a Rat in Pandemic Paris) হিস্ট্রক্যাল ইন্ডিয়া আর সাউথ এশিয়া বায়োগ্রাফি সেকশনে দুই নাম্বার বেস্ট সেলার। গ্লোবাল র‍্যাংক ২৯,১২৮। এ ফিগারগুলো ফলো করবো কয়েকদিন। দেখি কতোদূর এগিয়ে যাওয়া যায় গ্লোবাল র‍্যাংকে।

তিনি আরও বলেন, ইন্ডিয়ান ইংরেজি সাহিত্যের লেখকেরা এগিয়ে যায়, কারণ ওদের বিশাল ডায়াসপোরা প্রথমেই বইটা কিনে। ফলে আমাজন র‍্যাংকিংয়ে এগিয়ে যায়। এরপরে আমাজনের এলগোরিদম সাজেস্ট করতে থাকে পশ্চিমা পাঠকদের।

তবে একদিনে বইটির এই র‍্যাংকিং বেশ ভালো বলে উৎফুল্ল পিনাকী ভট্টাচার্য। তাইতো ফেসবুকে তিনি এটাও লেখেন- যদি এই বইটা ভালো করে তাহলে লেখালেখিতে পুরোপুরি তিনি মন দেবেন। লিখবেন শুধু ফিকশন।

পিনাকী এছাড়া ও অনলাইনে অ্যাক্টিভিজম এবং সাম্প্রতিক সময়ের ফ্রান্স ২৪ শোতে বাংলাদেশকে পশ্চিমা বিশ্বের কাছে তুলে ধরায় প্রচুর প্রশংসা কুড়িয়েছেন বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে।যেখানে তাঁর লাইভ চলাকালীন সময়ে সেটি ৫৩৭ কে দর্শক একসাথে সেটি দেখেছে।যেটি পশ্চিমা বিশ্বের মিডিয়ায় কোন বাংলাদেশির সাক্ষাৎকারে সবচেয়ে বেশি লাইভ পাঠক থাকার রেকর্ড।