Image description
 

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করছেন। ব্যবসায়ী ট্রাম্পের ‌‘লেনদেনভিত্তিক কূটনীতিকে’ মেনে নিয়েই কাজ করছে বাংলাদেশ। ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে মার্কিন জ্বালানি কোম্পানি জরুরিভিত্তিতে ৫০ লাখ টন পর্যন্ত এলএনজি আমদানি করার চুক্তি করেছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। গত সপ্তাহে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং টেসলা ও স্পেসএক্স-এর মালিক ইলন মাস্কের মধ্যে ইতিবাচক বৈঠক হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশে ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্টার লিংকের ব্যবসা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ উদ্ধারের এই উদ্যোগ ভবিষ্যতে ইতিবাচক হতে পারে। তাদের মতে রাজনৈতিক সম্পর্ক এগিয়ে ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক সম্পর্ককে ব্যবহার করা হলে সেটি বাংলাদেশের জন্য ভালো ফল দিতে পারে।

এ বিষয়ে সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের মূল বিবেচ্য বিষয়গুলো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশিদের বিনিয়োগ এবং মার্কিন রফতানি বৃদ্ধি করা। অন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে অবৈধভাবে অবস্থানকারীদের যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগে বাধ্য করা এবং নতুন করে কেউ যেন প্রবেশ করতে না পারে, সেটির প্রতি নজর রাখা।’

যুক্তরাষ্ট্র যে পরিমাণ আমদানি করে, তার থেকে কম রফতানি করে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই বাণিজ্য অসমতা কমিয়ে আনার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প গোটা বিশ্বের ওপর যে চাপ সৃষ্টি করছে, সেটি বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য হবে, কারণ বাংলাদেশ বেশি রফতানি করে।’

 

বাংলাদেশের বিনিয়োগ করার সক্ষমতা কম এবং সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়ানো হলে, সেটি মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে সম্পর্ক উন্নয়নে ইতিবাচক মনে হবে বলে তিনি জানান।

জ্বালানি খাত: বাংলাদেশে আগে থেকেই জ্বালানি খাতে মার্কিন বিনিয়োগ রয়েছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জ্বালানি চাহিদা রয়েছে এবং আমদানির জন্য যুক্তরাষ্ট্র একটি বড় উৎস হতে পারে।

এ বিষয়ে সাবেক আরেকজন কূটনীতিক বলেন, ‘মার্কিন কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশে জ্বালানি চাহিদা মেটানোর জন্য বড় ভূমিকা রাখছে। এ ধরনের বড় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ব্যবসা করা সম্ভব হলে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করতে পারে।’

পৃথিবীর বহুজাতিক কোম্পানিগুলো সরকারকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করতে পারে এবং মার্কিনগুলোর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকলে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক বলে তিনি জানান।

বোয়িং এবং এয়ারবাস : যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং কোম্পানি থেকে ১০টি প্লেন কিনেছে বাংলাদেশ। কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগ সরকারকে কোনও ধরনের রাজনৈতিক সুবিধা দিতে পারেনি কোম্পানিটি। অন্যদিকে ইউরোপের কোম্পানি এয়ারবাস থেকে প্লেন ক্রয় করার আগ্রহ প্রকাশ করার পরে ইউরোপের শক্তি অর্থনীতি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ঢাকা সফর করেছেন।

এ বিষয়ে একজন কূটনীতিক বলেন, ‘সবারই বাণিজ্যিক স্বার্থ আছে এবং বহিঃপ্রকাশ ঘটে বড় বড় ক্রয়ের মাধ্যমে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফর একটি কূটনৈতিক বাস্তবতা, কিন্তু এর পেছনে এয়ারবাস থেকে প্লেন ক্রয়ের একটি ভূমিকা ছিল।’

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বস্তিদায়ক সম্পর্ক ছিল না এবং সেই ঘাটতি মেটানোর জন্য বোয়িং দৃশ্যমান কোনও উদ্যোগ নিয়েছে বলে মনে হয় না বলে তিনি জানান।

বিভিন্ন জনের সঙ্গে যোগাযোগ : ডোনাল্ড ট্রাম্প বর্তমানে তার প্রশাসনে বিভিন্ন পদে কর্মকর্তাদের মনোনয়ন দিচ্ছেন। স্টেট ডিপার্টমেন্টে আন্ডার সেক্রেটারি (পলিটিক্যাল) হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন এলিসন হুকার এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি (দক্ষিণ এশিয়া) হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন পল কাপুর। তাদের সিনেট কনফারমেশন এখনও হয়নি। তবে অন্য বিভিন্ন কর্মকর্তা যারা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে ঢাকা ও ওয়াশিংটনের বিভিন্ন সূত্র জানায় যে, দুই দেশের দূতাবাস যোগাযোগ রক্ষা করার কাজ করছে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘কর্মকর্তা পর্যায়ের যোগাযোগের পাশাপাশি নীতি-নির্ধারণী পর্যায়েও আমরা যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ইলন মাস্কের বৈঠক হয়েছে এবং তাকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।’ উৎস: বাংলা ট্রিবিউন।