
জুলাই বিপ্লবে শহীদদের নিয়ে ভাবছে সরকার। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আলোচনা চলছে। কিন্তু এক নারীসহ ছয়জনের পরিচয়ই শনাক্ত হলো না এখন পর্যন্ত। তাদের লাশ ছয় মাসের অধিক সময় পড়ে আছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের লাশঘরে। পুলিশ ও মর্গ কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করেও গত ছয় মাসে লাশের স্বজনদের খুঁজে পাচ্ছেন না। এমনি তিনটি লাশ পড়েছিল সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গেও। শেষ পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তি জারির পর সেটি গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে স্বজনরা গিয়ে লাশ শনাক্ত করে নিয়ে যান। এ হাসপাতালটিতে অর্ধশতাধিক লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত এবং বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা আটজন শহীদের সম্পর্কে তথ্য জানানোর অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
এদিকে ছয় মাস ধরে হতভাগ্য সাতজনের লাশ পড়েছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে। সেখান থেকে মো. হাসান নামের একজনের লাশ ডিএনএর মাধ্যমে গত বৃহস্পতিবার শনাক্ত করা গেছে। কিন্তু বাকি ছয়জনের লাশ এখনো পড়ে আছে মর্গে। হাসান গুলিস্তানের কাপ্তান বাজারের একটি ইলেকট্রনিকসের দোকানের কর্মচারী ছিলেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গ সূত্র জানায়, ২০২৪ সালে দুই হাজার ৯৬টি লাশের ময়নাতদন্ত হয়। এর মধ্যে অজ্ঞাত পরিচয় (বেওয়ারিশ) হিসেবে ময়নাতদন্তের পর পুলিশের সহযোগিতায় আঞ্জুমান মুফিদুলকে দেওয়া হয়েছে ২৭৭টি মরদেহ। চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ময়নাতদন্ত হয় ১৬৩ জনের।
সূত্র জানায়, গত ১২ জানুয়ারি সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) মর্গে এসেছিলেন হাসানের পরিবার। ওই দিনই পায়ে তার পেঁচানো লাশটিকে হাসানের বলে দাবি করা হয়। পরে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছিল ডিএনএর নমুনা। গত বৃহস্পতিবার তা নিশ্চিত হতে পারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মুনসুর কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, ঢামেক মর্গে থাকা সাত মরদেহের মধ্যে ছয়টি মরদেহ আমাদের এলাকার। আরেকটি দেখছে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ। নিহত হাসানের মরদেহটি যাত্রাবাড়ী থানা এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। ভোলা সদর উপজেলার বাগচির গ্রামের মনির হোসেন ও মা গোলেনুর বেগমের ছেলে হাসান। যাত্রাবাড়ীর সুতি খালপাড় বালুর মাঠ এলাকায় থাকত সে।
হাসানের চাচা নুরে আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার ভাতিজা হাসানকে গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। ফেসবুকে দেখেছি, একটি ছেলের পায়ে তার পেঁচানো ছিল। মুখে হালকা দাড়ি, পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা। মনে হয়েছিল, সেই আমাদের হাসান।’ গত রবিবার ভোলা সদর উপজেলায় তার দাফন সম্পন্ন হয়।
হাসানের বাবা মনির হোসেন জানান, ইচ্ছা ছিল হাসানকে পড়াশোনা করানোর। অভাবের কারণে সপ্তম শ্রেণির পর আর পড়া হয়নি। আট বছর আগে ঢাকায় গিয়ে ইলেকট্রনিকসের দোকানে কাজ নেয়। নিজের খরচ চালিয়ে মাসে মাসে কিছু সংসারের জন্য পাঠাত। ভবিষ্যতে ইলেকট্রনিকসের দোকান দেওয়ার স্বপ্ন ছিল তাঁর। হাসানের হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানান তাঁর বাবা।
গত বছর আগস্ট মাসে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জুলাই বিপ্লবে শহীদ অর্ধশতাধিক ব্যক্তির লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। তিনটি লাশ ছাড়া অন্যদের লাশ নিয়ে যায় তাঁদের স্বজনরা। এই তিনটি লাশ আসে গত বছর ১৬ জুলাই থেকে ৬ আগস্টের মধ্যে। লাশ নিতে কেউ না আসায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই সময় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তিটি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর স্বজনরা গিয়ে লাশ শনাক্ত করে নিয়ে যায়।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. শফিউর রহমান রবিবার রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর স্বজনরা এসে লাশ শনাক্ত করে নিয়ে গেছে। আর কোনো লাশ মর্গে নেই।’
পুলিশ সদর দপ্তর আট শহীদের তথ্য চায় : বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আটজন শহীদের সম্পর্কে তথ্য জানানোর অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। গতকাল সোমবার পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর জানান, অজ্ঞাত পরিচয় আটজনকে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের উদ্যোগে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে। অজ্ঞাত পরিচয় এ শহীদদের ছবি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে সংরক্ষিত রয়েছে। তাঁদের শনাক্ত করার লক্ষ্যে কারো কাছে কোনো তথ্য থাকলে ০১৩২০০০১২২৩ মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।