
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেছেন, ‘আমরা ইসলাম, দেশ ও মানবতার পক্ষের শক্তিগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামী দিনে দেশ গড়ার কাজ করতে চাই। ইসলামের পক্ষে বৃহত্তর ঐক্যের জন্য আমাদের প্রয়াস সফল হবে ইনশাআল্লাহ।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঐতিহাসিক চরমোনাইয়ের বার্ষিক মাহফিলের দ্বিতীয় দিন দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরাম, শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে আয়োজিত ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্যে মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, যখন কোনো বাতিল শক্তি মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করেছে তখনই এ দেশের ওলামায়ে কেরাম প্রতিবাদে গর্জে উঠেছেন।
সম্মেলনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের অন্তরের ঐক্য হলে বৃহত্তর ঐক্য সম্ভব। ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠায় এ দেশের ইসলামপন্থীদের টেকসই ঐক্যে আমরা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ছাড় দিতে প্রস্তুত।’
মঞ্চে উপস্থিত সর্বস্তরের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘যা-ই হোক না কেন আমরা কেউ আলাদা হবো না।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির আল্লামা মামুনুল হক বলেন, ‘আজ বাংলাদেশের ওলামায়ে কেরামের হাতে অনেক বড় সুযোগ এসেছে। আমরা যদি এ সুযোগে ইসলামকে বিজয়ী করতে না পারি তবে আগামী দিনে এই জাতি আমাদের ক্ষমা করবে না।’
তিনি বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের জাতীয় চাহিদা হলো ইসলামপন্থীরা এগিয়ে আসুক, আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি, আলহামদুলিল্লাহ।
বাংলাদেশে ইসলামপন্থার মধ্যে ঐক্য ও সংহতির সংস্কৃতি উপস্থাপন করে মামুনুল হক বলেন, ‘আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামী নির্বাচনে একটি বাক্স দিতে চাই। ওলামায়ে দেওবন্দের ধারায় প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় দল হলো ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। তাই এখন ঐক্যের জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে।’
পীর সাহেব চরমোনাইয়ের উদারতার উদাহরণ দিয়ে মাওলানা মামুনুল হক আরো বলেন, ‘মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম সাহেব এটা করে দেখাতে পারবেন ইনশাআল্লাহ। দেওবন্দি ধারার বাইরে জামায়াতে ইসলামী, সুন্নি এবং আহলে হাদীস আন্দোলনকে সাথে নিয়ে আগামী দিনে ইসলামের পক্ষে একটি বাক্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘যারা দ্রুত নির্বাচন চায় তাদের সাথে ভারতের সেনাবাহিনীর যোগসাজশ রয়েছে। এটা করা যাবে না। আমাদের দাবি স্পষ্ট, আগে সংস্কার পরে নির্বাচন। আগে স্থানীয় নির্বাচন এবং পরে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। কারণ যারা বিশৃঙ্খলা করতে চায়, তাদের আগে চিনে নিতে চাই। জনগণ আগে বিশৃঙ্খলাকারীদের বেঁধে ফেলতে চায়।’
তিনি ওলামা সম্মেলনে আগত আলেমদের উদ্দেশে বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে ইসলামপন্থীদের বিজয়ী করতে হবে। আমরা কাউকে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কাজ করব না। বরং ইসলামের পক্ষে এক বাক্স দিতে চাই। এ কথা শুনে কেউ কেউ পাগল হয়ে গেছে। এতে আমাদের কিছু যায় আসে না। আমরা এবার ইসলামী শক্তির বলয় বৃদ্ধি করতে চাই।’
তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সর্বস্তরে মহিলা কমিটি গঠন ও সক্রিয় করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘সারা দেশে আমাদের প্রার্থী প্রস্তুত আছে। কিন্তু আগামী নির্বাচনে আমরা ইসলামী শক্তি এবং দেশপ্রেমিক শক্তি এক হয়ে কাজ করব; এ জন্য যে আসনে যে দলের পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয় তার পক্ষেই কাজ করতে হবে। ৬৫ হাজার জনপ্রতিনিধির মধ্যে আগামী দিনে কমপক্ষে ৪০ হাজার আলেম প্রতিনিধি দিতে চাই। সুতরাং আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।’
ওলামা সম্মেলনে আরো বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, নায়েবে আমির ও বগুড়া জামিল মাদরাসার শাইখুল হাদীস আল্লামা আব্দুল হক আজাদ, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, শায়খ জকারিয়া ইসলামী রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ, বুদ্ধিস্ট ফেডারেশন বাংলাদেশের সভাপতি দয়াল কুমার বড়ুয়া, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জামিয়াতুস সুন্নাহ মাদারীপুরের মুহতামীম আল্লামা নেয়ামতুল্লাহ আল ফরিদী, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন রাজি প্রমুখ।
জানা যায়, আগামীকাল শুক্রবার চরমোনাই মাহফিল ময়দানে দেশের সর্ববৃহৎ জুমার জামাত অনুষ্ঠিত হবে। পরের দিন শনিবার সকাল সাড়ে ৮ টায় হযরত পীর সাহেব চরমোনাইয়ের আখেরি বয়ানের মধ্য দিয়ে তিন দিনব্যাপী বিশাল এ মাহফিলের কার্যক্রম সমাপ্ত হবে। মাহফিলে অংশ নিতে প্রতিবছরই দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মুসল্লীদের ঢল নামে কীর্তনখোলার তীরে।