Image description

জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুন্সী সাজ্জাদ হোসেনের ৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ছাড়া তিনি নিজের স্ত্রীকে দান করেছেন প্রায় কোটি টাকার সম্পদ। দুদকের তদন্তে এ তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন এসব কথা।

দুদকের সূত্র জানিয়েছে, মুন্সী সাজ্জাদ স্বাস্থ্য খাতের বিতর্কিত ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম ওরফে মিঠুর সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। গত এক দশকের বেশি সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ক্রয়সহ ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগ রয়েছে মিঠু চক্রের বিরুদ্ধে। তদন্তে চক্রটির অনিয়মে মুন্সী সাজ্জাদের সম্পৃক্ত থাকার তথ্য পেয়েছেন দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তারা।

সাজ্জাদ হোসেনের আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে দুদক সূত্রটি জানায়, তদন্তকালে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে তাঁর নিজের ৩ কোটি ৯ হাজার ৬৫ টাকার স্থাবর সম্পদ ও ১৫ লাখ ৪৭ হাজার ৬২৭ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। এ ছাড়া তিনি স্ত্রী ফারজানা হোসেনকে ৮০ লাখ টাকার সম্পদ দান করেছেন। তবে সাজ্জাদের আয়কর নথিতে মাত্র ৮৬ লাখ ৫৩ হাজার ১৮১ টাকা আয়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। তাঁর আয়ের জানা উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ৩ কোটি ৪৭ লাখ ৩৭ হাজার ৪৭৫ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে। এটি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় অপরাধ।

মুন্সী সাজ্জাদ বিষয়ে দুদকের তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, তিনি সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মচারী হয়েও স্বাস্থ্য খাতে নিজেই ঠিকাদারি করতেন। তিনি আহাদ এন্টারপ্রাইজ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত মালিক। কিন্তু এর মালিক সেজে কাজ করেছেন তাঁর ভাই মুন্সী ফারুক হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মামুন। সূত্রটি জানায়, মিঠুর সহযোগিতায় সাজ্জাদ এই দুই ভাইয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতের ঠিকাদারি করতেন।

এ বিষয়ে দুদকের বিশেষ তদন্তের মহাপরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী বলেন, ‘গোটা স্বাস্থ্য খাতকে এ চক্রটি জিম্মি করে রেখেছিল। যখন যে সরকার দায়িত্ব নিয়েছে, তখনই কয়েকজন বিতর্কিত ঠিকাদার ও সাজ্জাদের মতো স্বাস্থ্য খাতের কিছু কর্মচারী শীর্ষ কর্মকর্তাদের জিম্মি করে ফেলতেন। প্রভাবশালী এ চক্রটির জন্য কোনো সরকারের আমলে স্বাস্থ্য খাত এগোতে পারেনি। দুদক বিষয়টি তদন্ত করছে।’

দুদক সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে দুদক মুন্সী সাজ্জাদ হোসেন এবং তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ও নির্ভরশীলদের সম্পদ বিবরণীর জন্য নোটিশ জারি করে। সাজ্জাদ ওই বছরের ২৬ নভেম্বর নোটিশ পেলেও সম্পদের বিবরণী দাখিল করেননি। একই বছরের ৫ ডিসেম্বর দুদকের কাছে সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য সময় চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু পরে আর তা দাখিল করেননি। এ অপরাধে দুদক সে সময় সাজ্জাদ ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে একটি নন-সাবমিশন মামলা করে।

দুদক সূত্রটি জানায়, মুন্সী সাজ্জাদ ও তাঁর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে আরও বেশ কয়েকটি অভিযোগ তদন্ত করছে দুদক। এসব বিষয়ে শিগগির মামলা ও অভিযোগপত্র-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে সংস্থাটি।