Image description
♦ সময়সীমা বেঁধে দিতে হাই কোর্টে রুলস সংশোধন ♦ বিধান না মানলে জবাবদিহির আওতায় ♦ হাই কোর্টের বেঞ্চ পুনর্গঠনে নীতিমালা ♦ অধস্তন আদালতের রায় বা আদেশ উন্মুক্ত এজলাসে ♦ সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে প্রকাশ করতে হবে ওয়েবসাইটে

বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের দুর্ভোগ কমাতে সুপ্রিম কোর্টের কোনো রায় বা আদেশ ঘোষণার পর সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে বিচারপতির স্বাক্ষরসহ তা প্রকাশ করতে হবে। অবসর গ্রহণের পর কোনো বিচারপতি কোনো রায় বা আদেশে স্বাক্ষর করবেন না। এই বিধান প্রধান বিচারপতির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি হাই কোর্ট বিভাগের বেঞ্চ পুনর্গঠনে প্রধান বিচারপতির একক ক্ষমতার পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা প্রয়োজন বলেও সংস্কার কমিশন মনে করে।

একইভাবে অধস্তন আদালতের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য বিচারককে আইনের নির্দেশনার আলোকে প্রতিটি মামলায় রায় ও আদেশ উন্মুক্ত এজলাসে ঘোষণা করতে বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। রায় বা আদেশের পিডিএফ কপি ঘোষণার দিন সন্ধ্যা ৬টার মধ্যেই ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে। আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমানকে প্রধান করে আট সদস্যের কমিশন গঠন করা হয়েছিল। গত ৫ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের কাছে কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে আদালত ব্যবস্থাপনা অধ্যায়ে     এসব প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ৩৫২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে ৩১টি অধ্যায়ে বিচার বিভাগ সংস্কার নিয়ে নানা সুপারিশ ও প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে। সংস্কার কমিশন বলেছে, রায় বা আদেশ স্বাক্ষর করার ক্ষেত্রে বর্তমানে কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা মানা হয় না। যার ফলে বিচারপ্রার্থী এবং তাদের আইনজীবীদের অনেক সময় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়ে বিচারকদের জন্য পালনীয় আচরণবিধিতে রায় ঘোষণার পর সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে তা স্বাক্ষর করার কথা বলা হলেও বাস্তবে তা কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয় না। এ ছাড়া মামলার আদেশ স্বাক্ষরের ক্ষেত্রেও কোনো সময়সীমা উল্লেখ নেই। এ অবস্থায় কমিশন প্রস্তাব করেছে, হাই কোর্ট রুলস সংশোধনের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট সময় রাখা প্রয়োজন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের কোনো রায় ঘোষণার পর সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে বিচারকের স্বাক্ষরসহ তা প্রকাশ করতে হবে। কোনো বিচারক অবসরে যাওয়ার আগে (প্রয়োজনে বিচারকাজ থেকে বিরত থেকে) তার দেওয়া সব আদেশ ও রায় চূড়ান্ত করবেন এবং তাতে স্বাক্ষর করবেন। অবসর গ্রহণের পর বিচারক কোনো রায় বা আদেশে স্বাক্ষর করবেন না। এই বিধান প্রধান বিচারপতির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হওয়া সমীচীন বলে মনে করে কমিশন। উল্লিখিত সময় অনুসরণ না করা হলে সংশ্লিষ্ট বিচারককে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, হাই কোর্ট বিভাগের কোনো মামলায় প্রাথমিক আদেশ ঘোষণার সর্বোচ্চ পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তা প্রকাশ করতে হবে। আদেশ ঘোষণার ক্রম অনুসারে তা প্রকাশ করতে হবে সংশ্লিষ্ট বিচারকের স্বাক্ষরসহ। আর অন্তর্বর্তী আদেশ ঘোষণার পর তা প্রকাশ করতে হবে সর্বোচ্চ ১০ কার্যদিবসের মধ্যে। হাই কোর্টের বেঞ্চ পুনর্গঠনে প্রধান বিচারপতির একক ক্ষমতার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংবিধানের ১০৭(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাই কোর্ট বিভাগের বেঞ্চ গঠন ও পুনর্গঠনের ক্ষমতা প্রধান বিচারপতির ওপর ন্যস্ত। বেঞ্চ গঠনের বিষয়ে কিছু বিধান থাকলেও মূলত প্রধান বিচারপতি এককভাবে এই ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। স্বচ্ছতা ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার স্বার্থে এ বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। অর্থাৎ কোনো কোনো বিবেচ্য বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে বেঞ্চ গঠন এবং পুনর্গঠন করা হবে, সে বিষয়ে বিচারক, আইনজীবী এবং বিচারপ্রার্থীদের একটি স্পষ্ট ধারণা থাকা আবশ্যক।

প্রতিবেদনে আদালত ব্যবস্থাপনা অধ্যায়ের অধস্তন আদালত ব্যবস্থাপনা শীর্ষক একটি পরিচ্ছেদ রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, বিচারপ্রার্থীদের মামলার ফলাফল জানার অধিকার রয়েছে। সে জন্য সিদ্ধান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিজিটাল কজলিস্টে (আদালতের কার্যতালিকা) মামলার ফলাফল উল্লেখ করার পাশাপাশি এবং তা জেলা আদালতের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। রায় বা আদেশের পিডিএফ কপি সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে (যেদিন সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে) ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে। কমিশন বলেছে, প্রতিদিন শুনানির জন্য ততগুলো মামলা রাখতে হবে, যতগুলো শুনানি করা বা সাক্ষ্য গ্রহণ করা একজন বিচারকের পক্ষে সম্ভব। আদালতের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য বিচারককে আইনের নির্দেশনার আলোকে প্রতিটি মামলায় রায় ও আদেশ উন্মুক্ত এজলাসে ঘোষণা করতে হবে। অধস্তন আদালতে মামলাজট দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রতিদিনের কর্মঘণ্টার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার প্রয়োজন।