![Image description](https://content.bdtoday.net/files/img/202502/96976cbcd87a30aead34988c3876cb2e.jpg)
ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতির কারণে ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে নিম্নআয়ের মানুষের। জীবন চালাতে তারা স্বল্পমূল্যের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ফলে সারা বছরের জন্য ওএমএস (ওপেন মার্কেট সেল) মতো কর্মসূচির বরাদ্দ ছয় মাসেই ফুরিয়ে গেছে। কর্মসূচি জুন পর্যন্ত এগিয়ে নিতে নতুন করে আরও চালের বরাদ্দ চেয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। যা অর্থ বিভাগে প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া লক্ষ্যমাত্রার বেশি চালের প্রয়োজন মেটাতে খাদ্য ভর্তুকি খাতে ব্যয় বেড়ে বাজেটে চাপ সৃষ্টি করেছে। যদিও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগের পরও এর লাগাম টানা যাচ্ছে না। ফলে টানা মূল্যস্ফীতির প্রতিঘাতে চাপের মুখে পড়েছে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ও ভর্তুকি ব্যয়। খাদ্য ভর্তুকি ২৮শ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৮০৫৯ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
ভর্তুকি কমিয়ে আনতে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ দিচ্ছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটির চাপ উপেক্ষা করেই ভর্তুকি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ বিভাগ। অন্যদিকে রাজস্ব আয়ও সেভাবে বাড়ছে না। সবমিলে বড় ধরনের চাপে আছে এমনটি মনে করছেন অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে জানান, বিগত সরকারের আমলে বেড়ে যাওয়া মূল্যস্ফীতি আমি পেয়েছি। এর নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পরও পুরোপুরি লাগাম টানা যাচ্ছে না। আমি মনে করি এতে মানুষ খুব চাপের মধ্যে পড়েছে। কারণ বাজারে পণ্য ও সেবার মূল্য বেশি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ সর্বত্র বাড়তি ব্যয়ের চাপ আছে। এগুলোই এখন অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করছে। তিনি আরও বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এখন খাদ্য ও জ্বালানি খাতে ভতুর্কি দিতে হচ্ছে।
এদিকে নিম্নআয়ের মানুষের মধ্যে ওএমএস কর্মসূচির অধীনে স্বল্পমূল্যে চাল বিতরণের জন্য চলতি অর্থবছর (২০২৪-২৫) চার লাখ মেট্রিক টন চাল এবং তিন লাখ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত টিসিবিসহ ওএমএস কর্মসূচিতে সব চাল বিতরণ শেষ হয়ে গেছে। আগামী জুন পর্যন্ত এই কর্মসূচি পরিচালনা করতে আরও তিন লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন চালের প্রয়োজন হবে। এছাড়া গম দরকার হবে ৮৮ হাজার মেট্রিক টনের। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সার্বিক এ চিত্র খাদ্য সচিব মো. মাসুদুল হাসান সম্প্রতি ‘খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির’ বৈঠকে তুলে ধরেন। সেখানে খাদ্য সচিব বলেছেন, উপজেলা পর্যন্ত ওএমএস কর্মসূচি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া টিসিবির ৫৭ লাখ কার্ডেও চাল দেওয়া হচ্ছে। ফলে চাল ও গমের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
সূত্রমতে, খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে চাল ও গমের বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়টি নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করবে অর্থ বিভাগ। এদিকে সাধারণ চালের পাশাপাশি ওএমএস কর্মসূচিতে আতপ চাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিশেষ করে যেসব অঞ্চলের জনগণ আতপ চাল পছন্দ করেন সেখানে তা দেওয়া হবে।
ওএমএস কর্মসূচিতে ভর্তুকি মূল্যে চাল বিক্রি হয়। এক কেজি চালের মূল্য ৩০ টাকা হিসাবে প্রতিজনকে ৫ কেজি করে দেওয়া হয়। একই চাল বাজারে কিনতে হলে কেজিতে ৫৫ টাকা গুনতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারকে প্রতিকেজিতে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। প্রতিকেজিতে ২০ টাকা সাশ্রয় করতে গিয়ে এই কর্মসূচিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন সাধারণ ও নিম্নআয়ের মানুষ। ফলে চালের চাহিদা এত বেশি যে, অনেকে না পেয়ে খালি হাতে ফেরত যাচ্ছেন। এর আগে দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। মাঘের শীতকে উপেক্ষা করে প্রতিদিনই দরিদ্র, অসহায় ও নিম্নবিত্ত মানুষরা ওএমএসের (ওপেন মার্কেট সেল) চাল নিতে ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন।
এদিকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে চালের বরাদ্দ বাড়ানোর সঙ্গে এ খাতে ভর্তুকির ব্যয়ও বাড়ছে। অর্থ বিভাগের হিসাবে আগামী জুন পর্যন্ত এই কর্মসূচি পরিচালনা করতে খাদ্য ভর্তুকি দাঁড়াবে ৮ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। এটি শুরুতে বরাদ্দ ছিল ৫ হাজার ২৬২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এ খাতে অতিরিক্ত ভর্তুকি ব্যয় বাড়ছে দুহাজার ৭৯৭ কোটি টাকা।
এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ভর্তুকি বাড়লে ব্যয়ে বেড়ে গিয়ে বাজেটের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। ব্যয় করতে হলে আয় বাড়াতে হবে। কিন্তু দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য পুরোপুরি সচল হচ্ছে না। যে কারণে এখন সরকারের প্রত্যাশিত রাজস্ব আহরণ হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে ভর্তুকি ব্যয় নিয়ে চাপের মুখে পড়েছে সরকার। এছাড়া অর্থের অভাবে সরকার নানাভাবে কৃচ্ছ সাধন কর্মসূচি পালন করছে। ফলে এই মুহূর্তে ভর্তুকি ব্যয় বড় ধরনের একটি চাপ সৃষ্টি করছে।
এদিকে আইএমএফ ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ ইস্যু করেছে বাংলাদেশকে। এর বিপরীতে কয়েকটি শর্তের মধ্যে একটি হচ্ছে ভর্তুকি ব্যয় কমিয়ে আনা। কিন্তু খাদ্য ভর্তুকিতে ব্যয় বাড়িয়ে সংস্থাটির শর্ত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে অর্থ বিভাগ মনে করে, খাদ্য, কৃষি ও জ্বালানি হচ্ছে সরকারের অগ্রাধিকার। এই তিন খাতে কোনো ধরনের ভর্তুকি কাটছাঁট না করার পক্ষে। কারণ আইএমএফ’র শর্ত পালন করে খাদ্য ভর্তুকি কমালে পণ্যের মূল্য বেড়ে যাবে। এতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগও বাড়বে। মূল্যস্ফীতির কশাঘাতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বেষ্টনী বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।