Image description

সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া (Sultan Mohammed Zakaria)

সরকারের তরুণ উপদেষ্টা Mahfuj Alam জনগণকে থামার আহ্বান জানিয়েছে। শান্ত হতে বলেছেন। সরকারকে কাজ করতে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আমি মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এটি অত্যন্ত জরুরি আহ্বান এবং প্রাজ্ঞ একটি অবস্থান। কেন?
 
আপনাদেরকে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, শেখ হাসিনা তার ১৫ বছরে যত অপকর্ম করেছে তার সিংহভাগ করেছে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করে। কারণ সে দেখাতে চেয়েছে যে সে “আইনের মধ্যে” কাজ করছে। যদিও এসব কাজের সবই ছিলো বেআইনী। কিন্তু এলিটরা ভেবেছে রাষ্ট্র তো “ফাংশন করছে”। বেইবারিয়ান থিওরিতে এটা ঠিক আছে, কারণ ম্যাক্স বেইবার (বাংলাদেশে অনেকে ম্যাক্স ওয়েবার বলে থাকেন) বলেছিলেন যে ফাংশনিং রাষ্ট্রে সহিংসতার মনোপলি বা একক কর্তৃত্ব থাকবে রাষ্ট্রের। এটি হয়তো রাষ্ট্রের বৈধ সহিংসতাকে নির্দেশ করে, কিন্তু রাষ্ট্র যখন অবৈধ সহিংসতা করে, যেমনটি শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলে সে করেছে, তার প্রত্যাঘাত আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি।
 
কিন্তু রাষ্ট্রের এই অবৈধ সহিংসতার বিপরীতে বিরাষ্ট্রিক সহিংসতা (যেটিকে আপনারা মব ভায়োলেন্স বলছেন) আরও বেশি সমস্যাপূর্ণ। কারণ, মব ভায়োলেন্সের অর্থ হলো রাষ্ট্র তার কর্তৃত্ব হারানো এবং এর ফলে সমাজে ও এলিট সেটেলমেন্টে বার্তা যায় যে রাষ্ট্র তার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। যে রাষ্ট্রে যে যা খুশী ভায়োলেন্স করে, সেখানে যার সবচেয়ে বেশি ক্ষমতা সে দিনশেষে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়, কারণ সমাজের মধ্য থেকেই সহিংসতা নিয়ন্ত্রণের আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়। এখন আপনি প্রশ্ন করেন, রাষ্ট্রে সহিংসতা তৈরির সবচেয়ে বেশি সক্ষমতা কার? উর্দিপরা লোকজনের। কারণ ট্যাংকের গোলার চেয়ে বড় বন্দুক আর লাঠি বেসামরিক সহিংসতাকারীদের কাছে নেই।
 
সুতরাং, রাষ্ট্রকে ফাংশন করার দাবী জোরালো করুন। এটা সত্য যে জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী রাষ্ট্রেরই একটা অংশ, যেমন প্রশাসন ও পুলিশ, কার্যকরভাবে ফাংশন করছে না বা তারা সরকারকে পরিপূর্ণ সহযোগিতা করছে না। এটি একটি অনন্য পরিস্থিতি। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সরকার চালানো কঠিন। যার ফলে, সরকারকে সমালোচনার ক্ষেত্রে আমাদের এই অনন্য পরিস্থিতিও মাথায় রাখতে হবে। বাংলাদেশের ভাগ্য ভালো যে সামরিক বাহিনী এখন পর্যন্ত সরকারের পাশে আছে, না হলে রাষ্ট্র ব্যবস্থাই ভেঙে পড়তো।
 
এই পরিস্থিতি ঠিক করার জন্য অর্থাৎ রাষ্ট্রের ভেঙে পড়া অংশকে সরব করা এবং যারা ফাংশন করছে না তাদেরকে সক্রিয় করার জন্য সরকারকে পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে এবং র‌্যাডিক্যাল কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা শুরু থেকে এই গুরুত্ব বিবেচনায়ই সরকার মহোদয়কে কিছু পরামর্শ দিয়েছি: সংবিধান স্থগিত করুন, পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে এমন লোকদের দিয়ে সরকার পুনর্গঠন করুন, তারপর রাষ্ট্রের যে অংশগুলো ফাংশন করছে না সেগুলোতে র‌্যাডিক্যাল কিছু পদক্ষেপ নিন। তৃতীয় কাজটি করতে হলে প্রথম দুটো কাজ আবশ্যক। আপনাদের সৌভাগ্য যে সামরিক বাহিনী এখনও আপনাদের পাশে আছে একাজগুলো করার জন্য। যেদিন সামরিক বাহিনী পাশে থাকবে না, আপনারা এক সপ্তাহও সরকার চালাতে পারবেন না।
 
কিন্তু সরকারের মধ্যে কিছু লোক মনে করেছে যে স্ট্যাটাস কো দিয়ে অগাস্ট-২০২৪-পরবর্তী রাষ্ট্রটি চালানো যাবে। গত ছয় মাসে তারা নিদারুণভাবে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। রাষ্ট্রটি ঠিকঠাক চলছে না। স্ট্যাটাস কো দিয়ে স্বাভাবিক রাষ্ট্র চালানো যায়, কিন্তু একটা ভেঙে পড়া রাষ্ট্র চালানো যায় না। এটা পরিষ্কার যে আমরা যারা রাষ্ট্র ও সংবিধান নিয়ে মৌলিক কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলাম আমরাই ঠিক ছিলাম। স্ট্যাটাস কো মেনে আপনারা গত ছয় মাসে সামান্য পুলিশ বাহিনীকেও সক্রিয় করতে পারেন নাই, প্রশাসন পুরোপুরি আপনাদের সহযোগিতা করছে না বরং সুযোগ পেলেই স্যাবোটাজ করছে। এই পরিস্থিতির দায় আপনাদের।
 
মাহফুজ যে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে, তার প্রথম ধাপ আমি মনে করি সরকারকে আমূল বদলে ফেলা। পুলিশ ও প্রশাসনে পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের এই বার্তা দেওয়া যে এটা নতুন রাষ্ট্র, স্ট্যাটাস কো নয়। পুলিশ ও প্রশাসনে র‌্যাডিক্যাল সংস্কার শুরু করুন। যতদিন সেনাবাহিনী, ছাত্ররা, ও রাজনৈতিক দলগুলোর বিশাল অংশ আপনাদের পাশে আছে ততদিন তারা আপনাদের কথা শুনতে বাধ্য থাকবে, না শুনলে পত্রপাঠ বিদেয় করে দিবেন। বিশ্বে আর কোন দেশ এত বড় সুযোগ পেয়েও হেলায় হারিয়েছে বা হারাচ্ছে কিনা আমি জানি না। যারা এই সুযোগ বিনষ্টের জন্য দায়ী হবে, ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না।