![Image description](https://content.bdtoday.net/files/img/202502/587fa7d604bf90084a5ab006a3dd5cd1.jpg)
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশে ভিতরে ভিতরে ফুঁসছেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। কারণ উপসচিব হওয়ার ইস্যুসহ প্রশাসনের অনেক আর্জি শোনেনি কমিশন। একই সঙ্গে কর্মকর্তাদের আপত্তির পরও শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডার নিয়ে আলাদা সার্ভিস গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। ট্রেড ক্যাডারদের কাস্টমসে মার্জ এবং ডাক ক্যাডার বাতিলের প্রস্তাব নিয়ে ক্ষুব্ধ এ ক্যাডাররাও। সব মিলে ভিতরে ভিতরে বিভিন্œ সেক্টরের কর্মকর্তারা ফুঁসছেন। নিজেদের মধ্যে তাঁরা সুপারিশ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন।
চারটি প্রদেশ করা, মন্ত্রণালয় কমানো, ডিসি-ইউএনওদের পদবি পরিবর্তন, ক্যাডার সংখ্যা কমিয়ে ১৩টি প্রধান সার্ভিস করাসহ একগুচ্ছ সুপারিশ দিয়েছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। বুধবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী। প্রতিবেদন জনসমুখে আসার পর এটি নিয়ে নানামুখী আলোচনা শুরু হয়েছে। বর্তমান কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সাবেকরাও সমালোচনা করছেন এমন সুপারিশের। লেখক, গবেষক, জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেছেন, ‘এ সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে সিভিল সার্ভিস এমন খাদে পড়বে যে, এটাকে আর টেনে তোলা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। সরকার বাস্তবতা উপলব্ধি করবে, এটা আশা করি। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, জাপান, ভুটান, দক্ষিণ কোরিয়া তাদের সিভিল সার্ভিসের কাঠামো সংশোধন করে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে গেছে, আর আমরা করেছি উল্টোটা।’ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা বলছেন, এখন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বেশি থাকার পরেও অনেক কাজে নানা রকম সমস্যা হচ্ছে। সেটি কমালে কাজের গতি আরও কমবে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ তরুণ কর্মকর্তারা। ৩০-৩৯ ব্যাচের কর্মকর্তারা হতাশা ব্যক্ত করেছেন, উপসচিব পদে প্রশাসনের ৫০ এবং অন্যদের থেকে ৫০ ভাগ কোটা রাখার জন্য। সরকারি কর্মকর্তাদের শূন্যপদের বাইরে কাউকে পদোন্নতি না দেওয়ার সুপারিশ করেছে; এতে সামনে অনেকের পদোন্নতি আটকে যাবে। অনেকেই খুব বেশি ওপরে যেতে পারবেন না, এর আগেই অবসরে যেতে হতে পারে বলে হতাশা ব্যক্ত করেন। তবে ডিসি-ইউএনও পদবি পরিবর্তন হওয়া নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তাঁরা। উপজেলা পর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট স্থাপনও ইতিবাচক প্রস্তাব হিসেবে দেখছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সরকারি কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলক অবসরের প্রথা বাতিল এবং অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি (ওএসডি) না করার সুপারিশও ইতিবাচক মনে করছেন প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তারা। এতে ওএসডিদের আরও দক্ষ করে গড়ে তোলা যাবে। সরকারি কর্মচারীরা ১৫ বছর চাকরি করার পর স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়লে তাঁদের পেনশনসহ সব ধরনের অবসরসুবিধা দেওয়ারও সুপারিশ প্রশংসা করে অনেকে বলেন, একটা সময় চাকরি ছেড়ে অন্য কিছু করা যাবে। যতদিন পরিবেশ ভালো থাকবে, নিজেকে ফিট মনে করে কাজটি করতে পারব। নয়তো স্বেচ্ছায় চলে যাব। অবসরে যাওয়ার সময়টা কমানো ইতিবাচক। উপসচিব থেকে ওপরের স্তরের কর্মকর্তাদের জন্য সুদমুক্ত ঋণে গাড়ি কেনার সুবিধা বাতিলের সুপারিশ নিয়ে কর্মকর্তাদের মন খারাপ। এদিকে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের আপত্তির পরও শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডার নিয়ে আলাদা সার্ভিস গঠনের সুপারিশ নিয়েও অস্বস্তি রয়েছে কর্মকর্তাদের মধ্যে। ট্রেড ক্যাডার কর্মকর্তাদের বিলুপ্ত করে শুল্ক ও আবগারির সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্তে ট্রেড ক্যাডার কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ। তাঁরা একটি অনলাইন মিটিং করেছেন। কেন শুল্কের সঙ্গে মার্জ করার সিদ্ধান্ত দিল, তা নিয়ে তাঁরা হতাশা ব্যক্ত করেন। তবে খাদ্য ও সমবায় ক্যাডারদের প্রশাসনে মার্জ করার কারণে তাঁরা বেশ খুশি। ডাক ক্যাডার বিলুপ্ত করার সুপারিশ অনেকেই ‘অবাস্তব’ আখ্যা দিয়েছেন। একাধিক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ১৯৫ পদের বিপরীতে ১০২ জন কর্মরত আছেন এ ক্যাডারে। যে সরকারই থাকুক একটা বড় কর্মযজ্ঞ থাকে এ বিভাগে। অথচ এ সুপারিশ দেখে মনে হয়েছে তাঁদের কেউ এ বিষয়ে একেবারেই জানেন না। এ রকম নেতিবাচক আলোচনার পাশাপাশি অন্য কিছু সুপারিশ নিয়ে ইতিবাচক কথাবার্তাও রয়েছে কর্মকর্তাদের বিভিন্ন মহলে।