![Image description](https://content.bdtoday.net/files/img/202502/386d8ec57ba74a683074e6da423a339c.png)
ব্যারিস্টার নাজির আহমদ
তিনটি বিভাগ নিয়ে অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মতো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র গঠিত। আর সেগুলো হলো: আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। দু:খজনক ও আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের জন্য স্ব স্ব সচিবালয় থাকলেও বিচার বিভাগের জন্য স্বতন্ত্র সচিবালয় নেই। বিদ্যমান পুরো সচিবালয় তো শাসন বিভাগ তথা নির্বাহী বিভাগের পারপাস সার্ভ করে। অপরদিকে আইন বিভাগের জন্য স্বতন্ত্র সচিবালয় থাকবে বলে খোদ সংবিধান স্পষ্ট করে বলেছে। সংবিধানের ৭৯(১) অনুচ্ছেদ বলেছে “সংসদের নিজস্ব সচিবালয় থাকিবে”। কিন্তু বিচার বিভাগের জন্য কোন স্বতন্ত্র সচিবালয় নেই। অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি বা করতে দেয়নি।
বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ করা সাংবিধানিক বাধ্যবাদকতা। এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ও আছে। নির্বাহী থেকে বিচার বিভাগ পৃথককরণ সংক্রান্ত ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আংশিক বাস্তবায়ন করা হয় ২০০৭ সালে। ওই বছর এক অধ্যাদেশ জারি করে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক করা হয়। কিন্তু বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ অদ্যাবধি নেওয়া হয়নি। সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদ স্পস্ট করে বলেছে “রাষ্ট্রের নির্বাহী অঙ্গসমূহ হইতে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ রাষ্ট্র নিশ্চিত করিবেন।” সংবিধান ও ঐতিহাসিক মাসদার হোসেন মামলায় সর্বোচ্চ আদালতের দেয়া রায়ের আলোকে স্বতন্ত্র ও পৃথক বিভাগ হিসাবে গড়ে উঠতে বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় অতি জরুরী। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করণ, আইনের শাসন প্রতিষ্টা ও সর্বোপরি নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপ ও নিয়ন্ত্রন থেকে বিচার বিভাগকে রক্ষার জন্য বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় প্রতিষ্টা সময়ের দাবী।
সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অধঃস্তন সকল আদালত ও ট্রাইব্যুনালের উপর তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ-ক্ষমতা থাকবে হাইকোর্ট বিভাগের। ১০৯ অনুচ্ছেদ স্পষ্ট করে বলেছে “হাইকোর্ট বিভাগের অধঃস্তন সকল (আদালত ও ট্রাইব্যুনালের) উপর উক্ত বিভাগের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ-ক্ষমতা থাকিবে।” সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদের মর্ম অনুযায়ী অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ হাইকোর্ট বিভাগের একচ্ছত্র অধিকার। সাংবিধানিক এই বাধ্যবাধকতা সুচারুরূপে সম্পন্ন করার জন্য পৃথক ও পূর্নাঙ্গ (full fledged) বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা অত্যাবশ্যক। তাই সংবিধানের ৭৯ অনুচ্ছেদে যেভাবে সংসদের নিজস্ব সচিবালয় থাকার কথা বলা হয়েছে ঠিক অনুরুপভাবে বিচার বিভাগের জন্য স্বতন্ত্র সচিবালয় নিশ্চিতের লক্ষ্যে পৃথক অনুচ্ছেদ সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত করা উচিৎ যাতে কোনো রাজনৈতিক সরকার এই বিষয়টিকে কোনোভাবেই অবজ্ঞা করতে না পারে।
বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের মামলার সংখ্যা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অধস্তন আদালতের বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির কর্মপরিধি অতীতের তুলনায় ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অবস্থা ও প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলেও বিচার বিভাগের জন্য পৃথক একটি সচিবালয় স্থাপন অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে। তাই সার্বিক বিশ্লেষণে কেবলমাত্র পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই অধস্তন আদালতের বিচারকগণের শৃঙ্খলা, বদলি, পদোন্নতি, ছুটি ও অন্যান্য বিষয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে মাজদার হোসেন মামলার আলোকে বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা ও পৃথকীকরণ নিশ্চিত করা সম্ভব। বিচার বিভাগের জন্য স্বতন্ত্র সচিবালয় না থাকার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিচার বিভাগে অনেকটা দ্বৈত শাসন চলে আসছে যা বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতার মূলে আঘাত আনে।
রাষ্ট্রের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী বিভাগ হলো নির্বাহী বিভাগ, কেননা তাদের হাতেই তো সব ক্ষমতা, প্রভাব ও প্রতিপত্তি। তাদের হাতেই যদি অন্য বিভাগ তথা বিচার বিভাগ তাদের কাজের জন্য মুখাপেক্ষী থাকেন তাহলে ঐ বিভাগ সুচারুভাবে ও স্বাধীনভাবে তাদের কাজ করতে পারবে না। বারবার হোঁচট খাবে। এমনটিই তো জাতি বারবার দেখেছে বিগত ৫৩ বছরে।