Image description

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এলাকামুখী ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাসহ এমপি ও মন্ত্রীরা। দলীয় সূত্র বলছে, জনগণের সঙ্গে যাদের যোগাযোগ নেই, তাদের আগামীতে নৌকা মনোনয়ন নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন হুঁশিয়ারির পর তারা এখন এলাকামুখী। শুক্র ও শনিবার ছুটির দিন হলেই এলাকায় যান নেতারা। স্থানীয় নেতা ও জনগণের সঙ্গে উঠান বৈঠক, বিভিন্ন প্রকল্প উদ্বোধন, বিয়ে, জন্মদিন, সুন্নতে খতনা, মিলাদ মাহফিল, ওয়াজ মাহফিল, নৈশভোজ, স্কুল-কলেজের ক্রীড়া অনুষ্ঠান, নবীনবরণ অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন তারা। রাজনৈতিক অনুষ্ঠানেও বক্তব্য রাখেন। এই বক্তব্য আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা এখন সুযোগ পেলেই এলাকায় যাচ্ছেন। খোঁজখবর নিচ্ছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের। করছেন জনসংযোগ। পুরো শীত মৌসুমে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছেন তারা। আবার কেউ সরাসরি যেতে না পারলেও নিজস্ব বলয়ের লোক দিয়ে শীতবস্ত্র বিতরণ করছেন। একই সঙ্গে আগামীতে এলাকার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। কারণ আগামী নির্বাচনে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই দলীয় মনোনয়ন দেবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সঙ্গত কারণে গোয়েন্দার সংস্থার রিপোর্টে যাতে পক্ষে থাকে তাই তারা সুযোগ পেলেই এলাকায় যান।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রাজনৈতিক ব্যস্ততার কারণে নিজ নির্বাচনি এলাকা নোয়াখালী-৫ আসনের খোঁজখবর ঢাকায় বসেই রাখেন। তিনি সুযোগের অভাবে যেতে পারেন না। তবে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগসহ ঢাকায় বসে তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক সুযোগ পেলেই নিজ এলাকা টাঙ্গাইলে যান। তিনি বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ও প্রকল্প উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীও তার নির্বাচনি এলাকা চাঁদপুর-মতলবে সুযোগ পেলেই যান। সম্প্রতি তার নির্বাচনি এলাকায় শীতবস্ত্র বিতরণ করেছেন। তিনি ২০-২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত তার নির্বাচনি এলাকায় মানুষের সঙ্গে গণসংযোগ করেছেন।

আওয়ামী লীগের আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম তার নির্বাচনি এলাকা কেরানীগঞ্জের এমন কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান নেই, যেখানে যোগ দেন না। তিনি বিয়ে, জন্মদিন, সুন্নতে খতনা, মিলাদ মাহফিল, ওয়াজ মাহফিলসহ সব অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। 

দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্ল্যাহ তার নির্বাচনি এলাকা ফরিদপুর-৪ ও আবদুর রহমান ফরিদপুর-১ এ সুযোগ পেলেই ছুটে যান। তারা স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে উঠান বৈঠকসহ চায়ের আড্ডায় মিলিত হন। আওয়ামী লীগের আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক তার নির্বাচনি এলাকা ঢাকা-১৩ আসনে গণসংযোগ করছেন। এমন কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান নেই যেখানে তিনি যোগ দিচ্ছেন না। এ ছাড়া তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ শুক্র ও শনিবার তার নির্বাচনি এলাকা চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় যান। গত ৮ জানুয়ারিও রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ১৮টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করেন এই মন্ত্রী।

দলটির আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল-আলম হানিফও শুক্র ও শনিবার সুযোগ পেলেই এলাকায় যান। গত ১৩ জানুয়ারি শুক্রবার কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সাংবাদিকদের আর্থিক সহায়তা ও অনুদানের চেক প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। এ সময় সাংবাদিক ইউনিয়ন কুষ্টিয়ার আয়োজনে মৃত সাংবাদিকের পরিবার ও অসুস্থসহ মোট ৫৪ গণমাধ্যমকর্মীকে অনুদানের চেক তুলে দেন তিনি। 

আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমও নির্বাচনি এলাকা মাদারীপুরে সুযোগ পেলেই যান। আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনিও সুযোগ পেলে তার নির্বাচনি এলাকা চাঁদপুর-৩ আসনে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিৎ রায় নন্দীও চাঁদপুর-৩ আসন তার নির্বাচনি এলাকায় সম্প্রতি শীতবস্ত্র বিতরণ করেছেন। এ ছাড়া তিনি প্রতি সপ্তাহে যান। 

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক তার নির্বাচনি এলাকা গাজীপুরে শুক্র ও শনিবার যান। সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক অনুষ্ঠান ছাড়াও সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন। আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হকও তার নির্বাচনি এলাকা শরীয়তপুরে সুযোগ পেলেই যান। তিনি বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন। পানিসম্পদ উপমন্ত্রী ও দলটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীমও সুযোগ পেলেই নিজ নির্বাচনি এলাকায় যান। তিনি বিভিন্ন প্রকল্প উদ্বোধনসহ রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন। গত ১৩ জানুয়ারি নির্বাচনি এলাকা শরীয়তপুরের সখিপুরে উপমন্ত্রীর রত্নগর্ভা মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত বেগম আশ্রাফুন্নেছা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে অসহায় ২৫টি পরিবারকে ঢেউটিন ও নগদ অর্থ বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন।

দলটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুরও শুক্র ও শনিবার তার নির্বাচনি এলাকা কুমিল্লা-১ আসনে ছুটে যান। গত ১৩ জানুয়ারি কুমিল্লার দাউদকান্দিতে অসহায় দুস্থ শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন তিনি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বেশিরভাগ সময় তার নির্বাচনি এলাকা সাভারে থাকেন। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন তার নির্বাচনি এলাকায় মেহেরপুরে শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনে সেখানে যান। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম তার নির্বাচনি এলাকা পিরোজপুর-১ আসনে প্রতি শুক্র ও শনিবার যান। সেখানে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেন তিনি। 

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন শুক্র ও শনিবার এলাকায় যান। তিনি গত ২১ জানুয়ারি নিজ নির্বাচনি এলাকা মৌলভীবাজারের বড়লেখায় নিজস্ব অর্থায়নে ১ হাজার শীতবস্ত্র কম্বল বিতরণ করেছেন। আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনও সম্প্রতি নিজ এলাকা চট্টগ্রামের শীতবস্ত্র বিতরণসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তো এখনও এক বছর বাকি আছে। আমি শুধু সামনের নির্বাচনে মনোনয়ন পাব, তার জন্য জনসংযোগ করি তা নয়। আমাকে স্থানীয় জনগণ ভোট দিয়ে এমপি বানিয়ে সংসদে পাঠিয়েছে। তাদের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে আমার। তাই তাদের যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেলে যেতে হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল-আলম হানিফ সময়ের আলোকে বলেন, কুষ্টিয়া-৩ আসনের স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করি আমি নিজ উদ্যোগেই। তারা আমাকে ভোট দিয়ে এমপি বানিয়েছেন। তাই তাদের সঙ্গে আমার থাকতে হয়। তাদের যেকোনো সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে থাকি। এ ছাড়া এলাকার মানুষের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কাজ করতে হয়। তাই ঢাকায় গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ড না থাকলে নিজ নির্বাচনি এলাকায় প্রতি শুক্র ও শনিবার যাওয়ার চেষ্টা করি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর সময়ের আলোকে বলেন, আমি প্রতি শুক্র ও শনিবার নিজ নির্বাচনি এলাকা কুমিল্লা-১ আসনে ছুটে যাই। এ ছাড়া স্থানীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষও কোনো দাওয়াত দিলে যেকোনো দিন যাই। স্থানীয় সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদান করি। কারণ স্থানীয় জনগণই আমাদের মূল শক্তি।