
জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়। এই আন্দোলনের অন্যতম নেতা নাহিদ ইসলাম। ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া থেকে শুরু করে অভ্যুত্থান-পরবর্তী গঠিত সরকারে অংশগ্রহণ, এরপর সেই সরকার থেকে সরে এসে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠন এবং বর্তমান কার্যক্রমসহ দেশের রাজনীতিতে অন্যতম আলোচিত ব্যক্তি তিনি। তিনি এখন নতুন একটি বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে দেশ-বিদেশে ছুটে বেড়াচ্ছেন। সেই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি মালয়েশিয়াতে তিন দিনের সফর করেছেন। এ সফরেই নয়া দিগন্তের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে তুলে ধরেছেন তার রাজনৈতিক দর্শন, বৈষম্য ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের অভিজ্ঞতা, এনসিপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং তার স্বপ্নের বাংলাদেশ কেমন হতে পারে সেই রূপরেখা। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মালয়েশিয়া প্রতিনিধি আশরাফুল মামুন।
নয়া দিগন্ত : শুরুতেই আপনার কাছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাই!
নাহিদ ইসলাম : জুলাই গণঅভ্যুত্থান মূলত ছাত্রদের আন্দোলনের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। তবে শেষে এ অভ্যুত্থান সফল হয়েছিল সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ, ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দল-মত, বিভিন্ন পক্ষ ও প্রবাসীদের অংশগ্রহণের কারণে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে কোনো রাজনৈতিক দলের আহ্বানে মানুষ রাস্তায় নামেনি; বরং বিবেকের তাড়নায় মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়েছিল এবং রাস্তায় নেমে এসেছিল। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও মানুষের দীর্ঘদিনের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গঠিত হয়।
নয়া দিগন্ত : সবাইকে কিভাবে সংগঠিত করেছিলেন এবং কর্মসূচিগুলো গ্রহণ করতেন কিভাবে?
নাহিদ ইসলাম : আমরা বাংলাদেশের প্রশ্নে, গণতন্ত্রের প্রশ্নে, স্বাধীনতার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ ছিলাম। সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। ছাত্র-শ্রমিক-জনতা একসাথে আন্দোলনকে শক্তিশালী করে। এ সময় প্রায় দেড় কোটি প্রবাসী বাংলাদেশী রুখে দাঁড়িয়েছিল। তারা নিজেদের জীবনের কথা, নিজেদের পেশার কথা, নিজেদের পরিবারের কথা ভাবেনি। তারা সরকারকে চাপ প্রয়োগ করার জন্য রেমিট্যান্স শাটডাউন দিয়েছিল। ফ্যাসিবাদ দূর করে আগামীর নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে সবাই রাজপথে সংগঠিত হয়েছিল। গণঅভ্যুত্থান কোনো একক দলের কর্মসূচি ছিল না; বরং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণেই তা গড়ে উঠেছিল। অভ্যুত্থানের লক্ষ্য ছিল নতুন বন্দোবস্ত, নতুন রাষ্ট্র কাঠামো তৈরি করা, শুধুমাত্র দল পাল্টানো নয়।

নয়া দিগন্ত : শুরুতে কি মনে করেছিলেন যে, এই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়ে দেবে?
নাহিদ ইসলাম : আমরা রাজপথে নেমেছিলাম একটা নতুন দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে। আমাদের আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল ফ্যাসিবাদকে সরানো ও নতুন বাংলাদেশ গঠন করা। শেখ হাসিনার আমলে কেউ তার অধিকারের কথা বলতে পারেনি। ভোট দিতে পারেনি, সুন্দর নির্বাচনের কথা কল্পনাও করতে পারত না। তাই এ সম্মিলিত ক্ষোভ ও আন্দোলন শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার পতন ডেকে আনে।
নয়া দিগন্ত : সরকারের পতন হচ্ছে- বিষয়টি কখন বুঝতে পারেন?
নাহিদ ইসলাম : জুলাই অভ্যুত্থানে দেশের ভেতর ও বাইরে, বিশেষ করে প্রবাসীদের ঐক্য যখন সুদৃঢ় হলো এবং মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ছাত্রদের পাশে দাঁড়ালো, তখনই স্পষ্ট হয়ে গেল সরকার টিকতে পারবে না। দেশের মানুষ যখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয় তখন কোনো শক্তি তাদের ধরে রাখতে পারে না।
নয়া দিগন্ত : সফল অভ্যুত্থানের পর নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলো। এই সরকারে আপনারা কেন অংশ নিলেন?
নাহিদ ইসলাম : অভ্যুত্থানের পর সরকারে যাওয়ার মূল লক্ষ্য ছিল জনগণের দাবি পূরণ করা। এ ছাড়া সংবিধান সংস্কার, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, বৈষম্যমূলক অর্থনীতি পরিবর্তন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা দেয়া। গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত সরকারের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা ছিল পাহাড়সম। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন, সংবিধান ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার, বৈষম্যমূলক অর্থনীতির পরিবর্তন এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা এসব ছিল জনগণের প্রধান দাবি। আমরা চেয়েছিলাম সরকারে থেকে জনগণের দীর্ঘদিনের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে। তাদের চাওয়া-পাওয়া পূরণ করতে। কিন্তু আন্দোলনের সময় যে ব্যাপক সংস্কারের আশা করা হয়েছিল, তা শুরুতেই আংশিকভাবে খারিজ হয়ে যায়।

নয়া দিগন্ত : অভ্যুত্থান সফল হওয়ার পরও নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের প্রয়োজনীয়তা কেন অনুভব করলেন?
নাহিদ ইসলাম : আন্দোলনের পরপরই দল গঠনের পরিকল্পনা ছিল না। গণঅভ্যুত্থানের পরে আমরা প্রায় সাত মাস সময় পেয়েছিলাম। আমরা ভেবেছিলাম দেশের ফ্যাসিবাদ বিরোধী দলগুলো সংস্কারের পক্ষে ঐকমত্য থাকবে। কিন্তু সাত মাসে আমাদের অভিজ্ঞতা হয়েছে যে, ছাত্ররা বারবার প্রতারিত হয়েছে, রাষ্ট্রপতি অপসারণ, জুলাই ঘোষণাপত্র, নতুন সংবিধান বাস্তবায়ন এ সবগুলো বিষয়েই বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধ হয়েছে। সরকার নতুন সংবিধান করতে ভয় পায়। ছাত্ররা নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছে, তারা ভয় পায়নি। দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতিতে লেখা হয়েছে- তারা কেমন বাংলাদেশ চায়।
আমাদের তখন মনে হয়েছিল যে জুলাই অভ্যুত্থানের যে আশা-আকাঙ্ক্ষা এগুলো রাজনৈতিক দলগুলো বাস্তবায়ন করতে পারবে না। তারা পুরনো বন্দোবস্ত, পুরনো সিস্টেমকে টিকিয়ে রাখতে চাচ্ছে, আওয়ামী লীগের জায়গায় প্রতিস্থাপিত হতে যাচ্ছে। ফলে জুলাই অভ্যুত্থানকে সফলতা দিতে হলে আমাদেরকে রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হতে হবে। যে নতুন বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষায় তরুণদের উত্থান হয়েছে, যে জন্য ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমেছিল তাদেরকে সংঘটিত করতে আমাদের একটা রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম প্রয়োজন। সেই লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থেকেই জাতীয় নাগরিক পার্টির উৎপত্তি।

আর এ দল কেবল একটি রাজনৈতিক দলই নয়, এটি সংস্কারের আদর্শ ধারণ করা গণআন্দোলন। জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রেক্ষাপটটা হচ্ছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থান। এই অভ্যুত্থানে যেহেতু ছাত্ররা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে এবং তারাই জাতীয় নেতৃত্বে পরিণত হয়েছিল, তাই সরকার গঠনের দায়িত্বও তাদের হাতে ছিল। সে দিক থেকে জনগণের একটা প্রত্যাশা ছিল তারাই হাল ধরবে। এ ক্ষেত্রে অভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দকে সামনে রেখেই দল গঠিত হয়েছে- এর মানে এই নয় যে, এ দলে শুধু তরুণরা অংশগ্রহণ করতে পারবে। যেকোনো বয়সের, যে কোনো শ্রেণি-পেশার নেতৃবৃন্দ, নাগরিকরা এ দলে অংশগ্রহণ করতে পারবে। আমাদের জাতীয় নাগরিক পার্টির একটা উপদেষ্টা পরিষদ গঠন প্রক্রিয়া চলছে, যেখানে সমাজের যে কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষ, বিশেষকরে সিনিয়র সিটিজেন অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তারা সেখানে যুক্ত হবেন। খুব শিগগিরই সে উপদেষ্টা পরিষদ আপনারা দেখতে পাবেন।
নয়া দিগন্ত : দল হিসেবে এনসিপি একেবারেই নতুন। এই অল্প সময়ে আপনাদের অভিজ্ঞতা কী?
নাহিদ ইসলাম : জাতীয় নাগরিক পার্টি কেবল একটি রাজনৈতিক দল নয়, এটি সংস্কারের আদর্শ ধারণ করা গণআন্দোলন। আমরা চাই নতুন বাংলাদেশ, যাকে কেউ বলছে বাংলাদেশ ২.০, কেউ বলছে নতুন বাংলাদেশ, আমরা বলছি ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’।

আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টি সারাদেশে কাজ করছি। প্রবাসীদের নিয়েও কাজ করছি। প্রবাসীদের সংগঠিত করার মাধ্যমে আমরা দেশ সংস্কারে তাদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করতে চাই। তাদের পরিবার বাংলাদেশে রয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশে কিভাবে গঠিত হচ্ছে, কিভাবে বিনির্মাণ হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করবে তাদের পরিবার ও সন্তানদের ভালো থাকা।
ফলে আমাদের সবার দায়িত্ব হচ্ছে- এ দেশে যেন আর কোনো ফ্যাসিবাদ, কোনো ব্যক্তির নামে ফ্যাসিবাদ গঠিত হতে না পারে। যেন ইনসাফের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি। গণঅভ্যুত্থানের শহীদেরা জীবন দিয়ে আমাদের ওপর এই দায়িত্ব অর্পণ করেছে। ফলে আমাদের সবার দায়িত্ব হচ্ছে তাদের এই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করা। এ বাস্তবায়নের পথে আমরা সবাইকে পাশে পাবো। সবাইকে নিয়ে সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলবো
নয়া দিগন্ত : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই বলছেন যে, এনসিপিতে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে, জনপ্রিয়তাও কমেছে। আপনি বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন?
নাহিদ ইসলাম : যেহেতু এটি একটি নতুন রাজনৈতিক দল। এখানে নানা ধরনের মানুষ, নানা চিন্তার মানুষের সম্মেলন ঘটেছে। বহু চিন্তা, বহু মতের সম্মেলন জাতীয় নাগরিক পার্টিতে হয়েছে। সেক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে হয়েছে। অনেকের রাজনীতির অভিজ্ঞতা নেই, সেই সীমাবদ্ধতাগুলো কিন্তু আমরা নিজেরাই সবসময় অ্যাকনলেজ করছি। সেটাকে অতিক্রম করেই আমরা সামনে অগ্রসর হতে চাই। আমরা আশা করি যে, আমাদের রাজনীতির চর্চা, আমাদের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে সমন্বয়হীনতা দূর করে জাতিকে নেতৃত্ব দিতে পারব।
তবে আমাদের বিরুদ্ধে নানা প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি ও আকাঙ্ক্ষাকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র চলছে। জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। আমরা অভ্যুত্থানের পর একটা কথা বারবার বলেছি, কেবল মাত্র একটা দলকে সরিয়ে অন্য একটা দলকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য অভ্যুত্থান হয়নি। এ অভ্যুত্থান এনসিপিকে আনার জন্যও হয়নি। এ অভ্যুত্থান হয়েছিল পরিবর্তন আনার জন্য। নতুন বন্দোবস্ত, নতুন রাষ্ট্র কাঠামো তৈরির জন্য।
এর জন্য প্রয়োজন রাষ্ট্র সংস্কার ও নতুন সংবিধান। আর এ সংবিধান ও নতুন রাষ্ট্র কাঠামোর জন্যই আমরা এক বছর ধরে বলেছি। যদি এগুলো বাদ দিয়ে নির্বাচনের দিকে যাওয়া হয় তাহলে আমাদের জনগণ সে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করবে।
আমরা এনসিপির পক্ষ থেকে বলে আসছি- জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ছাড়া, জুলাই সনদের আইনী ভিত্তি ছাড়া যদি কোনো সমঝোতার নির্বাচনের দিকে যাওয়া হয়, তাহলে আমরা সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব না। এই কারণেই এনসিপিকে নিয়ে, অভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দের প্রতি এত ক্ষোভ, নানা প্রোপাগান্ডা নানা গুজব। গণঅভ্যুত্থানের নানা স্মৃতিকে, আকাঙ্ক্ষাকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার নানা ষড়যন্ত্র চলছে বাংলাদেশে। কিন্তু ষড়যন্ত্র করে লাভ নেই। আমরা অনেক সময় হতাশ হই কিন্তু এখন আর হতাশ নয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক তথ্য দেখে অনেকেই হতাশ, অনেকের উৎকণ্ঠা যে, দেশে কী হচ্ছে? আমাদের বিরুদ্ধে নানা প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। আমরা দেশের স্থিতিশীলতার জন্য আন্দোলন প্রচেষ্টা চালিয়েছি। কিন্তু আমরা দেখেছি ঐক্যের নাম করে বারবার গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ছাত্রদের প্রতারিত করা হয়েছে।
নয়া দিগন্ত : পতিত সরকার মাঝে মধ্যেই নানা ধরনের কর্মসূচি দিচ্ছে, হুমকি দিচ্ছে। আপনি কি মনে করেন তারা আবার সহসাই ফিরে আসতে পারে?
নাহিদ ইসলাম : আমরা খুব স্পষ্টভাবে বলেছি, বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ আর কখনো ফিরে আসতে পারবে না। মুজিববাদী শক্তিদের আমরা আর কোথাও দাঁড়াতে দেব না। ৫ আগস্টের পর আমরা চেয়েছিলাম জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশটাকে গড়বো। এখনো আমাদের সেই আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। কিন্তু আমরা গণঅভ্যুত্থানের সাথে কোনো কম্প্রোমাইজ করবো না।

মুজিববাদীদের যে সিম্বল বর্তমানে রয়েছে তা হলো- ৭২-এর সংবিধান। এ সংবিধান আমাদের একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধকে ব্যর্থ করেছে। এখন ২৪-এর অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করছে। ফলে এই ৭২-এর সংবিধানকে পরিবর্তন করে একটা গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে।
নয়া দিগন্ত : প্রশাসনে পতিত সরকারের বিপুল সংখ্যক জনবল রয়েছে। তারা সরকারকে বিতর্কিত বা বিপদে ফেলার চেষ্টা করছে কিনা? বিশেষ করে আপনি যখন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে ছিলেন তখন কি এমনটি অনুভব করেছেন?
নাহিদ ইসলাম : ষড়যন্ত্র অবশ্যই হয়েছে। অভ্যুত্থানের পর যে সরকার গঠিত হয়েছিল, সেটিকে বিতর্কিত করার চেষ্টা হয়েছে। তবে জনগণের ঐক্যই মূল শক্তি। আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে একটা নতুন দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে রাজপথে নেমেছিলাম। গত এক বছরে সে স্বপ্ন যাতে সফল না হয় সেটার জন্য নানা অপচেষ্টা করা হয়েছে। সে চেষ্টা, সে ষড়যন্ত্র এখনো চলমান। দুঃখের বিষয়- আগে এ ষড়যন্ত্র আসতো একটা পক্ষ থেকে; পলাতক স্বৈরাচারের পক্ষ থেকে। এখন এটি বাস্তবায়ন করছে আরো অনেক পক্ষ।
নয়া দিগন্ত : আপনার মালয়েশিয়া সফর প্রসঙ্গে জানতে চাই!
নাহিদ ইসলাম : আমরা প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করছি। আমাদের নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। প্রবাসীদের আশা-আকাঙক্ষার কথা শুনছে। প্রবাসীরা অভ্যুত্থানের বড় অংশীদার ছিলেন। তাদের ভোটাধিকার না দেয়ায় তারা নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। মালয়েশিয়া সফরে আমরা তাদের সাথে সরাসরি কথা বলেছি, সংগঠিত করেছি, তাদের ভোটাধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছি।
নয়া দিগন্ত : এই সফর কতটা সফল মনে করছেন?
নাহিদ ইসলাম : জাতীয় নাগরিক পার্টি নতুন বাংলাদেশ চায়। আমরা তাদের কাছে আমাদের লক্ষ্যের কথা বলেছি। প্রবাসীরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলনে পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। তারা আন্দোলনের অংশ এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তাদের ভোটাধিকারের নিশ্চয়তা, বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন স্থানে হয়রানি বন্ধ করা- এ বিষয়গুলো সংস্কারের কথা আমাদের জানিয়েছে। আমরা প্রবাসীদের ভোটাধিকারের জন্য ক্যাম্পেইন করছি। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু নানারকম ষড়যন্ত্র করে আমাদেরকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।