Image description
 
সাংবাদিক আশরাফুর রহমান আকন্দ চলমান ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন।

ইরান-ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সংঘাত ঘিরে উত্তপ্ত পুরো মধ্যপ্রাচ্য। গত ১৩ জুন ইসরায়েল বিনা উসকানিতে ইরানে হামলা করে দেশটির শীর্ষ সামরিক নেতৃত্বকে হত্যা করলে শুরু হয় এই সংঘাত।

 
 
এরপর ইরান ইসরায়েলে পাল্টা আঘাত শুরু করে। সেই থেকে দুই দেশের সংঘাত চলছেই।

 

এই সংঘাতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, ইরানিদের দৃষ্টিভঙ্গি, নিরাপত্তা পরিস্থিতি, প্রবাসী বাংলাদেশিদের বাস্তবতা জানতে বাংলানিউজ কথা বলেছে রেডিও তেহরান বাংলা বিভাগের সিনিয়র সাংবাদিক আশরাফুর রহমান আকন্দ-এর সঙ্গে। তেহরানে অবস্থানরত এই অভিজ্ঞ সাংবাদিক তুলে ধরেছেন সংঘাতপূর্ব ও চলমান সময়ের ভেতরের চিত্র।

বাংলানিউজ: চলমান ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে আপনি কী মনে করেন?

আশরাফুর রহমান আকন্দ: ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার যুদ্ধবাজ মন্ত্রিসভার গোঁয়ার্তুমি আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মদদে এই সংঘাত শুরু হয়েছে। একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশে এভাবে আগ্রাসন চালানো আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ও মানবাধিকারের পরিপন্থী। মূলত ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠনগুলোকে সামরিক খাতসহ বিভিন্নভাবে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা, পারমাণবিক কর্মসূচি অব্যাহত রাখা এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ঈর্ষণীয় পর্যায়ে শক্তিশালী করায় ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের নেতারা ইরানের ওপর দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষুব্ধ।  

এ ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হলো এই চাপিয়ে দেওয়া সংঘাত। এর মাধ্যমে তারা ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের মতো মেরুদণ্ডহীন করতে চায় এবং ইরানের ইসলামী শাসনব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে সিরিয়া, লিবিয়া কিংবা জর্ডানের মতো তল্পিবাহক শাসকদের ক্ষমতায় বসাতে চায়। তাদের উদ্দেশ্য যাই থাকুক না কেন, এই সংঘাতের কোনো যৌক্তিকতা নেই।  

যেমনটি ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাক বলেছেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের যৌক্তিক কোনো কারণ নেই এবং ইসরায়েল একা ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে পারবে না। ’ তিনি আরও বলেন, ‘ওয়াশিংটন এই যুদ্ধে কোনো হস্তক্ষেপ করতে চায় না, কেননা যুক্তরাষ্ট্র যে যুদ্ধেই অবতীর্ণ হয়েছে সেখানে কোনো বিজয় অর্জন করতে পারেনি। ’

বাংলানিউজ: এই পরিস্থিতি তেহরানের দৈনন্দিন জীবনে কী প্রভাব ফেলেছে?

আশরাফুর রহমান আকন্দ: ইসরায়েলি হামলার পর যতটা না জনজীবনে প্রভাব পড়েছে, তার চেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি হুমকিতে। তিনি তেহরান ‘খালি’ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তার এ আহ্বানের পর অনেকেই রাজধানী ছেড়ে গ্রামে কিংবা নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন।  

লোকজনের তেহরান ছাড়ার পেছনে আরেকটি কারণ আছে। আর তা হলো- ইরানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন গ্রীষ্মকালীন ছুটি চলছে। তাছাড়া, অফিস-আদালতের শিডিউলেও পরিবর্তন এসেছে। অনেকেই বাসা থেকে অফিস করার সুযোগ পেয়েছেন। এই সুযোগে অনেকেই রাজধানী ছেড়ে চলে গেছেন। তবে তেহরানে হাট-বাজার, দোকানপাট খোলা আছে। জিনিসপত্রের পর্যাপ্ত মজুতও আছে। যুদ্ধের কারণে জিনিসপত্র মজুত করার কোনো প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না।

বাংলানিউজ: বর্তমানে সেখানকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি কেমন?

আশরাফুর রহমান আকন্দ: আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে, ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর সঙ্গে সঙ্গে মোসাদ (ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা) এজেন্টরা রাজধানী তেহরানসহ দেশের বেশকিছু শহরে চোরাগোপ্তা নাশকতা শুরু করে। তেহরানের একাধিক স্থানে আগুন ধরিয়ে দেয়, গাড়ি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় এবং ড্রোন হামলা চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ইরানের গোয়েন্দা বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক অভিযান শুরু করে। মোসাদ এজেন্টদের ড্রোন কারখানার সন্ধান, বিস্ফোরক উদ্ধার, সন্ত্রাসীদের আটক এবং দ্রুত বিচারের ফলে নাশকতা বেশ কমে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাস্তাঘাটে টহল দিচ্ছে এবং সন্দেহজনক স্থানে অভিযান চালাচ্ছে। এর ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে।  

বাংলানিউজ: তেহরানের সাধারণ মানুষ এই সংঘাতকে কীভাবে দেখছে?

আশরাফুর রহমান আকন্দ: ইরানিরা শান্তিপ্রিয় জাতি। তারা আলাপ-আলোচনা ও কূটনৈতিক পন্থায় যেকোনো সমস্যার সমাধানে বিশ্বাসী। তবে তাদের ওপর অন্যায় চাপিয়ে দেওয়া হলে তারা তা মেনে নেয় না। ইরানের সাধারণ মানুষ ইসরায়েলি হামলাকে ‘আগ্রাসন’ হিসেবেই দেখছে।  

ইরানে বহু জাতি-গোষ্ঠীর মানুষের বসবাস। তাদের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে মতবিরোধ আছে, মাঝেমধ্যে তারা শাসক ও শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধেও কথা বলে। কিন্তু আমেরিকা-ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তারা ঐক্যবদ্ধ। একে তারা ‘রেড লাইন’ বলে মনে করে।  

বাংলানিউজ: ইরানে নাকি সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের জন-অসন্তোষ রয়েছে। সংঘাত শুরুর পর সেখানে কী অবস্থা তৈরি হয়েছে? জনগণের মধ্যে ঐক্য ফিরেছে কি না?

আশরাফুর রহমান আকন্দ: পৃথিবীর সবদেশেই সরকারের বিরুদ্ধে কম-বেশি অসন্তোষ থাকে, আমেরিকা-ইসরায়েলেও আছে। তেলআবিবে মাঝেমধ্যেই নেতানিয়াহুর পদত্যাগ দাবিতে মিছিল হয়। আমি মনে করি, সরকারের প্রতি জন-অসন্তোষের কারণে ইসরায়েল এ হামলা চালায়নি। ইরানের জনগণ আমেরিকা-ইসরায়েলকে হামলার জন্য আমন্ত্রণও জানায়নি। ইসরায়েলের এ আগ্রাসনকে বৈধতা দেওয়ার জন্যই পশ্চিমা মিডিয়া অপপ্রচার চালাচ্ছে। তবে ইরানের মানুষ পশ্চিমা সরকার ও গণমাধ্যমের চালাকিটা ধরতে পেরেছে। এ কারণে ইহুদি, খ্রিস্টানসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, শিয়া-সুন্নি অনুসারীসহ সবাই এখন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা, ক্ষমতাসীন সরকার ও সশস্ত্র বাহিনীর পাশে দাঁড়িয়েছে।

বাংলানিউজ: সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের কী অবস্থা? 

আশরাফুর রহমান আকন্দ: ইরানে প্রবাসী বাংলাদেশের সংখ্যা খুবই কম। একসময় হাজার দশেক বাংলাদেশি থাকলেও বর্তমানে তা দেড় থেকে দুই হাজার হতে পারে। এদের মধ্যে দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবার, রেডিও তেহরানের সাংবাদিক ও তাদের পরিবার, কিছু পেশাজীবী এবং কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী রয়েছেন। তাদের বাইরে চিকিৎসার জন্য আসা কয়েকজন রোগী ও তাদের সঙ্গে এবং এক হাজারের বেশি শ্রমিক আছেন, তারা বিভিন্ন কারখানা ও বাসা-বাড়িতে কাজ করেন।  

সংঘাত শুরুর পর স্বাভাবিকভাবেই তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। এ ছাড়া, দেশের ফেরার ব্যাপারে পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনদের চাপও তাদের বিচলিত করে তোলে। দূতাবাসের মাধ্যমে তারা দেশে ফেরার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা দেশে যেতে পারছেন না। দূতাবাস তাদের সড়কপথে পাকিস্তান কিংবা তুরস্কে পাঠানোর চেষ্টা করছে। সেখান থেকে নিজ নিজ খরচে কেউ চাইলে দেশে যেতে পারবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

বাংলানিউজ: আপনি কি মনে করেন খুব শিগগিরই শান্তি সম্ভব?

আশরাফুর রহমান আকন্দ: ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে ইরানকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আমেরিকা-ইসরায়েল। চলমান সংঘাত তাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ। ফলে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তবে সামরিক সংঘাত শিগগিরই বন্ধ হবে বলে আমি আশাবাদী। এর পেছনে দুটি প্রধান কারণ রয়েছে। প্রথমত- তেল আবিব, হাইফাসহ বহু স্থানে সামরিক ও বিমান ঘাঁটি, মোসাদের সদরদপ্তর, সেনা কমান্ড সেন্টার, তেল শোধনাগার ও আইটি পার্ক গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইরান। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে ইসরায়েলের অর্থনৈতিক অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ৩০ হাজার ভবনের মালিক ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন। ইসরায়েলের বহু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও স্থাপনা এখন ফিলিস্তিনের গাজার মতো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এরইমধ্যে প্রায় ১০ হাজার ইহুদি দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। ইসরায়েলিরা যা কখনো কল্পনা করেনি, তা এখন বাস্তব।  
দ্বিতীয়ত- ইরানে হামলা চালাতে এসে চারটি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানসহ বেশ কিছু বিমান, ব্যয়বহুল একটি হার্মিস ড্রোনসহ অসংখ্য মনুষ্যবিহীন বিমান হারিয়েছে ইসরায়েল।  

এসব কারণে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দেশের মাধ্যমে সংঘাত বন্ধে ইরানের কাছে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ইরানি কর্মকর্তারা তা নাকচ করেছেন। তারা বলেছেন, ইসরায়েল ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে, দেশটির সশস্ত্র বাহিনী আগামী কয়েক বছর ধরে যুদ্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় সব রকম প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। সেইসঙ্গে লজিস্টিক ও অন্যান্য পূর্ণ সামরিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনী বলেছেন, ‘ইহুদিবাদী সরকার একটি গুরুতর ভুল করেছে এবং তারা এর পরিণতি ভোগ করবে। ’ তিনি আরও বলেন, ‘ইরানিরা আত্মসমর্পণ করবে না বরং প্রতিশোধমূলক যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। ’ ইসরায়েলে ইরানের সামরিক অভিযান এবং সর্বোচ্চ নেতা, প্রেসিডেন্ট ও সশস্ত্র বাহিনীর কঠোর হুঁশিয়ারির পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি যুদ্ধে না জড়ানোর ঘোষণা ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের হতাশ করেছে।

হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র বলেছেন, ইরানের সঙ্গে আলোচনা করার বা না করার এখনো সুযোগ রয়েছে। ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে আমেরিকার আসার বা না আসার বিষয়ে ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্ত আগামী দুই সপ্তাহে মধ্যে জানা যাবে। আমেরিকা সরাসরি যুদ্ধে না জড়ানোর ঘোষণা দেওয়ায় ইসরায়েল অচিরেই সংঘাত বন্ধ করতে পারে বলে মনে হচ্ছে।  

বাংলানিউজ: এই সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক নেতাদের ভূমিকাকে কীভাবে দেখছেন?

আশরাফুর রহমান আকন্দ: চলমান সংকট মোকাবিলায় বিশ্বনেতাদের ভূমিকা নেই বললেই চলে। জাতিসংঘ কেবল সংঘাত বন্ধের আহ্বানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। ইউরোপীয় নেতারা সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানালেও তারা ইরানে ইসরায়েলি আগ্রাসনের নিন্দা জানাননি। তবে পাকিস্তানসহ বেশকিছু মুসলিম দেশ ইসরায়েলি আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়েছে। সমস্যা হলো আমেরিকার একচ্ছত্র সমর্থন ও আশকারা পেয়ে ইসরায়েল কাউকেই তোয়াক্কা করে না। এ কারণে ইসরায়েলের বিষয়ে প্রায় সব দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা নীরব।

বাংলানিউজ: এই সংঘাতের মধ্যে তেহরানে সংবাদমাধ্যম এবং সাংবাদিকরা কীভাবে কাজ করছেন?

আশরাফুর রহমান আকন্দ: সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের কাজ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ইরানের জাতীয় সম্প্রচার সংস্থা আইআরআইবির সদর দপ্তরে ইসরায়েলি হামলায় গণমাধ্যমকর্মীরা হতবাক হয়ে পড়েন। তবে তারা এরইমধ্যে পরিস্থিতি সামলে নিয়ে পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছেন। অন্যদিকে, ইরান সরকার ইন্টারনেটের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করায় রেডিও তেহরানের অনলাইন সংস্করণ পার্সটুডেসহ বিদেশি ভাষার ওয়েবসাইট ও তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপডেট ঠিকমতো করা যাচ্ছে না। তবে সবগুলো বিভাগ বিকল্প উপায়ে পাঠকদের কাছে তথ্য সরবরাহের চেষ্টা করছেন।

বাংলানিউজ: এই উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে সাংবাদিকরা কি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন?

আশরাফুর রহমান আকন্দ: আপনি হয়তো লক্ষ্য করেছেন, ইরান ইসরায়েলি আগ্রাসনের সব তথ্য বিবৃতির মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকে। সাংবাদিকরা আক্রান্ত স্থানগুলোতে সরাসরি গিয়ে প্রতিবেদন করতে পারেন। ইরানের রাষ্ট্রীয় নীতি হলো, ইসরায়েলের হামলার সব প্রমাণ সংরক্ষণ করা এবং বিশ্বব্যাপী তা ছড়িয়ে দেওয়া। ইসরায়েলের মতো তথ্য গোপন করা ইরানের রাষ্ট্রীয় নীতির পরিপন্থী। সে কারণে স্বাধীনভাবে সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিকদের কোনো বাধা নেই।

বাংলানিউজ: এই সংঘাতের ভবিষ্যৎ কী হতে পারে, আপনি কী মনে করছেন?

আশরাফুর রহমান আকন্দ: এই সংঘাতের মাধ্যমে ইসরায়েলের পরাজয় ও মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। গাজার ওপর থেকে ইসরায়েলি অবরোধ স্থায়ীভাবে উঠে যেতে পারে এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। যুদ্ধবিরতির শর্তে এই দুটি বিষয় ইরান উল্লেখ করতে পারে। তবে গাজায় অবরোধ প্রত্যাহার ছাড়া যুদ্ধবিরতি হবে বলে মনে হয় না।

পাশাপাশি বিশ্ব রাজনীতিতে ইরান একটি প্রভাবশালী অবস্থান তৈরি করে নিতে পারে। মুসলিম বিশ্বে নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে চলে যেতে পারে ইরান। কারণ ফিলিস্তিনি ইস্যুতে মুসলমান দেশগুলো যখন চুপ করে ছিল তখন ইরানই ফিলিস্তিনের হামাস ও ইসলামিক জিহাদ, লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী, ইরাকের পপুলার মোবিলাইজেশন ফ্রন্টসহ আরও কিছু সশস্ত্র সংগঠনের মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এর ফলে মুসলিম বিশ্বে ইরানের জনসমর্থন বাড়ে। চলমান ইসরায়েলবিরোধী অভিযানের ফলে ইরানের জনপ্রিয়তা ঈর্ষণীয় পর্যায়ে চলে গেছে।