Image description

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, যেকোনো মূল্যে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব মানুষের ঐক্যকে ইস্পাতকঠিন করে গড়ে তুলে সেটা ধরে রাখতে হবে। আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে, ‘সবার আগে বাংলাদেশ’- এই মন্ত্র সামনে রেখেই একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক আইনের শাসনের বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, ঐক্যবদ্ধ ও আত্মমর্যাদাশীল জাতিকে কেউ কখনো পদানত করতে পারে না। গতকাল বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

 
সাক্ষাৎকারটি প্রশ্নোত্তর আকারে দেওয়া হলো-

 

প্রশ্ন : বর্তমান পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেশবাসী এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আপনার আহ্বান কী?

সালাহউদ্দিন আহমেদ : দেশবাসীর প্রতি আমার উদাত্ত আহ্বান হচ্ছে, ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে গণমানুষের মধ্যে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক আইনের শাসনের বৈষম্যহীন বাংলাদেশ সৃজনের যে তীব্র আকাঙ্ক্ষার সৃষ্টি হয়েছে, সেই আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরে ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য ধরে রাখা। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক যাত্রায় আমরা যেন এ দেশের মানুষকে নিয়ে সঠিকভাবে হাঁটতে পারি। সে জন্য আমাদের সর্বোচ্চ ঐক্য ধরে রাখতে হবে। যে ঐক্যের মূলমন্ত্র হবে- ‘সবার আগে বাংলাদেশ’।

 
দেশ আমাদের সবার ওপরে।

 

প্রশ্ন : অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় পাঁচ মাস অতিবাহিত হচ্ছে। দেশ কিভাবে চলছে?

সালাহউদ্দিন আহমেদ : এ সময়টা খুব বেশি নয়, আবার কমও নয় একটা অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ডের মূল্যায়নের জন্য। তবে বিপ্লব-উত্তর পরিস্থিতিতে মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে গণ-অভ্যুত্থান এবং গণবিপ্লবের মধ্য দিয়ে যেভাবে যাত্রা শুরু হয়েছিল, ঠিক সেভাবে সেই গতিতে যাচ্ছে বলে মনে হয় না।

 
সে জন্য এ সরকারকে আরো বেশি কর্মক্ষম এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। সংস্কারের কার্যক্রম শুরু করা উচিত। বিশেষ করে নির্বাচন-সংক্রান্ত যেসব সংস্কারের সুপারিশগুলো পাওয়া যাবে, সেগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে আরম্ভ করা দরকার। এই সরকারের প্রধান অ্যাজেন্ডা হওয়া উচিত একটি সুষ্ঠু, সুন্দর, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক নির্বাচন উপহার দেওয়া। সেটা রোডম্যাপ ঘোষণার মধ্য দিয়েই জাতিকে পরিষ্কার চিত্র দেওয়া উচিত।
 

 

প্রশ্ন : দেশের মানুষ গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে একটা ফ্যাসিস্ট সরকারের কবল থেকে শুধু মুক্তিই চায়নি, তারা শান্তিও প্রত্যাশা করেছিল। সেই প্রত্যাশা আসলে কতটুকু পূরণ হচ্ছে?


সালাহউদ্দিন আহমেদ : মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। বিপ্লব-উত্তর সময়ে অধিকারহারা জনগণের ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়ার যে তীব্র আকাঙ্ক্ষার সৃষ্টি হয়েছে, সেটা রাতারাতি পূরণ হয়ে যাবে, বিষয়টা এমন নয়। তবে জনগণ চায় সেই অধিকার পূরণের প্রক্রিয়াটা যেন শুরু হয়। তারা কথা বলতে পারবে, সমাবেশ করার অধিকার পাবে। আইনের শাসনের বাংলাদেশ পাবে। তাদের এই প্রত্যাশা অবশ্যই সংগত এবং আমার মনে হয়, এই প্রক্রিয়াগুলো শুরু হয়েছে। গতিটা হয়তো সেভাবে পায়নি। আমরা আশা করছি, জনগণের সেসব প্রত্যাশা অবশ্যই একদিন পূরণ হবে।

প্রশ্ন : সরকারের উপদেষ্টা যারা আছেন তাদের মধ্যে দু-একজন ছাড়া কেউ বিপ্লবী ছিলেন না। এই সরকার পরিচালনায় কতটুকু বিপ্লবী ভূমিকা আছে বলে মনে করেন?

সালাহউদ্দিন আহমেদ : আমরা এটাকে গণ-অভ্যুত্থান বা গণবিপ্লব, যা-ই বলি না কেন, এটা আসলে সমাজ পরিবর্তনের কোনো অভ্যুত্থান বা বিপ্লব নয়। এটা ছিল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় অধিকারহারা জনগণের অধিকার ফিরে পাওয়ার সংগ্রাম। এখানে ছাত্র-জনতাসহ সব জনগণের মধ্যে একটা ঐক্য তৈরি হয়ে গিয়েছিল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। সুতরাং বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা এক জিনিস, আর গণবিপ্লবের চাহিদা আরেক জিনিস। যেখানে জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতে ফ্যাসিবাদের পতনের জন্য সংগ্রাম করেছে। সুতরাং এখানে বিপ্লবী কোনো ধারণা, বিপ্লবী আকাঙ্ক্ষা এবং বিপ্লবী ম্যানিফেস্টো আমরা রাতারাতি পাব এবং সে রকম নেতৃত্ব দেওয়ার মতো লোকজন ওভার নাইট সৃষ্টি হবে সে রকম আশা করাটাও ঠিক নয়। তবে আমি মনে করি, যারা বর্তমান উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়েছেন এবং নিয়েছেন তারা অবশ্যই যোগ্য লোক। কিন্তু তাদের রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা অতীতে ছিল না। এটা একটা ঘাটতি। তারা অনেকে শিক্ষকতা করেছেন, এনজিও পরিচালনা করেছেন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের মতো একটা অনেক সমস্যাসঙ্কুল রাষ্ট্র পরিচালনা করা এবং জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার মতো অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি দরকার জনগণের এই চাহিদা ও ইচ্ছা পূরণ করার জন্য।

প্রশ্ন : দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, এর কারণ কী?

সালাহউদ্দিন আহমেদ : এর কারণ ওই একটাই। দেশের অনিশ্চিত ও অস্থিতিশীল অবস্থার মধ্যে দেশিবিদেশি কোনো বিনিয়োগকারীই বিনিয়োগ করতে চায় না। অর্থনৈতিক কর্মকান্ডও স্বাভাবিক সময়ের মতো সুচারুভাবে পরিচালিত হয় না। এই স্বাভাবিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বাজার এবং সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য একটি স্থিতিশীল নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন বলে সারা বিশ্ব মনে করে এবং আমরাও মনে করি। এ ছাড়া বিশ্বজুড়ে আরেকটি প্রচলন আছে যে একটি স্থিতিশীল নির্বাচিত সরকার আরেকটি স্বল্প সময়ের সরকারের সাথে দীর্ঘমেয়াদি কোনো চুক্তিতে যেতে চায় না। এজন্য যত তাড়াতাড়ি একটি নির্বাচিত স্থিতিশীল সরকার দায়িত্ব নেবে তত তাড়াতাড়ি এই বাজার ও সরবরাহ পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে। তখন আর এই সমস্যাটা থাকবে না।

প্রশ্ন : জনপ্রশাসনে একটা অস্থিরতা চলছে। এটা কীভাবে দূর হবে বলে মনে করেন?

সালাহউদ্দিন আহমেদ : ১৫-১৬ বছরের ফ্যাসিবাদি শাসন টিকিয়ে রাখার জন্য যারা এই ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে অনুগামী হয়েছিল, বা তাদের সাথি হয়েছিল, তার মধ্যে প্রশাসন অন্যতম। এই প্রশাসনকে রাতারাতি খোলনলচে পাল্টে দেবে এমন ধারণা করাও ঠিক নয়। প্রচেষ্টা চলছে, তবে ধীরগতিতে। এটা আরও দ্রুতগতিতে হওয়া উচিত। এই প্রশাসনকে যত তাড়াতাড়ি ফ্যাসিবাদের দোসরমুক্ত করা সম্ভব হবে, তত তাড়াতাড়ি অস্থিরতা নিরসন হবে।

প্রশ্ন : এখন পর্যন্ত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মিথ্যা ও গায়েবি মামলার খড়গ থেকে মুক্ত হতে পারছেন না। অন্যদিকে সারা দেশে বিএনপির লাখ লাখ নেতা-কর্মীর নামে হাজার হাজার মামলা রয়ে গেছে। এসব মামলা থেকে মুক্তির উপায়টা কী?

সালাহউদ্দিন আহমেদ : আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টামন্ডলীকে অনেকবার অনুরোধ করেছি, তাঁরা যেন এসব মিথ্যা ও রাজনৈতিক মামলা নিরসন বা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করেন। যাতে করে সারা দেশে আমাদের নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষ যাঁরা এই ভুয়া ও মিথ্যা মামলার শিকার, তাঁরা আশ্বস্ত হবেন যে তাঁরা এ থেকে প্রতিকার পাবেন। আর সেগুলো কী প্রক্রিয়ায় প্রত্যাহার হবে সেটা না হয় টেকনিক্যাল টিম নিয়ে আইনজ্ঞদের নিয়ে ঠিক করা যাবে। কিন্তু আমরা এই ঘোষণাটা এখনো পাইনি। আমরা বারবারই এই আবেদন করে যাচ্ছি। দেশনেত্রী ও দেশের স্বাধীনতার প্রতীক বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো আমরা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিরসনের দিকে যাচ্ছি। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি মামলা প্রত্যাহারও হয়েছে।

প্রশ্ন : ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্প্রতি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন। কিন্তু এই মিথ্যা মামলার সঙ্গে তাঁকে যারা জড়িয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে আইনি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না?

সালাহউদ্দিন আহমেদ : আমি মামলার নথিপত্র না দেখে কিছু বলতে পারব না। তবে যতটুকু জেনেছি, যাদের দিয়ে এই মিথ্যা মামলা সাজিয়েছে, তার মধ্যে কাহার আকন্দ নামের এক ব্যক্তি রিটায়ার্ড করার পর তাঁকে নিয়ে এসে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। সেই ব্যক্তিকে বিগত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশনও দেওয়া হয়। এই কাহার আকন্দের নেতৃত্বে মুফতি হান্নানকে কয়েক শ দিন রিমান্ডে নিয়ে তাঁর মুখ দিয়ে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি বের করে আমাদের নেতা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ গঠন করা হয়। এই সম্পূরক চার্জশিটের মাধ্যমে তাঁকে সাজা প্রদান করা হয়। এটা পুরোপুরিই একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা মামলা এবং প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে তাঁকে এই সাজা দেওয়া হয়েছিল। এসব অপকর্মের সঙ্গে যারা জড়িত এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করতে আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য যারাই দায়ী- তাদের বিরুদ্ধে একটা পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা থাকা উচিত। যার মধ্য দিয়ে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারব বলে আশা করি।

প্রশ্ন : ওয়ান-ইলেভেনের মতো আরেকটি ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ বাস্তবায়নের উদ্যোগের কথা শোনা যাচ্ছে। এবারের টার্গেট বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। আপনি কিভাবে দেখেন?

সালাহউদ্দিন আহমেদ : অতীতের একটা ওয়ান-ইলেভেনের সরকার এবং পরবর্তী সময়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার এরা মাইনাস ওয়ান, মাইনাস টু, মাইনাস থ্রি ফর্মুলা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণই ঠিক করবে, তারা কাকে মাইনাস করবে আর কাকে প্লাস করবে। এটা জনগণের ইচ্ছার ওপরই নির্ভর করবে আগামীতে কারা প্লাস হবে।

প্রশ্ন : বিএনপির নির্বাচনি প্রস্তুতি কী এবং দলের ৩১ দফার প্রচারণা কেমন চলছে?

সালাহউদ্দিন আহমেদ : বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি নির্বাচনমুখী একটি দল। এ দলের নির্বাচনি প্রস্তুতি সব সময়ই থাকে। তবে এটাকে আপডেট করতে হয়। আমাদের প্রস্তুতি অবশ্যই আছে এবং প্রস্তুতি কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। আর ৩১ দফা প্রস্তাব আমাদের নেতা তারেক রহমান ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই জনসভার মধ্য দিয়ে জনগণের সামনে প্রস্তাব আকারে প্রকাশ করেছিলেন। যদি বিএনপিসহ সমমনা এবং আমাদের শরিক দলগুলো ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে বিজয় লাভ করে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার গঠন করতে পারে তাহলে আমাদের সেই সরকার হবে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি জাতীয় সরকার। তারা এই ৩১ দফা কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়ন করবে। সাম্প্রতিক সময়ে সরকার এবং সরকারের বাইরে থেকে যেসব সংস্কার প্রস্তাব আসতেছে সেগুলো হলো, আমাদের ৩১ দফার অংশমাত্র। আজ পর্যন্ত বিএনপির ৩১ দফার বাইরে কোনো সংস্কার প্রস্তাব কেউ দিতে পারেনি। আমরা আজ থেকে দেড় বছর আগেই দেশের ও মানুষের ভবিষ্যৎ কল্যাণের কথা চিন্তা করে এই ৩১ দফা ঘোষণা করেছিলাম। কিভাবে ভবিষ্যতে একটি গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা যায়।

প্রশ্ন : প্রধান উপদেষ্টা তাঁর সাম্প্রতিক বক্তব্যে জাতীয় নির্বাচনের সময়সীমা সম্পর্কে একটি ধারণা দিয়েছেন। সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি, রোডম্যাপও দেননি। জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে আপনার নিজের কিংবা দলের পক্ষ থেকে কোনা ‘টাইম ফ্রেম’ আছে কি না?

সালাহউদ্দিন আহমেদ : তাৎক্ষণিকভাবে এ ব্যাপারে একটা প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলাম। প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে নির্বাচনের ব্যাপারে একটা ধারণা দিয়েছেন। সুনির্দিষ্ট কোনো কিছু বলেননি। আমরা সরকারের কাছে নির্বাচনের ব্যাপারে দিন-তারিখ উল্লেখ করে একটা রোডম্যাপ চেয়েছিলাম। নির্বাচনি সংস্কার এবং আইনি সংস্কারসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে সংস্কার করতে কতটুকু সময় লাগবে তার একটা অ্যাসেসমেন্ট করে সুনির্দিষ্টভাবে একটা সময় নির্ধারণ করে সরকারকে বলে দিতে হবে। এটা একটা জনপ্রত্যাশা।

প্রশ্ন : আগামী দুই মাসের মধ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। এটাকে আপনি কিভাবে দেখছেন?

সালাহউদ্দিন আহমেদ : নাগরিক কমিটি রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। যদি গণমানুষের দল হয়, তাহলে বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক সংগঠনের যাত্রাকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু সেটা যদি সরকারি সাহায্য সহযোগিতায়, অনুপ্রেরণায় কোনো রাজনৈতিক দলের জন্ম হয়, যাকে লোকজন কিংস পার্টি নামে অভিহিত করে থাকে, সেই রকমের কোনো সংগঠন না করাই উচিত।

প্রশ্ন : ‘আনুপাতিক হার পদ্ধতিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের’ দাবি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এ ব্যাপারে আপনি এবং আপনার দল সম্মত কি না? এটা কিভাবে সম্ভব?

সালাহউদ্দিন আহমেদ : কোনো রাজনৈতিক সংগঠন তাদের আদর্শ এবং নির্বাচনি কৌশল সামনে রেখে তাদের প্রস্তাব দিতেই পারে। সে স্বাধীনতা তাদের আছে। এ বিষয়ে আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সমালোচনা কিংবা মন্তব্য করব না। তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক ঐতিহ্যে এবং সংস্কৃতিতে দেশের চলমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে মিল রেখে সেই (আনুপাতিক হার পদ্ধতিতে নির্বাচন) ধারণা যায় কি না, এটা আমাদের বিবেচনা করে দেখতে হবে। বাংলাদেশে এখন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্কৃতি অনুসারে জাতীয় নির্বাচনের সময় সাধারণ মানুষ সরাসরি তাদের প্রতিনিধিকে দেখতে চায় এবং তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে কি করবে না, সেটা বিবেচনায় নিতে চায়। কিন্তু আনুপাতিক হার পদ্ধতির নির্বাচনে মানুষ তার এলাকার সুনির্দিষ্ট প্রার্থীকে কী দেখতে পারবে? কিংবা তাঁর সম্পর্কে জানতে পারবে? কাজেই বাংলাদেশের জনগণ মনে করে তাদের ভোটাধিকার নিয়ে এখন এ ধরনের একটা এক্সপেরিমেন্ট করার মতো অবস্থা বাংলাদেশের নেই। সুতরা দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার নিরিখে আমরা ‘ওয়েস্ট মিনস্টার টাইপ অব পলিটিক্যাল কালচার’-এ যেভাবে দেশে নির্বাচন হয়ে আসছে, সেটাকেই আমরা সমর্থন করি।

প্রশ্ন : আগামী নির্বাচনের পরে সমমনা দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এটা আপনাদের ৩১ দফা ঘোষণাতেও আছে। এই জাতীয় সরকার গঠন কিভাবে সম্ভব?

সালাহউদ্দিন আহমেদ : আমাদের ৩১ দফা প্রস্তাবনার সূচনাতেই এটা বলা আছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যেসব রাজনৈতিক দল আমাদের সঙ্গে আন্দোলন করেছে, তারা যদি এই ফ্যাসিবাদের পতন ঘটাতে পারে এবং নতুন গণতান্ত্রিক যাত্রায় এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে যদি সরকার গঠনের সুযোগ হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটা জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। এখানে আক্ষরিক অর্থে যে জাতীয় সরকারের কথা বোঝানো হয়, সেটা নয়। এটা হচ্ছে বিগত স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে আমরা যেসব রাজনৈতিক দল যুগপৎ আন্দোলনে একসঙ্গে ছিলাম তারা যদি একসঙ্গে নির্বাচন করে একসঙ্গে সরকার গঠন করে তখন ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে।

প্রশ্ন : ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ গঠনের কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। আপনি কি মনে করেন?

সালাহউদ্দিন আহমেদ : প্রধান উপদেষ্টা কী উদ্দেশ্য নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করবেন, সেটা এখনো খোলাসা করেননি। তিনি বলেছেন, যে ছয়টা সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে গঠন করেছেন, তাদের নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে একটা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করবেন। তাদের উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম কী হবে, সেটা এখনো জানা যায়নি। সেটা জানার পরেই বোঝা যাবে কী উদ্দেশ্যে তিনি সেটা করছেন।

প্রশ্ন : ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রায় প্রতিদিনই বলছেন, স্বৈরাচার সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও তাদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। দেশবিদেশ থেকে ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। ফলে আগামী দিনের নির্বাচন ও রাজনীতি দুটোই বিএনপির জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ। আপনি কি মনে করেন?

সালাহউদ্দিন আহমেদ : ষড়যন্ত্র আব্যাহত আছে সেটা শুধু আমরা নই, সমগ্র জাতি প্রত্যক্ষ করছে। দেশে এবং বিদেশের মাটিতে বসে পতিত সরকারের লোকেরা দেশ এবং দেশের মানুষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে তো কারও কোনো দ্বিমত নেই। এ সম্পর্কে সমগ্র জাতিকেই সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। যাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং সারা দেশে ফ্যাসিবাদবিরোধী যে ঐক্যের সৃষ্টি হয়েছে, সেই ঐক্যের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্রই সফল না হয়।

প্রশ্ন : আগামী নির্বাচনে সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির কতটুকু সাফল্য আশা করেন।

সালাহউদ্দিন আহমেদ : আমরা মনে করি বাংলাদেশের সব গণতন্ত্রকামী মানুষের মধ্যে একটা ঐক্য গঠন করা প্রয়োজন। সেই ঐক্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে যাতে একটি বৈষম্যহীন সমৃদ্ধিশালী ও আইনের শাসনের বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়, সে ব্যাপারে আমরা প্রচেষ্টা চালাব। এই লক্ষ্যেই আমরা আমাদের দলের রাজনৈতিক, সাংগঠনিক, সামাজিক, নির্বাচনিসহ সব কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি। যাতে করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তাদের চাহিদা এবং গণবিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আমরা এক নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি। আমাদের এসব কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে আশা করি আমরা সিঙ্গেল দল হিসেবে বিএনপি কিংবা যদি নির্বাচনী জোট হয়, সে জোটকে নিয়ে বিএনপির নেতৃত্বে একটা বিশাল নিরঙ্কুশ মেজরিটি লাভ করতে সক্ষম হব।

প্রশ্ন : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

সালাহউদ্দিন আহমেদ : আপনাকেও ধন্যবাদ।