Image description
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস

অন্তর্বর্তী সরকারের একশ দিন পূরণ হলো। দাবি-দাওয়া অনেক। সবকিছু এখনো গোছাতে পারেননি। কীভাবে পার করছেন?

 

এ বিষয়ে তো প্রতিদিনই সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হচ্ছে। কোনো দিন বাদ যাচ্ছে না। প্রথম হলো একটি অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এ সরকার যাত্রা করল। এর মধ্য দিয়ে স্থিতি আনা ও মানুষকে একত্র করা। এয়ারপোর্টে সবার কাছে আবেদন জানালাম যে আমরা এক পরিবার। আমাদের মাঝে মতভেদ থাকতে পারে, কিন্তু আমরা একে অন্যের শত্রু না। আমরা একযোগে কাজ করব। একসঙ্গে থাকি। এ অভ্যুত্থান আমাদের নতুন যাত্রার সুযোগ দিয়েছে। তো সেটি নিয়েই শুরু। তারপর আস্তে আস্তে কাজে নামা। সূত্র : বনিকবার্তা, সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

তার মধ্যে বড় সমস্যা হয়ে গেল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি। এ অভ্যুত্থানের ধকল সয়ে মানুষ আস্তে আস্তে সুস্থির হওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু পুলিশ পাচ্ছে না। এখনো সব পুলিশ কাজে আসেনি। তারা ভয় পেয়ে গেছে। কাজেই এদিকে পুলিশ নেই, ওদিকে মানুষের অস্থিরতা। কে কোথায় আছে? কী করছে? হঠাৎ করেই এ অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটল। একটু সুস্থির হতে সময় লাগছে। আমরাও বোঝার চেষ্টা করছি কোথা থেকে শুরু করব। সব তো লণ্ডভণ্ড অবস্থা। অর্থনীতি লণ্ডভণ্ড, ব্যাংকিং সিস্টেম লণ্ডভণ্ড। ব্যবসা-বাণিজ্য লণ্ডভণ্ড। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে। এগুলো নিয়ে প্রতিদিনই প্রতিবেদন প্রকাশ হচ্ছে।

যারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দিয়েছে ও কাজকে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরছে তাদের কারো কারো পক্ষ থেকে, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের দিক থেকে, অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা নিয়ে অভিযোগ উঠছে। আবার বড় রাজনৈতিক দলগুলো থেকেও কিছু কিছু জায়গায় সরকারের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এটিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

স্বাভাবিক। মানুষ তো! মানুষের অভাব তো থাকবেই। আর আমরা তো এ কাজের মানুষ না। আমাদের তারাই পছন্দ করে নিয়ে আসছে। কাজেই আমরা যতদূর পারি, ততদূর করি। ভুল-ত্রুটি হবে স্বাভাবিক। ভুল-ত্রুটির মধ্যেই কাজ করতে হচ্ছে। যতটুকু আমাদের সাধ্যে কুলায় সেভাবেই চেষ্টা করছি। আর যেগুলো অসম্পূর্ণতা আছে, আমরা চেষ্টা করি কীভাবে সম্পূর্ণ করব।

অনেকগুলো সংস্কার কমিশন হয়েছে এবং সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, এদের কাজ শেষ করার পর বলা যাবে এগুলোর রোডম্যাপ কী হবে। অনেকগুলো কমিশন হয়েও গেছে। এসব কমিশনের রিপোর্ট কবে পেতে পারেন বলে আপনি মনে করছেন?

আমরা তো প্রথম ছয়টির জন্য সময় নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম, যেগুলো আমাদের বিশেষভাবে দরকার। সেটি ছিল যে ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে আমাদের রিপোর্ট দেবে। সেটিই আমরা আশা করছি। ডিসেম্বর তো প্রায় এসেই গেল। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে। কারণ অনেকগুলোর কাজ শুরু করতে দেরি হয়ে গেছে। আমরা প্রথমে বলেছিলাম, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে দিন। কিন্তু দেখলাম যে এটি আর বলা যাচ্ছে না। যেহেতু শুরুতেই তাদের বসার জায়গা দিতে পারছি না। তারা পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না। কাজেই সময় চলে গেছে। ধরে নিচ্ছি জানুয়ারির মধ্যে রিপোর্ট এসে যাবে। রিপোর্ট এসে গেলে তখন একটি দলিল পেলাম; যেটি রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে দেব যে বলুন, কোনটি আপনাদের পছন্দ? যেটি আপনাদের পছন্দ, যেটি করতে চান, সেটি করব। আর যেগুলো অপছন্দ বা কেউ একমত হতে পারছে না; সেগুলো বাদ রাখব। কাজেই এটা তাদের নেগোসিয়েশন বা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার বিষয়। আমরা সাহায্য করব তাদের আলাপ-আলোচনায়। আমরা ধরে নিচ্ছি এখানে ১০০টা প্রস্তাব আছে। যেখানে বলা আছে এটি করতে হবে, ওটি করতে হবে। ১০০টির মধ্যে ১০টির ব্যাপারে তাদের কোনো আপত্তি নেই। আর দশটি একটু এদিক-ওদিক বদল করে দিলে হতে পারে। আমি আন্দাজ করছি। অথবা যদি বলে যে ‘এগুলোর কোনোটিরই দরকার নেই, তাড়াতাড়ি নির্বাচন দেন। এগুলো আমরা করব। আপনাদের এসবের মধ্যে মাথা ঘামানোর দরকার নেই। রিপোর্ট লিখেছেন, এখন আমাদের কাছে আসবে।’ হতে পারে। আমরা সেটির জন্য অপেক্ষা করব। যদি বলে যে নির্বাচন দিয়ে দিন, তাহলে আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত।

আল জাজিরাকে দেয়া আপনার সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে এ প্রসঙ্গগুলো এসেছে। সেখানে একটি বক্তব্য নিয়ে নানা ধরনের চর্চা চলছে। আপনার অফিস থেকেও একটি বক্তব্য দেয়া হয়েছে যে এটি চার বছরের কম সময়। এ বিষয়ে যদি আরেকটু পরিষ্কার করতেন?

ওখানে আমার বক্তব্য যেটি আল জাজিরায় ছাপা হয়েছে, সেটি দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যায়। সেটিই বোধ হয় আমার অফিস থেকে বলা হয়েছে। প্রসঙ্গটি নির্বাচন নিয়ে কথা ছিল না। এটি ছিল পার্লামেন্টের চার বছর নিয়ে আলোচনা। ওখানে নির্বাচনের চার বছর নিয়ে আলোচনা হয়নি।

আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল—এই যে সংস্কার করবেন, সংবিধানের যে সংস্কার করবেন; সেগুলো কী কী হতে পারে? উত্তরে আমি বলেছিলাম বহু হতে পারে; বহু রকমের ইস্যু আছে। যেমন কেউ বলে যে প্রত্যেক সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছরের জায়গায় চার বছর করুন। দুই দফার মধ্যে সীমা এবং পার্লামেন্ট পাঁচ বছরের জায়গায় চার বছর করুন। তখনই চার বছরের প্রশ্নটি এল। সে সময় আবার প্রশ্ন করা হয় যে তাহলে আপনারা কী চার বছর থাকবেন? কথাটি ছিল পার্লামেন্টের, এখন প্রশ্ন করে ফেলল আপনারা কী চার বছর থাকবেন? ওই প্রশ্নের উত্তরে আমি বলেছি, ‘না, না। অনেক কম।’ এই অনেক কমটাই এসে বলছে চার বছর। চার বছর বলা হলো পার্লামেন্ট নিয়ে। এখন এটি হয়ে গেছে নির্বাচন নিয়ে। অথচ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল না।

তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন সবগুলো সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট পেলে সময় নিয়ে আপনি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ করবেন?

রাজনৈতিক দলগুলো যদি বলে, ‘এগুলো বাদ দিন। নির্বাচন দিয়ে দিন। কাজ হয়ে যাবে।’ আমরা নির্বাচন দিয়ে দেব। সেজন্যই বলছি, আমি তো বলতে পারছি না, বলতে হবে তাদেরকে।

তাহলে কি আল জাজিরা আপনার বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে?

আল জাজিরা ভুলভাবে উপস্থাপন করেনি। তারা ঠিকই দিয়েছে। কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম সুন্দর রিপোর্ট করেছে। আমাকে তো আল জাজিরা পর্যন্ত যেতে হচ্ছে না। সে পত্রিকাগুলো আল জাজিরা থেকে নিয়ে বলছে। কিন্তু অন্য অনেক কাগজে চার বছর লাগবে উল্লেখ করেছে। আরে চার বছর ওদের তো ধরেবেঁধে রাখতে পারবেন না। যাদের নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়, উপদেষ্টামণ্ডলী, তারাই বলবে, ‘আজই আমাদের ছেড়ে দিন। আমি কী করে চলব? এ বেতনে আমার ছেলের বেতন দিতে পারছি না। যত তাড়াতাড়ি পারেন নির্বাচন দিয়ে দিন। আমরা চলে যাই।’ কাজেই আমাদের উদ্দেশ্য হলো যে তাড়াতাড়ি যাওয়া। আমরা চার বছর বললে তো লোক এখনই বের হয়ে চলে যাবে। একজন-দুজন না, আমাদের কয়েকজন আছে যারা বলেন, আমাদের ছেড়ে দেন। আর কতদিন আমাদের রাখবেন?

আপনি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমেও সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে আমাদের প্রতিবেশী একটি বড় দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে। আপনি এ বিষয়ে কথা বলেছেন। আবার আদানির বিতর্কিত প্রকল্পে নতুন করে আলোচনা বা যাচাই-বাছাইয়ের কথা শোনা গেলেও আমরা দেখছি যে আদানির টাকাগুলো বিগত সরকারের সময় যত দ্রুততার সঙ্গে দেয়া হয়েছিল, এবার তার চেয়েও বেশি দ্রুততার সঙ্গে পরিশোধ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে যদি ব্যাখ্যা দিতেন?

পাওনাদারের পাওনা শোধ করা হয়েছে। তা না হলে আমাদের গোটা বিদ্যুৎ খাত নিয়ে আমরা সমস্যায় পড়ে যাব। পুরো টাকা তো দিইনি। ভাগ ভাগ করে দেয়া হচ্ছে।

বিদ্যুৎ খাত বিগত সরকারের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। এর মধ্যে যেসব প্রকল্প নিয়ে বিতর্ক আছে, সেগুলো খতিয়ে দেখা বা পুনরায় যাচাই-বাছাইয়ের আগেই টাকাগুলো পরিশোধ করে ফেলা হবে?

এ টাকা তো ভবিষ্যতের জন্য দেয়া হচ্ছে না। যেটা আমরা নিয়ে ফেলেছি সেটার জন্য টাকা। টাকা তো ভবিষ্যতের জন্য দিচ্ছি না। ভবিষ্যতের জন্য রিভিউ হবে। যেটা আমি নিয়ে ফেলেছি, যেটা ভোগ করে ফেলেছি তার টাকা দিতে হবে না? সে টাকাটাই দিচ্ছি।

দ্রব্যমূল্য আপনার সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আপনি নিজেও বারবার বলছেন। আমাদের প্রশ্নে একটি রেফারেন্স নিয়ে আসি, ১৯৭৫ সালে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়, এর আগে মূল্যস্ফীতি খুব দ্রুতগতিতে বেড়ে ৬৫ শতাংশে উঠেছিল এবং পটপরিবর্তনের পর সেটি রাতারাতি অর্থাৎ মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে ঋণাত্মকে নেমে আসে। যেহেতু চাঁদাবাজ বা সুযোগসন্ধানী রেন্ট সিকাররা পালিয়ে গেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় মূল্যস্ফীতি কমবে বলে অনেকেই আশা করেছিলেন। কিন্তু দ্রব্যমূল্য কমছে না কেন?

সেটি তো আপনারা রিপোর্ট করছেন, কেন কমছে না। সেটি তো আমার বলার দরকার নেই। ছয়টি বন্যা গেছে। সে সময় ফসল নষ্ট হয়েছে, সবজি নষ্ট হয়েছে। সেটির ধকল সহ্য করতে হয়েছে। এক জায়গায় তো না। বিভিন্ন জায়গায় এটি হয়েছে। কাজেই সেটির একটি ধকল আছে। তারপর যেগুলো আমদানি করা হচ্ছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে মুদ্রার বিনিময় হারে পরিবর্তন এসেছে। এ টাকা ডলারে পরিবর্তন হয়ে সেখানে খরচ বেশি হচ্ছে। এজন্যই মূল্যস্ফীতিটা বেশি হয়ে গেছে। নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না।

ব্যাংক খাতের সংস্কার নিয়ে আপনি এরই মধ্যে আপনার নিজের বক্তৃতায় বলেছেন অনেকগুলো ভালো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যেটি আমরাও দেখছি। একই সঙ্গে আমরা এটি দেখছি যে আগেও যখন বড় বড় ব্যাংক ডাকাত ব্যাংকে তছরুপ করেছে, তখনো আমানতকারীরা অসুবিধার মধ্যে ছিল। এখন নতুন পরিস্থিতিতেও তো তারা অসুবিধার মধ্যে পড়েছে।

তছরুপওয়ালারা টাকা ফেরত দেয়নি তো।

আমানতকারীদের তো আপনার কাছে প্রত্যাশা যে তারা এ ভোগান্তির মধ্যে পড়বেন না।

এখন বুঝতে হবে অপশনগুলো কী। একটি হলো যে টাকা দিয়ে দাও, ব্যাংক বন্ধ করে দাও। তার চেয়ে অল্প অল্প দিয়ে ব্যাংক বাঁচিয়ে রাখো। আমাদের এখন পলিসি হলো ব্যাংকগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা। অল্প অল্প করে দাও, তাও ব্যাংক বাঁচুক। একটি ব্যাংক ফেল করা আরম্ভ করলে তারপর একের পর এক ফেল করা শুরু করবে। এটি ভয়ংকর জিনিস হবে। কাজেই আমাদের তো একটি উপায় বেছে নিতে হবে। পলিসি বলতে, একটু সহ্য করি সবাই মিলে। যাতে করে ব্যাংক বাঁচে এবং পুরো সিস্টেম ফাংশন করতে আরম্ভ করে।

আপনার সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর এমন একটি বিবৃতি এসেছিল—যে ব্যাংকগুলো লুট হয়ে গেছে সেগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়াটাই ভালো—এ ধরনের বিবৃতির কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে কি?

মানুষ আলোচনা করবে এটা ঠিক ছিল, না বেঠিক ছিল। এটা হলো মূল্যায়নের ব্যাপার যে আমার কোন দিকে যেতে হবে। দুটো অপশন আছে। এদিকে গেলে এমন হবে, ওদিকে গেলে ওমন হবে। আমরা একটা অপশন বেছে নিয়েছি। মনে হয়েছে এটিই ভালো হবে।

পাচারকৃত অর্থ ফেরানো নিয়ে আপনি নিজেও অনেকবার বলেছেন। অন্তর্বর্তী সরকার কি এটি শুরু করে দিয়ে যেতে পারবে? এমনটা কি আমরা দেখতে পাব আপনার হাত দিয়ে কিছু টাকা ফেরত এসেছে?

সবাই বলছে কিন্তু টাকা ফেরত আসছে না। ফেরত আসবে কিনা জানি না। আশা করি যেন আমরা কাজটা শুরু করে দিয়ে যেতে পারি। এ প্রক্রিয়া বড় জটিল প্রক্রিয়া। আইনি প্রক্রিয়া। কেউ কারো টাকা ছাড়তে চায় না। যে ব্যাংকে টাকা গেছে সে ব্যাংক টাকা রাখার জন্য আইনজীবীদের লাগিয়ে রেখেছে। আর যে মালিক নিয়ে গেছে, সেও আইনজীবী লাগিয়েছে। এটা আইনের লড়াই হবে। সাক্ষী-প্রমাণের লড়াই হবে যে কে পাবে আর কে পাবে না। যত রকমের প্রতিষ্ঠান আমাদের সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এসেছে, সবাই আশ্বাস দিচ্ছে। বলছে সময়সাপেক্ষ। কিন্তু এটা করা সম্ভব আংশিকভাবে, পুরো টাকাটা আসবে না।

বিগত সরকারের সময় সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ছিল তথ্য নিয়ে। তারা ঠিকমতো তথ্য দিত না। দেখা যেত মানুষকে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে। আপনার সরকার সঠিক তথ্য দেয়ার জন্য, বিশ্বাসযোগ্য তথ্য দেয়ার জন্য কী কী ধরনের উদ্যোগ এখন পর্যন্ত গ্রহণ করেছে?

একটা হলো যেটা সত্য সেটা বলা। তা না হলে আমরা নিজেরাই বিপদে পড়ে গেলাম। মিথ্যার ওপরে থেকে গেলাম, আমরা বুঝতে পারলাম না যে কী হলো। আমাদের সাজানোর দরকার নেই। আমরা তো নির্বাচনে কনটেস্ট করতে যাচ্ছি না যে আমাদের সুন্দর দেখাতে হবে। আমাদের সে ঠ্যাকা নেই। আমরা যা আছে সেটাই বলি, বরং খারাপ হলেই সেটা তাড়াতাড়ি বলি যে এই খারাপ অবস্থা আমরা পেয়েছি। ভালো দেখানোর কোনো চেষ্টা করার দরকার আমাদের নেই।

অনেক শ্বেতহস্তী প্রকল্প চালাতে গিয়ে সরকারের খরচ বেশি হচ্ছে। এ প্রকল্পগুলো নিয়ে কী করবেন?

এটা আবার চিন্তার বিষয় যে এটি কি বন্ধ করে দিলে ভালো হবে, নাকি চালিয়ে রেখে এর থেকে আদায় করার চেষ্টা করা হবে? বহু বড় বড় প্রতিষ্ঠান বেতন দিচ্ছে না। এটা কি করা যাবে? এটা কি বন্ধ করে দেয়ার? বিক্রি করে দেয়ার? বিক্রি হলে আইনের প্রশ্ন আছে। কার জিনিস আপনি বিক্রি করছেন? সব জটিলতার মধ্যে আটকে আছে। যেমন বেক্সিমকো একটা কোম্পানি, বেতন দিতে পারছে না মাসের পর মাস। তার তহবিলে টাকা আছে এমনটা তার কাগজে বলা হচ্ছে। সে বলছে, আমার টাকা নেই। ব্যাংককে বলা হচ্ছে টাকা ধার দিতে, ব্যাংক বলছে আমি কিসের ওপর টাকা ধার দেব? তার তো কিছু নেই, ধার দেব কিসে? বেতনের টাকা দিতে পারছে না।

যেগুলোর ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নেই, সরকার সেগুলো কীভাবে চালিয়ে রাখবে?

আমরা চালিয়ে রাখব না। আমরা কোন দুঃখে চালাব? আমরা কে চালানোর?

কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার থেকে তো বলা হচ্ছে যে কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে দেয়া হবে না?

চেষ্টা করব আমরা। কিন্তু আমার পকেট থেকে টাকা দিয়ে চালানোর কোনো দরকার নেই। আমরা চেষ্টা করব যে তার পয়সা দিয়ে সে যেন চলতে পারে।

বিগত সরকারের অর্থ লুটপাটের পেছনে বড় কারণ ছিল অলিগার্ক তোষণ। আমরা দেখেছি যে তারা বিদ্যুৎ খাতের নিয়ন্ত্রণ করেছে। ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রণ করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার কি এ অলিগার্কদের কর্তৃত্ব ভাঙতে পেরেছে?

সবচেয়ে বড় বিষয় হলো যে তারা আমাদের ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। এটা মস্ত বড় জিনিস। ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করে। সেটা তো মানুষের চোখে পড়ে না। দৈনন্দিন প্রয়োজনে আমি আটকে যাচ্ছি। সে যদি আমদানি না করে, তাহলে আমি ভোজ্যতেল পাচ্ছি না। সে যদি চিনি আমদানি না করে, আমি চিনি পাচ্ছি না। কাজেই তাদের চালু রেখে চিনি আসবে? নাকি বন্ধ করে দিয়ে চিনির সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হবে? আরেকজনকে তো চিনি আনতে হবে, কে চিনি আনবে? কাজেই এগুলো দোটানার বিষয় যে তাকে কতদূর সুযোগ দেবেন, বা কতদূর তাকে বন্ধ করবেন। ওকে বন্ধ করে দিলে আমাদের তো সবকিছু বন্ধ।

আসন্ন রমজানকে কেন্দ্র করে সরকারের ভোক্তাদের আশ্বস্ত করার কোনো উদ্যোগ আছে কি?

আমরা পুরো আশ্বস্ত করছি ভোগ্যপণ্যের ঘাটতি হবে না। ভোগ্যপণ্য বলতে শুধু খেজুর আর ছোলার বিষয় না। চিনির বিষয় না। চাল নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছিলাম। এখন আর স্বয়ংসম্পূর্ণ নেই। ছয়টা বন্যার কথা বললাম। একেবারে ঠিক মৌসুমে ধান কাটার আগে নষ্ট হয়ে গেছে সব। কাজেই এই বিরাট একটা ঘাটতি। এ ঘাটতি পূরণের জন্য এখন আমদানি করতে হচ্ছে আমাদের। আমরা বলছি যত টাকা লাগে, চালের ঘাটতি যেন না হয়।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কমিশন গঠন করেছে। একই সঙ্