নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত নিম্ন আয়ের অভিবাসীরা চরম অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে যাচ্ছেন। বিজনেস ইনসাইডারের এক প্রতিবেদনে এমনই এক তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে জানা গেছে, হোয়াইট হাউসের নির্দেশনা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অনুদান ও ঋণের বিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন সাময়িকভাবে স্থগিত করা হচ্ছে, যা সরাসরি স্বাস্থ্যসেবা, বাসাভাড়া সহায়তা, স্টুডেন্ট লোন এবং ফুড স্ট্যাম্প কর্মসূচির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এই বিষয়ে সোমবার হোয়াইট হাউস অফিস অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বাজেটের (OMB) এক অভ্যন্তরীণ স্মারক সরকারি সংস্থাগুলোতে পাঠানো হয়েছে। এতে জানানো হয়েছে, সরকারি সংস্থাগুলোকে মঙ্গলবার বিকেল ৫টা থেকে নির্দিষ্ট কিছু অনুদান ও ঋণের অর্থপ্রদান সাময়িকভাবে স্থগিত রাখতে হবে।
বাংলাদেশিসহ অভিবাসীদের জন্য বড় ধাক্কা
এই অর্থায়ন স্থগিতের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছেন নিম্ন আয়ের অভিবাসী এবং বাংলাদেশি পরিবারগুলো, যারা মার্কিন সরকারের বিভিন্ন ভর্তুকি ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে হোমকেয়ার সুবিধা, ফুড স্ট্যাম্প, স্টুডেন্ট লোন এবং বাসাভাড়া ভর্তুকি বন্ধ হয়ে গেলে লাখো অভিবাসী ভয়াবহ সংকটের সম্মুখীন হবেন।
এখনই এই স্থগিতাদেশ কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ফুড স্ট্যাম্প (SNAP) কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হতে পারে, ফলে কম আয়ের পরিবারগুলো খাদ্যসংকটে পড়বে। বাংলাদেশিসহ বহু শিক্ষার্থীর জন্য উচ্চশিক্ষা কঠিন হয়ে উঠবে, কারণ স্টুডেন্ট লোন প্রোগ্রাম বন্ধ হয়ে গেলে তারা বিকল্প অর্থায়নের কোনো পথ খুঁজে পাবে না। একইভাবে, হাউজিং ভর্তুকি বন্ধ হয়ে গেলে অনেক নিম্ন আয়ের অভিবাসী পরিবার ঘর ভাড়া দিতে সমস্যায় পড়বেন।
শুধু তাই নয়, মেডিকেড ও হেলথকেয়ার ফান্ডিং সংকুচিত হলে অসংখ্য বাংলাদেশি অভিবাসী সাশ্রয়ী মূল্যে চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসীরা মেডিকেড, ওবামা কেয়ার ও অন্যান্য সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচির ওপর নির্ভরশীল।
কেন এই সিদ্ধান্ত?
হোয়াইট হাউসের মতে, সাম্প্রতিক নির্বাহী আদেশগুলোর সঙ্গে সরকারি অর্থের ব্যয় সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা, তা পর্যালোচনা করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে, ফেডারেল সরকারে ডাইভারসিটি, ইকুইটি ও ইনক্লুশন (DEI) সম্পর্কিত কর্মসূচি বন্ধ করা, বিদেশি সাহায্য স্থগিত করা এবং অন্যান্য খাতে ব্যয়ের বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করাই এই স্থগিতাদেশের উদ্দেশ্য।
হোয়াইট হাউসের স্মারকে বলা হয়েছে, "এই সাময়িক স্থগিতাদেশ প্রশাসনকে সরকারি সংস্থাগুলোর কার্যক্রম পর্যালোচনা করতে এবং আইন ও প্রেসিডেন্টের নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অর্থ ব্যয়ের সর্বোত্তম উপায় নির্ধারণে সহায়তা করবে।"
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই কংগ্রেস অনুমোদিত অর্থ বরাদ্দের ওপর প্রেসিডেন্টের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চেয়েছেন।
এই সিদ্ধান্তে ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সিনেটের সংখ্যালঘু নেতা চাক শ্যুমার এক বিবৃতিতে বলেছেন, "এটি গণবিরোধী সিদ্ধান্ত এবং নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য চরম ক্ষতিকর।"
ইতোমধ্যেই বিভিন্ন রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাদের মতে, কংগ্রেস কর্তৃক অনুমোদিত বাজেট স্থগিত করার ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের নেই, এবং এটি সংবিধান লঙ্ঘনের শামিল।
সোর্স: বিজনেস ইনসাইডার