Image description
 

যুক্তরাজ্যে ১৭ বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঢাকায় প্রত্যাবর্তন ভারতীয় ইংরেজি ও বাংলা ভাষার গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো এই ঘটনাকে ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক ও সামাজিক দিক থেকে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছে, যেখানে তারেকের বক্তৃতা, পরিবারের সদস্যদের উল্লেখ এবং নির্বাচনি প্রভাবের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তানি গণমাধ্যমগুলো প্রধানত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ফোকাস করে তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রীপদের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে উপস্থাপন করেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যমের কভারেজে তারেকের প্রত্যাবর্তনকে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে দেখা হয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে তারেক রহমানের প্রথম জনসভার বক্তব্য ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। এনডিটিভি, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এবং ফার্স্ট পোস্টের মতো সংবাদমাধ্যমগুলো তার ‘আই হ্যাভ এ প্ল্যান’ (আমার একটি পরিকল্পনা আছে) শীর্ষক বক্তব্যকে মার্কিন মানবাধিকার নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের বিখ্যাত ভাষণের সঙ্গে তুলনা করেছে। সেখানে তিনি একটি নিরাপদ ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশের রূপরেখা তুলে ধরেন।

পশ্চিমবঙ্গের প্রভাবশালী দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে বেশ কিছু আবেগঘন ও বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে ১০ বছর আগে তার ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর কফিনবন্দি হয়ে দেশে ফেরার প্রসঙ্গের সঙ্গে তারেক রহমানের এই বীরোচিত ফেরার তুলনা করা হয়েছে।

এছাড়া তারেক রহমানের সফরসঙ্গী হিসেবে তার পরিবারের আদরের বিড়াল ‘জেবু’-র দেশে ফেরার খবরটি পাঠকদের বেশ নজর কেড়েছে। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার ফোনালাপ এবং দীর্ঘ ১৭ বছর পর মায়ের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে হাসপাতালে দেখা করার মুহূর্তগুলো আনন্দবাজার অত্যন্ত সবিস্তারে বর্ণনা করেছে।

আনন্দবাজার পত্রিকায় একাধিক শিরোনামে এই ঘটনা উঠে এসেছে, যেমন ‘স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে কাজ করতে হবে একসঙ্গে’, যেখানে তারেকের প্রথম বক্তৃতায় মার্টিন লুথার কিং ও নিহত ওসমান হাদির উল্লেখের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া তার ভাইয়ের মৃত্যু, মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ফোনালাপ, মা খালেদা জিয়ার সঙ্গে হাসপাতালে সাক্ষাৎ এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ‘জেবু’ নামের বিড়ালের ফিরে আসার মতো ব্যক্তিগত বিবরণও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এতে বিএনপির উজ্জীবিত হওয়া এবং তারেকের প্রত্যাবর্তনের আশাবাদী দিক ফুটে উঠেছে।

এনডিটিভি-র কভারেজে তারেকের প্রত্যাবর্তনের সময়কার নির্বাসন জীবন, ঢাকায় ‘বুলেটপ্রুফ’ প্রবেশ এবং লাখো মানুষের স্বাগতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তার বক্তৃতায় মার্টিন লুথার কিং-এর প্রসঙ্গ এবং ‘মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান’-এর ঐক্যের আহ্বানকে হাইলাইট করা হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমসে তারেকের শীর্ষ উদ্ধৃতি, বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তনের গুরুত্ব, খালি পায়ে হাঁটা, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বিড়ালের উল্লেখ, খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং তারেকের তিন দিনের কর্মসূচির বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। এছাড়া ঢাকায় বোমা বিস্ফোরণের মতো উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনাও উঠে এসেছে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে তারেকের প্রথম জনসভায় ‘আই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান... অ্যা সেফ বাংলাদেশ’-এর মতো বক্তব্যকে ফোকাস করা হয়েছে। দ্য হিন্দুতে বাংলাদেশ সব ধর্মের মানুষের বলে তারেকের বক্তৃতা, নির্বাচনের আগে ঢাকার প্রস্তুতি, খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং তারেকের ঢাকায় অবতরণের খবর প্রকাশিত হয়েছে। উইয়ন নিউজে তারেকের বক্তৃতায় ‘২০২৪-এর মুক্তি, হাদির ত্যাগ এবং ঐক্যের আশা’-এর মতো প্রসঙ্গ এবং প্রত্যাবর্তনের প্রথম ছবি তুলে ধরা হয়েছে। ফার্স্ট পোস্টে তারেককে মার্টিন লুথার কিং-এর ধাচে গড়া হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, সঙ্গে বাংলাদেশের উত্তেজনা এবং ১৭ বছর নির্বাসনের পর অবতরণের কথা। টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ায় তারেকের বক্তৃতায় ধর্মীয় ঐক্য, খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ, তারেক কে এবং ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে তার প্রত্যাবর্তনের গুরুত্বের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তানি গণমাধ্যমের কভারেজ তুলনামূলকভাবে সংক্ষিপ্ত এবং রাজনৈতিক দিককেন্দ্রিক। ডন পত্রিকায় তারেককে প্রধানমন্ত্রীপদের শীর্ষ প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করে, নির্বাচনের আগে ১৭ বছর নির্বাসন শেষ করে প্রত্যাবর্তনের খবর প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া খালেদা জিয়ার উত্তরসূরি হিসেবে তার নির্বাসন শেষের কথা বলা হয়েছে। জিও নিউজে তারেককে রাজনৈতিক হেভিওয়েট হিসেবে উপস্থাপন করে, নির্বাসন শেষ এবং প্রধানমন্ত্রীপদের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রত্যাবর্তনের ওপর ফোকাস করা হয়েছে। সামা টিভিতে তারেককে প্রধানমন্ত্রীপদের ফ্রন্টরানার হিসেবে দেখিয়ে, ১৭ বছর নির্বাসন শেষ করে প্রত্যাবর্তনের খবর প্রকাশ করা হয়েছে।

শীর্ষনিউজ