Image description

পাঁচজন ইউরোপীয় ব্যক্তির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ভিসা নিষেধাজ্ঞাকে তীব্রভাবে নিন্দা জানিয়েছেন ইউরোপের নেতারা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। তারা এই পদক্ষেপকে ভীতি প্রদর্শন এবং ইউরোপের নিজস্ব ডিজিটাল নীতিনির্ধারণের অধিকারের ওপর আঘাত বলে অভিহিত করেছেন। খবর আনাদোলু এজেন্সি।

 

 

মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এ ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেন। তিনি অভিযোগ করেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ‘আমেরিকান মতামত’ দমন করতে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর সংগঠিত চাপ সৃষ্টি করেছেন।

 

 

 

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা ইউরোপের ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে নেওয়া ‘ভীতি ও চাপ প্রয়োগের’ শামিল। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডিজিটাল বিধিমালা ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ও কাউন্সিলের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ও সার্বভৌম প্রক্রিয়ায় গৃহীত হয়েছে এবং তা কেবল ইউরোপের ভেতরেই প্রযোজ্য। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডিজিটাল পরিসর কীভাবে পরিচালিত হবে, তা ইউরোপের বাইরে থেকে নির্ধারিত হওয়ার কথা নয়।

 

 

 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মাখোঁ জানান, তিনি সাবেক ইউরোপীয় কমিশনার থিয়েরি ব্রেটনের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন এবং ইউরোপের স্বার্থে তার অবদানের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘চাপের কাছে আমরা নতি স্বীকার করব না এবং ইউরোপীয়দের সুরক্ষা দেব।’

 

 

 

ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-নোয়েল বারোও ভিসা নিষেধাজ্ঞার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ডিজিটাল সার্ভিসেস অ্যাক্ট (ডিএসএ) গণতান্ত্রিকভাবে গৃহীত এবং এর কোনো বহির্ভূত প্রয়োগ নেই। ইউরোপের জনগণ স্বাধীন ও সার্বভৌম; অন্য কেউ এসে তাদের ডিজিটাল পরিসরের নিয়ম চাপিয়ে দিতে পারে না।

 

 

 

ইউরোপীয় কমিশনও যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের ‘কঠোর নিন্দা’ জানিয়ে বলেছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ইউরোপের একটি মৌলিক অধিকার এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভাগাভাগি করা একটি মূল মূল্যবোধ। কমিশন সতর্ক করে জানায়, নিজেদের নিয়ন্ত্রণক্ষমতা রক্ষায় প্রয়োজন হলে তারা ‘দ্রুত ও দৃঢ়ভাবে’ প্রতিক্রিয়া জানাবে।

 

 

জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল হেটএইড সংস্থার দুই ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ওপর প্রবেশ নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করে বলেন, ডিএসএ নিশ্চিত করে যে অনলাইনে যা অবৈধ, অফলাইনেও তা অবৈধ—এবং এটি কোনো বহির্ভূত প্রভাব ছাড়াই গণতান্ত্রিকভাবে গৃহীত।

 

 

হেটএইডের দুই নির্বাহী জোসেফিন ব্যালন ও আন্না-লেনা ফন হোডেনবার্গ এই পদক্ষেপকে ‘দমনমূলক কাজ’ হিসেবে বর্ণনা করেন। জার্মান পার্লামেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওমিদ নুরিপুর যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে ‘তাৎক্ষণিকভাবে তলব করার’ আহ্বান জানান।

 

 

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট রোবার্টা মেটসোলা বলেন, দায়িত্ব পালনের কারণে কর্মকর্তাদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ ‘গ্রহণযোগ্য নয়’ এবং তা দ্রুত প্রত্যাহার করা উচিত।

 

 

বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাক্সিম প্রেভো জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যমান ‘অর্থনৈতিক হতাশা’ থেকে উৎসারিত এমন নিষেধাজ্ঞা অগ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন, ইউরোপ তার মূল্যবোধ রক্ষার সার্বভৌম অধিকার বজায় রাখবে।

 

 

ইইউর পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান কাজা কাল্লাস এই সিদ্ধান্তকে অগ্রহণযোগ্য এবং সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা বলে আখ্যা দেন। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেয়েন বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ইউরোপের শক্তিশালী ও প্রাণবন্ত গণতন্ত্রের ভিত্তি এবং ইউরোপ তা রক্ষা করবে।