ফিলিস্তিনের গাজায় কথিত হলুদ রেখা দিয়ে ইসরায়েল বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে আছে। পূর্বাঞ্চলের সীমান্তবর্তী যেসব এলাকায় ফিলিস্তিনিরা নানা ফসল উৎপাদন করতেন, যেখানে ছিল স্ট্রবেরির বাগান, জলপাইয়ের দীর্ঘ সারি– সেগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। উপত্যকার মাঝ বরাবর গেলে সেই কুখ্যাত হলুদ রেখা, যেখানে প্রতিদিনই প্রাণ যাচ্ছে কোনো না কোনো ফিলিস্তিনির। নারী-শিশু কেউই বাদ যাচ্ছেন না।
লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আশারক আল-আওসাত গত শনিবার জানায়, অক্টোবরের যুদ্ধবিরতির অধীনে ধাপে ধাপে সেনা প্রত্যাহারের অংশ হিসেবে এ ‘হলুদ রেখা’ নির্ধারণ করে ইসরায়েল। এখন সেখানে বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের নিয়মিত গুলি করা হচ্ছে। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলছেন, এর মাধ্যমে ক্রমাগতভাবে যুদ্ধবিরতির লঙ্ঘন ঘটছে।
গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুক্রবার পর্যন্ত দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের পূর্বে বানি সুহেলা শহরে লোকজন নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছানোর চেষ্টা করলে তাদের ওপর বারবার হামলা হয়। এতে এক নারীসহ চার ফিলিস্তিনি নিহত হন। এসব ঘটনা ঘটেছে হলুদ রেখার কাছাকাছি ২০০ মিটারের মধ্যে। চিকিৎসক দল, বেসামরিক প্রতিরক্ষা দল বা আন্তর্জাতিক সংস্থার কেউ এসব মৃতদেহ উদ্ধার করতে পারেননি। লাশগুলো দীর্ঘ সময় ধরে মাটিতে পড়ে ছিল।
মাঠ পর্যায়ের সূত্রগুলো আশারক আল-আওসাতকে জানায়, ইসরায়েলের বাহিনী প্রথমে এক নারীকে গুলি করে হত্যা করে। যখন এক যুবক তার মৃতদেহ উদ্ধারের চেষ্টা করেন, তখন তাকেও হত্যা করা হয়। এর পর মৃতদেহের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করার সময় আরও দুজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সূত্রগুলো বলছে, হলুদ রেখার আশপাশে চলমান লঙ্ঘনের কারণে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। অভিযোগ আছে, ইসরায়েলের সেনাবাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে গাজায় আরও এগিয়ে গেছে। ফলে ফিলিস্তিনিরা হলুদ রেখার কাছে থাকা তাদের বাড়িঘরে যেতে পারছেন না।
সূত্র জানায়, ইসরায়েল কার্যকরভাবে হলুদ রেখাটিকে ‘মৃত্যুফাঁদে’ পরিণত করেছে। সেখানে নিহতদের বেশির ভাগকেই কমপক্ষে ২০০ মিটার দূর থেকে গুলি করা হয়েছিল। গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল প্রায় ৪০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এদের মধ্যে হলুদ রেখার পাশে গুলিতে নিহত হয়েছেন অন্তত ১৫০ জন। বাকি মৃত্যু ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও কামানের গোলায় হয়েছে।
হলুদ রেখাকে সীমানা করার ষড়যন্ত্র
যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে হামাসের নিরস্ত্রীকরণের পাশাপাশি গাজা থেকে সব ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কিন্তু প্রথম ধাপ শেষ হলেও দ্বিতীয় ধাপে তা গড়াচ্ছে না। অথচ ইসরায়েলের গণমাধ্যম হলুদ রেখাকেই এখন নতুন সীমান্ত বলে বর্ণনা করছে। গত বৃহস্পতিবার এক ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিব্রু ভাষার সংবাদপত্র ইসরায়েল হায়োমকে বলেন, হলুদ রেখা এখন নতুন সীমানা হিসেবে বিবেচিত। হামাসকে নিরস্ত্র না করা পর্যন্ত ইসরায়েল সেখান থেকে সরে যাবে না।
মায়ামিতে ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে বৈঠক
এ অবস্থায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মিসর, কাতার ও তুরস্কের কর্মকর্তারা। গত শুক্রবার এ বৈঠকে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের বিষয়টি উত্থাপন করে বলা হয়, এতে দ্বিতীয় ধাপে পৌঁছানোটা কঠিন হয়ে পড়ছে। বৈঠক শেষে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান আনাদোলুকে বলেন, ইসরায়েলের ক্রমাগত যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন শান্তি প্রক্রিয়াকে কঠিন করে তুলছে।
মায়ামি আলোচনার পর এক বিবৃতিতে উইটকফ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, মিসর, কাতার ও তুরস্ক গাজা যুদ্ধবিরতিতে অংশগ্রহণকারী পক্ষগুলাকে তাদের প্রতিশ্রুতি মেনে চলা ও সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। আলজাজিরা জানায়, উপত্যকায় চলমান ইসরায়েলি হামলার পটভূমিতে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। গাজার সরকারি গণমাধ্যম অফিসের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর থেকে বিমান, কামান ও সরাসরি গুলিবর্ষণের মাধ্যমে ইসরায়েল ৭৩০ বারেরও বেশি যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।