অনলাইনে গোপনীয়তা রক্ষা করা এখন আগের যেকোনও সময়ের চেয়ে কঠিন। অনলাইন গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে হলে একটি মাত্র টুল নয়, বরং একাধিক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাই কার্যকর। এনক্রিপশন, ডেটা এক্সপোজার কমানো এবং নেটওয়ার্ক স্তরে পরিচয় বিচ্ছিন্ন রাখার মতো পদক্ষেপ ছাড়া পূর্ণ গোপনতা সম্ভব নয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেটা সুরক্ষাকে এখন কৌশলগতভাবে দেখা জরুরি—ধারণার ওপর নয়, বরং পরিকল্পিত ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করাই নিরাপদ।
অনলাইনে সত্যিকারের গোপন থাকতে যে ৫টি কৌশল অনুসরণ করার পরামর্শ
১. জিরো–লগ ভিপিএন ব্যবহার করুন
জিরো–লগ নীতির ভিপিএন ব্যবহার করলে আপনার আসল আইপি ঠিকানা গোপন থাকে এবং ইন্টারনেট ট্রাফিক এনক্রিপ্টেড হয়। ফলে ওয়েবসাইট, বিজ্ঞাপনদাতা কিংবা নেটওয়ার্ক প্রদানকারী কারও পক্ষেই আপনার কার্যক্রম ট্র্যাক করা সম্ভব হয় না। ভিপিএন কোম্পানি যদি ব্যবহারকারীর ডেটা না রাখে, তাহলে প্রয়োজনে তাদের কাছে দেওয়ার মতো কোনও তথ্যও থাকে না—এটিই ডিজিটাল গোপনীয়তার মূল ভিত্তি।
২. একাধিক নেটওয়ার্ক ও পরিচয় ব্যবহার করুন
একই ডিভাইস বা একই ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক থেকে সব কাজ করলে সহজেই একটি ট্র্যাকযোগ্য প্যাটার্ন তৈরি হয়। সংবেদনশীল কাজ—যেমন ব্যাংকিং, গবেষণা বা ব্যক্তিগত ব্রাউজিং—একই নেটওয়ার্ক থেকে করবেন না। প্রয়োজনে আলাদা ডিভাইস ব্যবহার করুন এবং বিভিন্ন নেটওয়ার্ক বদল করুন। এতে আপনার অনলাইন কার্যক্রম ও প্রকৃত পরিচয়ের সরাসরি সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে।
৩. ট্র্যাকার ব্লক করুন এবং অ্যাকাউন্ট–আইডেন্টিটি আলাদা রাখুন
ওয়েবসাইট ও অ্যাপ ট্র্যাকিং পিক্সেল, কুকি ও ফিঙ্গারপ্রিন্টিংয়ের মাধ্যমে আপনার আচরণগত তথ্য সংগ্রহ করে। নিয়মিত কুকি মুছুন, ট্র্যাকিং ব্লকার ব্যবহার করুন এবং গোপনীয়তা–অধিক নজর দেওয়া সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করুন। সব প্ল্যাটফর্মে একই ইমেইল বা ইউজারনেম ব্যবহার করবেন না—এতে দ্রুত পরিচয় শনাক্ত হয়ে যায়।
৪. বার্তা ও ফাইল এনক্রিপ্ট করুন
এনক্রিপশনের মাধ্যমে তথ্য এমন কোডে রূপান্তরিত হয় যা ডিকোডিং ছাড়া কেউ পড়তে পারে না। তাই বার্তা হ্যাকারদের হাতে পড়লেও তারা কিছু বুঝতে পারে না। ব্যক্তিগত কথোপকথন, নথি সংরক্ষণ এবং বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ ফাইল—সবকিছুর জন্য এনক্রিপশন প্রয়োজন। সংবেদনশীল কনটেন্টের ক্ষেত্রে অটো–ক্লাউড ব্যাকআপ বন্ধ রাখাও জরুরি।
৫. গোপনীয়তা চর্চাকে অভ্যাসে পরিণত করুন
গোপনীয়তা একদিনের কাজ নয়—এটি অভ্যাস। নিয়মিত অ্যাপ পারমিশন পর্যালোচনা, ব্যবহার না করা অ্যাপ মুছে ফেলা, পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা, ব্যক্তিগত তথ্য কম শেয়ার করা এবং ব্যক্তিগত ও গোপনীয় অ্যাকাউন্ট আলাদা রাখার মতো ছোট ছোট পদক্ষেপ দীর্ঘমেয়াদে শক্তিশালী সুরক্ষা তৈরি করে।
এসব অভ্যাস তৈরি হলে অনলাইনে আপনার দৃশ্যমানতা নাটকীয়ভাবে কমে যায় এবং সাইবার অপরাধীরা সহজে আপনাকে টার্গেট করতে পারে না।
সূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া