পাকিস্তানের আদিয়ালা কারাগার কর্তৃপক্ষ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে কারাগার থেকে সরিয়ে নেওয়া ও তাঁর মারা যাওয়ার খবরকে গুজব ও ভিত্তিহীন বলে আখ্যা দিয়েছে। গুজবে বলা হচ্ছিল, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতাকে কারাগার থেকে অন্যত্র সরানো হয়েছে।
তবে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজর বরাত দিয়ে আরব আমিরাতের সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজ জানিয়েছে, কারা কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে—তিনি এখনো আদিয়ালা কারাগারেই আছেন এবং সুস্থ আছেন।
রাওয়ালপিন্ডি কারা কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আদিয়ালা জেল থেকে তাকে সরিয়ে নেওয়ার খবর সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি পুরোপুরি সুস্থ এবং পূর্ণ চিকিৎসা সুবিধা পাচ্ছেন।’ কর্মকর্তারা আরও বলেন, তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে যে জল্পনা চলছে, তা ‘ভিত্তিহীন।’ পিটিআই প্রতিষ্ঠাতার সুস্থতা নিশ্চিত করা হচ্ছে বলেও তারা জানায়।
২০২৩ সালের আগস্ট থেকে কারাগারে থাকা ইমরান খান ক্ষমতা হারানোর পর দুর্নীতি থেকে শুরু করে সন্ত্রাসবাদ পর্যন্ত বিভিন্ন মামলার মুখোমুখি। ২০২২ সালের এপ্রিলে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়।
অন্যদিকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ দাবি করেছেন, পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা কারাগারে আগের তুলনায় অনেক আরাম পাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘তাঁর জন্য যেসব খাবার আসে, সেগুলো পাঁচতারা হোটেলেও মেলে না।’
আসিফ আরও বলেন, তাঁর কাছে টেলিভিশন আছে এবং তিনি ইচ্ছেমতো যে কোনো চ্যানেল দেখতে পারেন। তিনি বলেন, ‘তার জন্য ব্যায়াম করার মেশিনও আছে।’ এ পরিস্থিতির তুলনা করতে গিয়ে তিনি নিজের কারাবাসের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ঠান্ডা মেঝেতে ঘুমাতাম, কারাগারের খাবার খেতাম, জানুয়ারিতে গরম পানি ছাড়াই মাত্র দুইটা কম্বল ছিল।’ তখনকার সুপারিনটেনডেন্ট আসাদ ওয়ারাইচ তার সেল থেকে গিজার খুলে নিয়েছিলেন বলেও জানান তিনি।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও দাবি করেন, পিটিআই প্রতিষ্ঠাতাকে ডাবল বেড এবং ‘মখমলের গদি’ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘তাঁর উচিত জেলের লাউডস্পিকারে তাঁর ওয়াশিংটন অ্যারেনা বক্তৃতা শোনা।‘ তিনি আরও বলেন, ‘খোদাকে ভয় করো—সময় কারও হাতে থাকে না।’
এদিকে, ক্ষমতাসীন জোটের মূল পক্ষ পাকিস্তান মুসলিম লীগ–নওয়াজের (পিএমএল-এন) সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ গতকাল বুধবার দাবি করেন, ‘যারা ইমরানকে ক্ষমতায় এনেছিল, তারাই বড় অপরাধী।’
উপনির্বাচনে জয়ী আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘ইমরান খান একমাত্র অপরাধী ছিলেন না। যারা তাকে ক্ষমতায় এনেছিল, তারা আরও বড় অপরাধী, এবং তাদের সম্পূর্ণ জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত।’
২০২৪ সালের নির্বাচনের পর পিপিপির সঙ্গে জোট গঠনের মাধ্যমে পিএমএল-এন ক্ষমতায় আসার পর নওয়াজ সাধারণত নিম্নপ্রোফাইলে ছিলেন।
২০১৮ সালের নির্বাচনে পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, পিটিআই দেশটির সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল হয়ে ওঠে। মোট ২৭০টি জাতীয় পরিষদ আসনের মধ্যে ১১৫টি পায় তারা।