Image description
 
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে যে কোনো শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে ন্যূনতম মিত্র বাহিনীর ২ লাখ সদস্য প্রয়োজন। দাভোসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের এক আলোচনায় তিনি ইউরোপের প্রতি আহ্বান জানান, ইউক্রেনের সংকটে নিজেদের দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে।


জেলেনস্কি বলেন, ইউরোপকে একটি অপরিহার্য বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি বা ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে না থেকে ইউরোপকে সম্মিলিতভাবে রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে। 

তিনি উল্লেখ করেন, রাশিয়ার যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার সৈন্যদের উপস্থিতি এবং ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী কুর্স্ক অঞ্চলে লড়াই এই সংঘাতের মাত্রা বাড়িয়েছে। জেলেনস্কি সতর্ক করেন, ইউরোপীয় নেতাদের মনে রাখা উচিত, রাশিয়া থেকে তাদের দেশগুলোকে পৃথক করে এমন কোনো মহাসাগর নেই। উত্তর কোরিয়ার সৈন্যরা যে অঞ্চলে লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছে, তা দাভোস থেকে খুবই কাছে।

জেলেনস্কি শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একটি আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনীর প্রয়োজনীয়তার কথা জানান। তার মতে, মিনিমাম ২ লাখ সদস্যের একটি বাহিনী দরকার। এর চেয়ে কম হলে কোনো কাজ হবে না। তবে তিনি রাশিয়ার দাবি- ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে ৮ লাখ থেকে কমিয়ে ১ লাখ ৬০ হাজারে নামিয়ে আনার প্রস্তাবকে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে ঘোষণা করেন।  

জেলেনস্কি জোর দিয়ে বলেন, শান্তি চুক্তির প্রধান শর্ত হলো পশ্চিমা নিরাপত্তা নিশ্চয়তা। তার মতে, ন্যাটো সদস্যপদই এই নিশ্চয়তার সবচেয়ে ভালো উপায়। যদিও ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ এটি সমর্থন করলেও যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি এবং হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়ার মতো প্রো-রাশিয়ান সরকারগুলো এতে
দাভোসে জেলেনস্কি ইউরোপীয় দেশগুলোকে ড্রোন এবং আধুনিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মতো প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, রাশিয়া ইউক্রেনে ইতোমধ্যে ৬ লাখ সেনা মোতায়েন করেছে এবং ১৫ লাখ পর্যন্ত সেনা প্রস্তুত করার ক্ষমতা রাখে, যা ইউরোপের যেকোনো একক সেনাবাহিনীর চেয়ে বহুগুণ বড়।

তিনি সতর্ক করে বলেন, পুতিন যদি এই যুদ্ধে বিজয়ী হন, তবে তিনি অন্যান্য স্বাধীন দেশেও আক্রমণ করবেন। রাশিয়া বর্তমানে একটি যুদ্ধ অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হয়েছে এবং সামরিক ক্ষেত্রে ইউরোপকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। যদি তাকে থামানো না যায়, তিনি ১০ গুণ বড় একটি বাহিনী নিয়ে ফিরে আসবেন। 

জেলেনস্কি জানান, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁন এবং ব্রিটিশ বিরোধী দলীয় নেতা কিয়ের স্টারমারের সঙ্গে শান্তিরক্ষী মিশন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। স্টারমার দাভোসে বলেন, আমরা সবসময় ইউক্রেনের প্রতিরক্ষায় অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করেছি। তবে আমাদের যা করতে হবে, তা দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর হতে হবে। 

ইউক্রেনের সংকটে ইউরোপীয় দেশগুলোর দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করে জেলেনস্কি বলেন, বিশ্ব যেন ইউরোপকে অবহেলা করার সুযোগ না পায়, এজন্য ইউরোপকে নিজের যত্ন নিতে শিখতে হবে।
বিডিপ্রতিদিন