পশ্চিমা রাজনীতিতে সাম্প্রতিক সময়ে এক নতুন ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশ্বের সবচেয়ে দুই শক্তিধর লন্ডন ও নিউইয়র্কের মতো শহরগুলো এখন মুসলিম মেয়রের নেতৃত্বে।
যুক্তরাজ্যের লন্ডন সিটির মেয়র সাদিক খান এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিইউকের মেয়র জোহরান মামদানির এই জয় শুধু তাদের শহরের জন্য নয়, বরং বৈশ্বিক রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতেও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।
সাদিক খানের সাফল্য : লন্ডনের মেয়র নির্বাচনে সাদিক খানের জয় আন্তর্জাতিকভাবে সাড়া ফেলেছিল।
পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত একজন বাসচালকের সন্তান হিসেবে তার এই অর্জন যোগ্যতার জয় হিসেবে ধরা হয়।
তবে তার ইসলামিক পরিচয় কিছু অংশে শঙ্কার কারণও হয়েছিল। নির্বাচনী প্রচারণায় কনজারভেটিভ প্রতিদ্বন্দ্বী জ্যাক গোল্ডস্মিথ খানের সঙ্গে ইসলামি উগ্রবাদীদের নাম জুড়ে দেন। এই মন্তব্য ব্যাপকভাবে বিভাজনমূলক ও সমালোচিত হয়। এমনকি খানের নিজের দল লেবার পার্টির মধ্যেও অনেকে তার ধর্মীয় পরিচয়কে নির্বাচনী দুর্বলতা হিসেবে মনে করেছিলেন। কিন্তু তিনি পর পর তিনবার মেয়র নির্বাচিত হন।
জোহরান মামদানির প্রগতিশীল উত্থান: নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানির নেতৃত্বের বিষয়েও একই প্রেক্ষাপট লক্ষ্য করা যায়।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত বাবা-মায়ের সন্তান মামদানির জন্ম উগান্ডায় হলেও তিনি নিউইয়র্কে বেড়ে উঠেছেন।
মুসলিম হিসেবে তিনি নিম্নবিত্তদের আবাসন, আয়ের বৈষম্য ও সামাজিক ন্যায্যতার ইস্যুতে প্রগতিশীল কর্মসূচি নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালান।
কিন্তু তাঁর ধর্মীয় পরিচয় কিছু প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে বিতর্কের বিষয় হয়ে ওঠে।
সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো বারবার তার ধর্মকে লক্ষ্য করে অভিযোগ তোলেন। এক নির্বাচনী বিতর্কে কুয়োমো মামদানির চিন্তাধারাকে ইসলামিকভাবে ‘হারাম’ আখ্যা দেন, যা পরে মামদানির বক্তব্যে ইসলামবিদ্বেষী মন্তব্য হিসেবে চিহ্নিত হয়।
এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা : সাদিক খান ও জোহারান মামদানি—দুজনেরই জয় শুধুমাত্র স্থানীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নয়, বরং গণতন্ত্র ও বৈচিত্র্যের একটি উদাহরণ।
লন্ডনের শ্রমজীবী পাড়া থেকে উঠে আসা খান এবং নিউইয়র্কের অভিবাসী সমাজ থেকে উঠে আসা মামদানির নেতৃত্ব পশ্চিমা সমাজে মুসলিমবিরোধী বিদ্বেষের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পশ্চিমা সমাজে চ্যালেঞ্জ: ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডানপন্থী দলগুলো ইসলামবিরোধী এজেন্ডা শক্তিশালী করছে।
যুক্তরাষ্ট্রে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক সময়ে মুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার বিষয়েও কথা বলেছেন। মুসলমানদের বিপদজনক হিসেবে উপস্থাপন করা এখনো পশ্চিমা সমাজে বিরাজমান প্রবণতা।
তবুও সাদিক খান ও জোহারান মামদানি এই সব নেতিবাচক প্রবণতার বিরুদ্ধে জীবন্ত প্রতীক। তাদের নেতৃত্বই প্রমাণ করে, মুসলিম পরিচয় ও গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব পরস্পরবিরোধী নয়। উগ্র জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার এই সময়ে এই বার্তাই সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক।