‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) নবনির্বাচিত প্রতিনিধিরা দায়িত্ব গ্রহণ করলেও বুঝে পাননি ফান্ডের পূর্ণাঙ্গ হিসাব। ২০১৩ সালের আগ থেকে ২২ বছরের ফান্ডের হদিস নেই প্রশাসনের কাছে। কেন হদিস নেই, এমন প্রশ্নে গা-ছাড়া প্রশাসন।’ বুধবার (৫ নভেম্বর) রাকসু ভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রাকসুর এজিএস সালমান সাব্বির। তিনি বলেন, শপথ গ্রহণের পর গতকাল রাকসু প্রথম কার্যনির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কয়েকটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো রাকসুর তহবিলকে ব্যবহার উপযোগী করা।
রাকসুর মেয়াদকাল এক বছর উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব পাওয়ার সাথে সাথে তড়িৎ গতিতে আমাদের ইশতেহারগুলো পূরণ করতে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করি। কিন্তু এগুলো বাস্তবায়নের জন্য রাকসু তহবিলে ব্যবহার উপযোগী যে অর্থ প্রয়োজন, তা আমরা বুঝিয়ে পাইনি।’
প্রথম অধিবেশনে বিগত বছরগুলোর ব্যয়ের অডিটসহ রাকসু তহবিলের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে স্পষ্ট জানতে পারব, এমন আশা করেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রাকসুর বর্তমান সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ আমাদের সে তথ্য দিতে পারেননি। আপনারা জানেন, দীর্ঘ ৩৬ বছর রাকসু অকার্যকর থাকলেও নিয়মিতভাবে রাকসুর কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’
বিগত বছরগুলোতে রাকসুর সভাপতি এবং কোষাধ্যক্ষ ইচ্ছেমতো রাকসু তহবিলের অর্থ অনিয়মিতভাবে বিভিন্ন খাতে ব্যয় করেছেন বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। গতকালের অধিবেশনে এ অর্থ ‘কে কোথায় কীভাবে ব্যয় করেছেন এবং কীভাবে ফেরত আনা যায়’ এ সম্পর্কিত কমিটি গঠিত হয়েছে। তারা ১৫ তারিখের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করবেন। তারা কমিটির ওপর আস্থা রাখতে চান বলে জানিয়েছেন।
এজিএস সালমান সাব্বির বলেন, ‘রাকসু ফান্ডের ২০১৩ সালের আগের টাকার হিসাব দিতে পারছে না প্রশাসন। ২০১৩ সালের আগে সভাপতি, কোষাধ্যক্ষ ছিলেন, তারা কে কোন খাতে খরচ করেছেন, কে কোন জায়গায় খরচ করেছেন— ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে জবাব চাওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘টাকা যেহেতু ছাত্রদের, ওই টাকা তাদের কল্যাণেই ব্যবহার করতে হবে। কেউ যদি ভিন্ন কোনো খাতে ব্যবহার করে, সে সব সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষকে পার্সোনাল জায়গা থেকে হলেও এ টাকা ফেরত দিতে হবে।’
জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘২০১৩ সালের পর থেকে ব্যাংক স্টেটমেন্ট আছে এবং ২০২১ সাল থেকে অনলাইন হিসাব আছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ১৯৯০ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত প্রায় ২২ বছরের হিসাব নেই।’
মুজিব শতবর্ষ পালনে প্রশাসন ১২ লাখ টাকা রাকসু ফান্ড থেকে খরচ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এর আগে ৩ মেয়াদে তারা টাকা নিয়েছে, যার কোনো ধরনের হদিস নেই। যেহেতু ফান্ডের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, খুব শিগগিরই সমস্যাগুলোর সমাধান হয়ে যাবে।’
রাকসুর ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, ‘নির্বাচন হওয়ার পর থেকে আমরা এখনও পূর্ণভাবে কাজ শুরু করতে পারছি না—কারণ রাকসুর তহবিলের হিসাব আমাদের কাছে পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। গতকাল আমরা রাকসু তহবিলের অডিট কমিটি পাস করাতে পেরেছি। কিন্তু এটি আরও আগেই করা উচিত ছিল।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন যে অনুষ্ঠিত হবে, তা সবারই জানা ছিল। তাই নির্বাচনের আগেই এসব প্রস্তুতি সম্পন্ন থাকলে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা দায়িত্ব নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে কার্যক্রম শুরু করতে পারতেন। কিন্তু শুধু তহবিলের হিসাব পেতেই যদি ছয় মাস লেগে যায়, তাহলে বছরে নির্ধারিত সব কার্যক্রম আমরা কীভাবে শেষ করব? এ নিয়েই এখন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচিত হওয়ায় তহবিলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ থাকার কথা, কিন্তু তার কোনো অংশই এখনো আমরা পাচ্ছি না। ফলে শিক্ষার্থীদের আস্থা বজায় রেখে যে পরিকল্পনা রাকসু প্রতিনিধিরা হাতে নিয়েছে, তা বাস্তবায়নে এখন শঙ্কা দেখা দিচ্ছে।’
উল্লেখ্য, ১৯৮৯-৮৯ সেশনর রাকসুর ১৪তম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ৩৫ বছর বন্ধের পর গত ১৬ অক্টোবর ১৫তম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।