বাধ্যতামূলক সামরিক বাহিনীতে যোগদানের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে গাজা যুদ্ধকে ‘হলোকাস্ট’ হিসেবে নিন্দা করেছেন এক ইসরাইলি কিশোরী। এখানেই শেষ নয়, ফিলিস্তিনিদের ওপর নিপীড়নে ইসরাইলি সমাজকে সহযোগী হিসেবেও বর্ণনা করেছে সে। আর এসব অভিযোগে ওই ইসরাইলি কিশোরী এখন করুণ পরিণতির মুখোমুখী।
রোববার (২৬ অক্টোবর) থেকেই তাকে কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে বলে নিজেই জানিয়েছে ওই কিশোরী। খবর প্রেস টিভির।
ড্যানিয়েল শুল্টজ নামের ওই কিশোরী গত ২৩ অক্টোবর এক্সে দেওয়া ২৫-পোস্টের একটি থ্রেডে জানিয়েছে, তার এইসব সিদ্ধান্ত তিনি নৈতিক বাধ্যবাধকতা থেকে নিয়েছেন। কারণ এটি ‘সবচেয়ে মানবিক কাজ’।
শুল্টজ লিখেছে, ‘শিশুদেরকে অনাহারে মারা, পুরো গ্রামকে সহিংসভাবে উচ্ছেদ করা এবং বেসামরিক লোকদের নির্যাতন শিবিরে পাঠানোর মুখে এছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।’
শুল্টজ জানায় যে, সে একসময় ইয়েশ আতিদ যুব আন্দোলনের সদস্য ছিল এবং বিশ্বাস করত যে ইসরাইলি সেনাবাহিনী ‘বিশ্বের সবচেয়ে নৈতিক সেনাবাহিনী’।তবে একটি মিশ্র বোর্ডিং স্কুলে তার ফিলিস্তিনি সহপাঠীদের ওপর নির্যাতন প্রত্যক্ষ করার পর তার সেই দৃষ্টিভঙ্গি ভেঙে পড়ে।
কিশোরী উল্লেখ করেছে, সামরিক পোশাক ‘আমার সহপাঠীদের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি এবং তাদের ওপর চলমান নিপীড়নের প্রতীক’।
শুল্টজ এই ব্যাখ্যা দিয়ে ইসরাইলি সমাজ ও রাজনীতিরও নিন্দা করেছে যে, ডানপন্থি থেকে কট্টর ইহুদিপন্থি’ সমগ্র রাজনৈতিক পরিসর তথাকথিত ইসরাইলি নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিয়ে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতার শর্ত আরোপ করে। আর এ ধারণাটি সে প্রত্যাখ্যান করেছে।
তার ভাষ্যে, ‘যে সত্ত্বা তথা ইসরাইলের নিরাপত্তার জন্য অন্য মানুষদের ধ্বংস করা প্রয়োজন, তার নিরাপত্তার কোনো অধিকার নেই।
শুল্টজের মতে, ‘যেসব মানুষ অন্য মানুষের ওপর হলোকাস্ট করার জন্য নিজেদেরকে সংকল্পবদ্ধ করে, তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের কোনো অধিকার নেই।’
শুল্টজ নামের এই কিশোরী কেবল ইসরাইলি সেনাদের ওপরই নয়, বরং তাদের সমর্থনকারী নাগরিক সমাজের ওপরও সরাসরি দায় চাপিয়েছে।
তার ভাষায়, ‘গাজায় ৭৭ বছর ধরে দখলদারিত্ব এবং দুই বছর ধরে চালানো গণহত্যার পর ইসরাইলি সমাজ এখনো তার সৈন্যদের বীর হিসেবে সম্মানিত করে’।
বিষয়টি নিয়ে রীতিমত ক্ষোভ প্রকাশ করেছে কিশোরীটি। আরও লিখেছে, নাগরিক অবাধ্যতার পরিবর্তে ইসরাইলি এনজিও এবং নাগরিকরা যুদ্ধ প্রচেষ্টার জন্য একটি ‘নাগরিক মেরুদণ্ড’ তৈরি করেছে।
শুল্টজ জোর দিয়ে জানায়, এই সমস্যার মূলে রয়েছে ইহুদিবাদ, যাকে সে ‘মানসিক-বিকারগ্রস্ত জাতীয় উগ্রতাবাদ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
ইসরাইলি এই কিশোরী জোর দিয়ে জানায়, ইসরাইলের সমস্ত প্রতিষ্ঠান কয়েক দশক ধরে দখলদারিত্ব এবং বর্ণবাদের ফলে সৃষ্ট ‘হত্যা এবং রক্তপাতে গভীরভাবে জড়িত’।
‘যতক্ষণ পর্যন্ত ইহুদিবাদ তার অবিচ্ছেদ্য নীতি থেকে সরে আসছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ইসরাইলি সমাজের পুনর্বাসনের কোনো সুযোগ নেই’ বলে উল্লেখ করে কিশোরীটি।
এদিকে ইসরাইল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় গণহত্যামূলক আগ্রাসন শুরু করার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০,০০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। দুই বছর ধরে চালানো এই আগ্রাসনের অবসান হয়েছে এ মাসের শুরুতেই হামাস ও ইসরাইল একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছালে।
তবে যুদ্ধবিরতির পরও চুক্তি লঙ্ঘন করে ইসরাইল বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত রেখেছে।