
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর লীগ অব নেশন্স প্রতিষ্ঠা হলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে বিশ্বকে রক্ষা করতে ব্যর্থতা এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতার প্রেক্ষাপটই জাতিসংঘের মতো সংস্থার জন্ম হয়েছিল। তবে সংঘাত-যুদ্ধ থেকে বিশ্বকে রক্ষা, আর সার্বভৌম দেশগুলোর মধ্যে নিরাপত্তা নিশ্চিতের ভাবনা থেকে জাতিসংঘের জন্ম হলেও এরপর অনেক যুদ্ধ দেখেছে বিশ্ব। জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার আগে থেকে শুরু হওয়া সংঘাত এখনও কিছু কিছু দেশে চলমান আছে। বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধ কিংবা সংঘাত বন্ধে জাতিসংঘের কার্যকারিতা নেই, এই জায়গায় জাতিসংঘের তেমন কোনও সফলতা না থাকলেও যুদ্ধ পরবর্তী শান্তি নিশ্চিতে এবং অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে সফলতা আছে।
আজ ২৪ অক্টোবর জাতিসংঘ দিবস। ১৯৪৫ সালের এই দিনে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে জাতিসংঘ। জাতিসংঘ দিবসের পাশাপাশি একই দিনে ‘বিশ্ব উন্নয়ন তথ্য দিবস’ পালন করা হয়। জাতিসংঘের উদ্যোগে ১৯৭২ সাল থেকে প্রতি বছরের ২৪ অক্টোবর এ দিনটি বৈশ্বিকভাবে পালিত হয়। এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘শিক্ষা ভবিষ্যৎকে আকার দেয়’, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং উচ্চমানের শিক্ষার গুরুত্বকে তুলে ধরে।
জাতিসংঘ কবে প্রতিষ্ঠা হয়
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জাতিসংঘের জন্ম হলেও এটির প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর গঠিত লিগ অব নেশন্সের ব্যর্থতার কারণেই। ১৯৪১ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত বিশ্বনেতাদের একাধিক বৈঠক ও সম্মেলনে তাই নতুন আন্তর্জাতিক সংস্থা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছিল। জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে অবশ্য বলা হয়েছে—জাতিসংঘের ইতিহাস এখনও লেখা হচ্ছে, যার যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৪৫ সালে। মূলত এর সনদ চীন, ফ্রান্স, সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র এবং সিগনেটরি দেশগুলোর বেশিরভাগ অনুমোদনের পর এর যাত্রা শুরু হয়। তবে সব মিলিয়ে মূল সনদে ৫১টি দেশ সই করলেও এখন এর সদস্য সংখ্যা তিনগুণেরও বেশি।
আংশিকভাবে জাতিসংঘের সংঘাত সমাধান এবং শান্তিরক্ষা উদ্যোগের কারণে ১৯৪৫ সাল থেকে সংঘাতে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে অগণিত যুদ্ধ হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি এখনও চলছে। বিশ্লেষকদের মতে, পাঁচটি দেশের ভেটো দেওয়ার অধিকারের কারণে বিশ্বজুড়ে জাতিসংঘ বেশ কয়েকবার ব্যর্থ হয়েছে। এই পাঁচটি দেশ জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের স্থায়ী সদস্য, যাদের কোনোভাবেই সরানো যাবে না। এই দেশগুলো হচ্ছে—চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
আট দশক ধরে চলমান সংঘাতে কেমন ছিল জাতিসংঘের ভূমিকা
ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলের আগ্রাসন চলছে ১৯৪৮ সাল থেকে। জাতিসংঘের একজন তদন্তকারী ইসরায়েলের আগ্রাসনকে জাতিগত নির্মূল হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ইসরায়েল ফিলিস্তিনের বেশিরভাগ এলাকা দখলে নিলেও বর্তমানে সেখানে মার্কিন হস্তক্ষেপে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হয়েছে। আগ্রাসন বন্ধের আহ্বানসহ জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি প্রস্তাব অমান্য করে দখলকৃত জমিতে অবৈধ বসতি নির্মাণ করেছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের শক্তি প্রয়োগের নিন্দা করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র বেশ কয়েকবার ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করেছে। গাজার অভিযোগ, অক্টোবরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল এখন পর্যন্ত ৪৭ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে— যার ফলে শুধু এই সময়ের মধ্যে ৩৮ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। এখন পর্যন্ত ফিলিস্তিনে ৬৫ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছে।
কাশ্মির নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। সেটি নিরসনেও জাতিসংঘ কার্যকর কোনও ভূমিকা রাখতে পারেনি। ১৯৭৫ সালে সালে মার্কিন-ভিয়েতনাম যুদ্ধ এবং কম্বোডিয়ান গৃহযুদ্ধের সমাপ্তির পরে, খেমাররুজ শাসন কম্বোডিয়াকে একটি সমাজতান্ত্রিক দেশে পরিণত করতে অতি-মাওবাদের নীতি ব্যবহার করে। সেই শাসন ব্যবস্থায় ১৯৭৫ সাল থেকে চার বছর গণহত্যা চালিয়েছিল তৎকালীন সরকার। ভিয়েতনামের হস্তক্ষেপের ফলে খেমাররুজ শাসনের গণহত্যার অবসান ঘটে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের উদ্বেগ উপেক্ষা করে জাতিসংঘ খেমাররুজ সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল।
১৯৯১ সালে সোমালি বিদ্রোহীদের কাছে স্বৈরশাসক মোহামেদ সিয়াদ বারে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে, কয়েক দশক ধরে চলা গৃহযুদ্ধ দেশের প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। গৃহযুদ্ধ এবং দুর্ভিক্ষে আটকা পড়া লোকদের মানবিক সহায়তার সুবিধার্থে ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন। তবে সেটি তখন থেকে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করে বিশ্লেষকরা। কারণ এই সহায়তা গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে অবরুদ্ধ হয়েছে, যার ফলে জাতিসংঘের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগের অভাব ছিল এবং জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের ওপর বারবার হামলা হয়েছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়াবহ জাতিগত গণহত্যার মধ্যে একটি— রুয়ান্ডার সশস্ত্র বাহিনী এবং বিদ্রোহী রুয়ান্ডা প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্টের (আরপিএফ) মধ্যে গৃহযুদ্ধ, যা ১৯৯০ সালে শুরু হয়েছিল এবং ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। ১৯৯৪ সালে তৎকালীন হুতু-অধ্যুষিত সরকার আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ রোধ করার জন্য ১০ জন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী কর্মকর্তাকে হত্যা করেছিল। এছাড়া মাত্র তিন মাসের মধ্যে রুয়ান্ডায় হুতু বাহিনী ৮ লাখ লোককে হত্যা এবং প্রায় আড়াই লাখ নারীকে ধর্ষণ করেছিল। সেখানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন থাকলেও কোনও কাজে আসেনি।
১৯৯২ সালে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা একটি গণভোটের পরে তার স্বাধীনতা ঘোষণা করে। স্বাধীনতা ঘোষণার পরে, বসনিয়ান সার্বরা সার্বিয়ান সরকারের সহায়তায় তাদের বাহিনী দেশে জড়ো করেছিল, যার ফলে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। ১৯৯৫ সালের জুলাই মাসে স্রেব্রেনিকায় সাবেক জেনারেল রাতকো ম্লাডিচের নেতৃত্বে বসনিয়ান সার্ব সৈন্যদের হাতে প্রায় ৮ হাজার মুসলিম নিহত হয়েছিল, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ইউরোপের মাটিতে সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যা। মুসলিম ভুক্তভোগীদের অনেকে তখন জাতিসংঘ ঘোষিত নিরাপদ অঞ্চলে পালিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে তারা দেখেন যে নিরাপত্তা বাহিনী অপর্যাপ্ত এবং তাদের কাছে হালকা আগ্নেয়াস্ত্র ছিল।
সুদানে ২০০৩ সাল থেকে এখনও সংঘাত চলছে। সুদানের পশ্চিম অঞ্চল দারফুরে বিদ্রোহীরা সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান করেছিল। তখন থেকে কয়েক লাখ লোক নিহত হয়েছে। চার বছর পর জাতিসংঘ দারফুরে ২৬ হাজার সৈন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
ইরাক যুদ্ধে জাতিসংঘের ব্যর্থতা ছিল প্রাথমিকভাবে ২০০৩ সালে আক্রমণ প্রতিরোধ করতে জাতিসংঘের অক্ষমতার কারণে, যা মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের মতো স্থায়ী নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের ভেটো ক্ষমতার কারণে হয়েছিল, তারা যুদ্ধকে সমর্থন করেছিল। তার ওপর জাতিসংঘ নিজেই তার পরিদর্শন ব্যবস্থায় অনুভূত দুর্বলতার জন্য সমালোচিত হয়েছিল, যা ইরাককে অস্থিতিশীল হতে দিয়েছিল বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
এছাড়া সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ, দক্ষিণ সুদানের সংঘাত, ইয়েমেন গৃহযুদ্ধ, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সংকট এখনও চলমান আছে।
জাতিসংঘ কি আসলেই যুদ্ধ বন্ধ করাতে পারে?
জাতিসংঘের পক্ষ থেকে একটি ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে— জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের মূল কাজ কী। জাতিসংঘের মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, নিরাপত্তা পরিষদের কার্যাবলি ও ক্ষমতা জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠাকালীন নথিতে বর্ণিত হয়েছে। এটি ১৯৪৫ সালের ২৬ জুন সান ফ্রান্সিসকোতে স্বাক্ষরিত হয়েছিল, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ওপর জাতিসংঘের সম্মেলনের সমাপ্তিতে এবং ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর কার্যকর হয়েছিল।
১৫ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত নিরাপত্তা পরিষদে পাঁচটি স্থায়ী সদস্য—চীন, ফ্রান্স, রাশিয়ান ফেডারেশন, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া ১০টি অস্থায়ী আসন—যা জাতিসংঘের অন্যান্য সদস্য দেশের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে বদলাতে থাকে। নিরাপত্তা পরিষদ এমন একটি সংস্থা, যা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার প্রাথমিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এটি শান্তির জন্য হুমকি, শান্তি ভঙ্গ বা আগ্রাসনের অস্তিত্ব নির্ধারণে নেতৃত্ব দেয়।
সনদের ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদের অধীনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণ এবং কার্যকর করা জাতিসংঘের সব সদস্য দেশের জন্য বাধ্যতামূলক।
সংকট মোকাবিলা করার সময়, জাতিসংঘের সনদ দ্বারা পরিচালিত কাউন্সিল বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে পারে। সনদের ষষ্ঠ অনুচ্ছেদের অধীনে কাউন্সিল কোনও বিরোধের পক্ষগুলোকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে এটি নিষ্পত্তি করার জন্য আহ্বান জানাতে পারে এবং সমন্বয়ের পদ্ধতি বা নিষ্পত্তির শর্তাবলি সুপারিশ করতে পারে। এটি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) বিরোধ রেফারেলের সুপারিশ করতে পারে।
কিছু ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদ সনদের সপ্তম অধ্যায়ের অধীনে কাজ করতে পারে এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপের আশ্রয় নিতে পারে। শেষ অবলম্বন হিসেবে, যখন কোনও বিরোধ নিষ্পত্তির শান্তিপূর্ণ উপায়গুলো শেষ হয়ে যায়, তখন এটি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা বা পুনরুদ্ধারের জন্য সদস্য রাষ্ট্র, সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জোট বা জাতিসংঘ অনুমোদিত শান্তি কার্যক্রমের মাধ্যমে শক্তি ব্যবহারের অনুমোদন দিতে পারে।
কাউন্সিল প্রথমবারের মতো ১৯৫০ সালে কোরিয়া প্রজাতন্ত্র থেকে উত্তর কোরিয়ার বাহিনী প্রত্যাহারে সামরিক শক্তি প্রয়োগে পদক্ষেপ নেওয়ার অনুমোদন দিয়েছিল।
নিরাপত্তা পরিষদ যুদ্ধ বন্ধের সিদ্ধান্তে ব্যর্থ হলে সাধারণ পরিষদ কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে
সাধারণ পরিষদের ১৯৫০ সালের রেজুলেশন ২৭৭-এ (ভি) অনুসারে, যা ব্যাপকভাবে ‘শান্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ’ নামে পরিচিত, যদি নিরাপত্তা পরিষদ তার পাঁচটি ভেটোদানকারী স্থায়ী সদস্যের মধ্যে সর্বসম্মতির অভাবের কারণে কাজ করতে অক্ষম হয়, তবে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা বা পুনরুদ্ধারের জন্য সম্মিলিত পদক্ষেপের জন্য জাতিসংঘের বৃহত্তর সদস্য পদকে সুপারিশ করার ক্ষমতা সাধারণ পরিষদের আছে। উপরন্তু, নিরাপত্তা পরিষদের ৯ জন সদস্য বা পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুরোধ আসলে সাধারণ পরিষদ জরুরি বিশেষ অধিবেশনের বৈঠক করতে পারে। নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশনগুলোর বিপরীতে সাধারণ পরিষদের রেজুলেশন অবাধ্যতামূলক, অর্থাৎ সদস্য দেশগুলো সেগুলো বাস্তবায়ন করতে বাধ্য নয়।
ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ নিয়েও আছে সমালোচনা
নিরাপত্তা পরিষদে সদস্যদের ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা নিয়ে বরাবরই জাতিসংঘের সমালোচনা হয়ে আসছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্যের ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা সমালোচকরা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে দেখেন। অপরদিকে সমর্থকরা যুক্তি দেন—এটি সংঘাত রোধ এবং ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য একটি প্রয়োজনীয় হাতিয়ার। এর ব্যবহারের বিরুদ্ধে যুক্তিগুলো প্রায়শই এমন ক্ষেত্রে নির্দেশ করে— যেখানে এটি মানবিক সংকটে পদক্ষেপ আটকাতে ব্যবহৃত হয়েছে। যেখানে ভেটো রাষ্ট্র সংঘাতের একটি পক্ষ হয়ে জবাবদিহিকে হ্রাস করে। সমালোচকরা প্রায়শই ভেটো ক্ষমতার সংস্কারের আহ্বান জানান। যেমন- গণহত্যার মতো পরিস্থিতিতে ভেটো ব্যবহার সীমাবদ্ধ করা বা স্বচ্ছতা বাড়ানো।
সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘জাতিসংঘ অনেক কাজ করছে, অনেক প্রয়োজনীয় কাজ ভালো করছে। তবে সংঘাত বন্ধে সবচেয়ে বেশি ব্যর্থ। সাফল্য নাই একেবারে বললে ভুল হবে, তবে সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতা বেশি।’’
তিনি বলেন, ‘‘ব্যর্থতার একটা বড় কারণ হচ্ছে— সংঘাতগুলো সৃষ্টি হচ্ছে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রের মাধ্যমে। সদস্য রাষ্ট্র না চাইলে জাতিসংঘের কিছু করার ক্ষমতা নেই। বিশেষ করে যে পাঁচটি স্থায়ী সদস্য আছে, তাদের ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা আছে। তাদের কারণে অনেক কিছুই করতে পারে না জাতিসংঘ। তবে সাফল্যও আছে। যেমন- যেখানে যুদ্ধবিরতি হবে, সেখানে জাতিসংঘ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষায় অবদান রাখে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সংঘাত যখন বেঁধে যায়, সেটা ঠেকাতে তাদের বড় কোনও অবদান নেই। সংঘাত চলতে চলতে একটা সময় যখন উভয় পক্ষ ক্লান্ত হয়ে যায়, তখন জাতিসংঘ মোটামুটি একটা ভূমিকা রাখতে পারে।’’