
তহবিলের ঘাটতিজনিত কারণে ম্যালেরিয়াবিরোধী বৈশ্বিক অভিযান গতি হারিয়ে ফেলেছে। এই সংকট অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্বজুড়ে বড় হুমকি হিসেবে দেখা দেবে ম্যালেরিয়া।
ম্যালেরিয়া, এইডস এবং যক্ষা রোগের গবেষণা ও বিস্তার রোধে তহবিলদাতা আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফান্ড টু ফাইট এইডস, টিউবারকুলাসিস অ্যান্ড ম্যালেরিয়া-এর নির্বাহী পরিচালক পিটার স্যান্ডস এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন। গতকাল বুধবারে এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, “বর্তমানে ম্যালেরিয়াবিরোধী বৈশ্বিক অভিযানে যে তহবিল সংকট চলছে, তা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে এই রোগে মৃতদের সঙ্গে বাড়তি আরও ৯ লাখ ৯০ হাজার জন যুক্ত হবে এবং নতুন এই মৃতদের মধ্যে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের সংখ্যা থাকবে কমপক্ষে ৭ লাখ ৫০ হাজার।”
বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দাতা দেশগুলো ম্যালেরিয়াবিরোধী অভিযানে অর্থ প্রদান অনেক কমিয়ে দিয়েছে। এর ফলাফল আমরা চলতি বছরেই দেখতে পাচ্ছি। গত বছর বিশ্বে ম্যালেরিয়ায় যত মৃত্যু হয়েছে, চলতি বছর মৃতদের সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি।”
“আমাকে যদি কেউ এখন জিজ্ঞেস করে, এইডস-যক্ষা-ম্যালেরিয়া— এই তিন রোগের মধ্যে বর্তমানে কোনটির অবস্থা সবচেয়ে খারাপ; তাহলে আমি নির্দ্বিধায় ম্যালেরিয়ার নাম বলব।”
প্রসঙ্গত, ম্যালেরিয়া একটি প্রাণঘাতী রোগ। প্লাজমোডিয়াম নামের এক প্রকার এককোষী পরজীবী প্রাণী এই রোগের জন্য দায়ী। তবে এই প্রাণীটি সরাসরি মানুষের দেহে প্রবেশ করতে পারে না। শুধুমাত্র এনোফিলিস মশার মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করতে পারে প্লাজমোডিয়াম। এনোফিলিস মশা এই রোগের প্রধান এবং একমাত্র বাহক। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, কিছু সময় পর পর জ্বর ছেড়ে গিয়ে আবার ওঠা, ক্লান্তি, মাথাব্যাথা ও বমিবমি ভাব এই রোগের প্রধান উপসর্গ। দ্রুত চিকিৎসার আওতায় না আনা হলে অনেক সময় রোগীর মৃত্যু ঘটে।
এক সময় এশিয়া, আফ্রিকা ও উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলে প্রতি বছর বহু মানুষের মৃত্যু হতো ম্যালেরিয়ায়। বর্তমানে অনেকাংশে কমে এলেও এখনও বিশ্বে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় লাখ লাখ মানুসের। জাতিসংঘের বৈশ্বিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বিষয়ক অঙ্গসংস্থা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে গড়ে ৫ লাখ ৯৭ হাজার মানুষ মারা যায় ম্যালেরিয়ায়। এই মৃতদের অধিকাংশই আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের।
শীর্ষনিউজ