
রাশিয়ার কাছ থেকে জব্দকৃত সম্পদ ব্যবহার করে ইউক্রেনকে অর্থ সহায়তা দেওয়ার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পরিকল্পনায় অংশ নিচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র। ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে সোমবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বৈঠকের সময় মার্কিন কর্মকর্তারা ইউরোপীয় সহকর্মীদের জানিয়েছেন যে, রুশ সম্পদ বাজেয়াপ্তের এমন পদক্ষেপ বাজার স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
এই অবস্থান ইইউর জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, রাশিয়ার সম্পদ ব্যবহারের বিষয়ে জি৭–এর মধ্যে ঐকমত্য গঠনের চেষ্টা চালিয়ে আসছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ জব্দ করে। এর মধ্যে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ইউরো (প্রায় ২১৩ বিলিয়ন ডলার) রয়েছে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসভিত্তিক ক্লিয়ারিংহাউস ইউরোক্লিয়ার–এর নিয়ন্ত্রণে। ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্ররা ইতিমধ্যে এসব তহবিল থেকে অর্জিত রাজস্ব ব্যবহার করছে কিয়েভকে সহায়তার জন্য।
সাম্প্রতিক সময়ে ইইউ একটি নতুন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছে, যার আওতায় ইউক্রেনকে প্রায় ১৪০ বিলিয়ন ইউরো (প্রায় ১৬৩ বিলিয়ন ডলার) ‘ক্ষতিপূরণ ঋণ’ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই ঋণের জামানত হিসেবে ব্যবহার করা হবে রাশিয়ার স্থগিত সম্পদ। যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির ক্ষতিপূরণ হিসেবে রাশিয়া যদি ভবিষ্যতে অর্থ পরিশোধ করে, তবেই ইউক্রেন ওই ঋণ পরিশোধে বাধ্য থাকবে— ফলে কার্যত এটি রাশিয়ার সম্পদ বাজেয়াপ্তের সমতুল্য হবে।
প্রস্তাবটির পক্ষে আছে জার্মানি, ফ্রান্স ও পূর্ব ইউরোপের কয়েকটি দেশ। তবে বেলজিয়াম শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বার্ট দে ওয়েভার স্পষ্ট করেছেন— এই উদ্যোগ থেকে সৃষ্ট দায় যদি হয়, তা সব সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ভাগ হতে হবে, শুধু বেলজিয়ামের নয়।
পরিকল্পনার সমর্থকরা দাবি করছেন, এটি সরাসরি জব্দ নয় বরং একটি সাময়িক অর্থনৈতিক পদক্ষেপ, যা ভবিষ্যতের শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে রাশিয়ার ওপর চাপ তৈরি করবে।
তবে মস্কো এমন উদ্যোগকে ‘চুরি’ হিসেবে বর্ণনা করেছে এবং এর প্রতিক্রিয়ায় পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। অন্যদিকে, আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টিন লাগার্দসহ আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন— রাশিয়ার সম্পদ বাজেয়াপ্ত বা বন্ধক রাখার এই পদক্ষেপ ইউরোপীয় আর্থিক ব্যবস্থার প্রতি বৈশ্বিক আস্থা নষ্ট করতে পারে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বড় ধরনের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে।
সূত্র: আরটি