Image description

বিহারের বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্যজুড়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রে আসাদউদ্দিন ওয়াইসির দল এআইএমআইএম। রোববার দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে ২৫ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে, যাদের বেশিরভাগই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা থেকে নির্বাচিত। 

 

ওয়াইসির দলের বক্তব্য, তারা এবার ‘বঞ্চিতের কণ্ঠস্বর’ হতে চায় এবং এই তালিকা তৈরি হয়েছে বিহারের মাটির বাস্তবতার প্রতিফলন হিসেবে। 

দলের প্রকাশিত তালিকায় দেখা যাচ্ছে সিওয়ান থেকে মোহাম্মদ কাইফ, গোপালগঞ্জ থেকে আনাস সালাম, কিশনগঞ্জ থেকে অ্যাডভোকেট শামস আগাজ, মধুবনী থেকে রশিদ খলিল আনসারি ও আরারিয়া থেকে মোহাম্মদ মনজুর আলমের মতো নাম। 

রাজনৈতিক দিক থেকে এআইএমআইএম-এর এই পদক্ষেপ একাধিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, মহাগঠবন্ধনের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে সংখ্যালঘু ভোটের একাংশকে টানার চেষ্টা। 

দ্বিতীয়ত, এনডিএ ও ইন্ডিয়া ব্লকের দ্বিমেরু রাজনীতির মাঝখানে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেওয়া। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বাস্তবে ওয়াইসির দল কি রাজ্য রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারবে? 

২০২০ সালের নির্বাচনে সীমাঞ্চল অঞ্চলে একটিমাত্র আসনে জয় পাওয়ার পর থেকেই দলটির প্রভাব সীমিত ছিল। তবে ওই জয়ের প্রতীকী মূল্য অনেক। এবার প্রায় একই অঞ্চলে জোর দিচ্ছে তারা। 

এর মানে ওয়াইসি জানেন কোথায় তার শ্রোতা, কোথায় তার বার্তা প্রতিধ্বনিত হয়। অন্যদিকে কংগ্রেস ইতিমধ্যে ৪৮ জন প্রার্থীর প্রথম তালিকা এবং ৫টি আসনের দ্বিতীয় তালিকা ঘোষণা করেছে। তবু মহাগঠবন্ধনের ভেতর আসন বণ্টন নিয়ে বিরোধ স্পষ্ট। 

মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিনে আরজেডি ও কংগ্রেসের “বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই” বাস্তবে বিরোধকেই চিহ্নিত করছে। এই ফাঁকেই ওয়াইসির মতো দলগুলির জন্য সুযোগ তৈরি হচ্ছে। কারণ সংখ্যালঘু ভোট যত ভাগ হবে, এনডিএর সম্ভাবনা তত বাড়বে। 

অনেক বিশ্লেষকের মতে, বিহারের এই ভোটে ওয়াইসি ‘কিংমেকার’ নন, কিন্তু ‘কিং-ব্রেকার’ হতে পারেন। অর্থাৎ, কয়েকটি আসনে ভোট ভাগ করে তিনি বিরোধী জোটকে দুর্বল করতে পারেন। প্রশান্ত কিশোরের জনসুরাজ মঞ্চও এবার রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ আনছে। 

পিকে-র দল এখন তরুণ ও শিক্ষিত ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে, যাদের অনেকে প্রচলিত রাজনীতিতে বিমুখ। এই বহুমাত্রিক প্রতিযোগিতার মধ্যে ভোটের ফলাফল হবে অনিশ্চিত, আর সেখানেই ওয়াইসির রাজনীতি নিজের জায়গা তৈরি করতে পারে। 

তার দলের বার্তা সরল—‘আমরা ধর্ম নিয়ে নয়, অধিকার নিয়ে কথা বলি।’ তবে ইতিহাস বলছে, ওয়াইসির দল প্রায় সবসময় বিজেপি-বিরোধী ভোটেই প্রভাব ফেলে, ফলে পরোক্ষে এনডিএ লাভবান হয়। 

তাই বিরোধী শিবিরের উদ্বেগ বাড়ছে। বিহারের রাজনৈতিক তাপমাত্রা এখন বাড়ছে দিনে দিনে, আর এই উত্তাপের কেন্দ্রে রয়েছেন হায়দরাবাদের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়াইসি, যিনি বলছেন, “এই রাজ্যেও আমরা প্রমাণ করব, দরিদ্র ও সংখ্যালঘুদের কেউ আর অবহেলা করতে পারবে না।”