Image description

বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় তুর্কি ঐতিহাসিক ড্রামা সিরিজ ‘কুরলুস উসমান’ এবার এক অনন্য প্রভাব ফেলেছে দর্শকের জীবনে। স্কটল্যান্ডের এক নারী এই ড্রামাটি দেখে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহ এবং ইসলামী সংস্কৃতির বর্ণনায় তৈরি এই সিরিজটি নির্মাণ করেছে বোজদাগ ফিল্ম।


তুর্কি সংবাদমাধ্যম ডেইলি সাবাহ ৭ অক্টোবর এক প্রতিবেদনে জানায়, বোজদাগ ফিল্মের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে- স্কটল্যান্ডের জুলিয়েটা লোরেঞ্জা মার্টিনেজ নামের ওই নারী ‘কুরলুস উসমান’ দেখার পর তুরস্কের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ইসলামের প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হন। এই আগ্রহ থেকেই তিনি ইসলামের বিষয়ে গবেষণা শুরু করেন, যা পরবর্তীতে তাকে মুসলিম হতে অনুপ্রাণিত করে।


বার্তাসংস্থা আনাদোলুকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মার্টিনেজ বলেন, “করোনা মহামারির সময় আমি তুর্কি টিভি সিরিজ দেখতে শুরু করি। তখন ‘কুরলুস উসমান’-এর গল্প, ইসলামের শিক্ষা, এবং ওসমানীয় ইতিহাস আমাকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। আমি এর আগে ইসলাম সম্পর্কে এত কিছু জানতাম না।”
তিনি আরও জানান, এসব অনুপ্রেরণাই তাকে কোরআন পড়তে উদ্বুদ্ধ করে, এবং দুই বছর পর তিনি শাহাদা পাঠ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। মুসলিম হওয়ার পর মার্টিনেজ তুরস্ক সফর করেন। সেখানে তিনি ইস্তাম্বুলে বোজদাগ ফিল্মের শুটিং সেট, ড্রামাটির দৃশ্যধারণের স্থান, এবং সিরিজে প্রদর্শিত কায়ি উপজাতি ক্যাম্প ঘুরে দেখেন। নিজের এই সফরকে তিনি জীবনের এক ‘আবেগঘন অভিজ্ঞতা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।


মার্টিনেজ বলেন, “আমি যেন নতুন জীবন পেয়েছি। ইসলাম আমাকে শান্তি, ভালোবাসা ও উদ্দেশ্য দিয়েছে। আমি এ জীবনকে সত্যিই ভালোবাসি।” ‘কুরলুস উসমান’ সিরিজটি ইতিমধ্যেই তুরস্কের বাইরে বহু দেশে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অটোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা, তুর্কি সংস্কৃতি ও ইসলামী ইতিহাসের দৃঢ় উপস্থাপনায় এটি বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সিরিজটি বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক দেশে প্রচারিত হচ্ছে।
তুর্কি সিরিজের জনপ্রিয়তার রহস্য

বিশ্বজুড়ে তুমুল জনপ্রিয় তুর্কি টেলিভিশন সিরিজ। মধ্যপ্রাচ্য থেকে লাতিন আমেরিকা এবং ইউরোপ পর্যন্ত, তুর্কি নাটকগুলো স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে আধিপত্য বিস্তার করেছে এবং প্রতিদিন নতুন ভক্তদের আকৃষ্ট করছে। সম্প্রতি ঙএগ চরপঃঁৎবং-এর বিশেষ অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে গোল্ডেন গ্লোব বিশেষ অনুষ্ঠানে।


তুরস্কের সিরিজগুলো জনপ্রিয় হওয়ার পর দেশটির পর্যটন শিল্পেও ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ঐতিহাসিক উসমান সাম্রাজ্যের গল্প নিয়ে তৈরি সিরিজগুলো দেখে তুরস্ক ভ্রমণে আগ্রহী পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। তারা তুরস্কে কালের সাক্ষী হয়ে থাকা উসমানী সাম্রাজ্যের স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলো দেখে পুলকিত হচ্ছেন।


'কুরুলুস: ওসমান' এবং 'লাস মিল ইয় উনা নোচেস' এর মতো সিরিজগুলো খুবই জনপ্রিয়। এগুলো তুর্কি টেলিভিশনের মাধ্যমে তুরস্কের সাংস্কৃতিক রপ্তানিকে সমৃদ্ধ করেছে দারুণভাবে।


২০২৪ সালে রাশিয়ান দর্শকদের মধ্যে 'কুরুলুস: ওসমান' একটি উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছে। উসমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা প্রথম উসমানের জীবন নিয়ে নির্মিত এই ঐতিহাসিক সিরিজটি রুশ দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করেছে। নাটকটি ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ যুগের প্রাণবন্ত চিত্রায়ণ করেছে, যা চরিত্রগুলোর গভীর বিকাশের সাথে সংযুক্ত। রুশ দর্শকরা তুর্কি ঐতিহাসিক কাহিনীগুলোর আবেগময় নাটকীয়তা, সংলাপ এবং তুরস্কের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যবাহী সম্প্রীতির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন।


এছাড়া, লাতিন আমেরিকাও তুর্কি টেলিভিশনকে উষ্ণ স্বাগত জানিয়েছে, যা দর্শক এবং নির্মাতাদের উভয়ের জন্যই চমকপ্রদ। আবেগের তীব্রতা এবং সম্পর্কযুক্ত কাহিনী লাতিন আমেরিকার দর্শকদের হৃদয়ের কাছে পৌঁছেছে, যারা প্রায়ই তুর্কি নাটকগুলোকে তাদের প্রিয় টেলেনোভেলাসের সাথে তুলনা করেন। এশিয়ার দেশগুলোতেও দারুণ জনপ্রিয় এই সিরিজগুলো। যার মধ্যে আছে বাংলাদেশও। গেল প্রায় এক দশক ধরেই এ দেশে সুলতান সুলেমান সিরিজের হাত ধরে খুবই জনপ্রিয়তা তুরস্কের নাটকগুলো। এরপর থেকে নিয়মিতই বাংলায় ডাবিং করে একের পর এক তুর্কি সিরিজ প্রচার চলছেই।
তুর্কি নাটকগুলো বিশ্বজুড়ে এত জনপ্রিয় কেন? একটি মূল কারণ হলো তাদের ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার মধ্যে সঠিক ভারসাম্য। এগুলো প্রায়শই সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ কিন্তু বৈশ্বিকভাবে বোঝা যায় এমন কাহিনী উপস্থাপন করে, যেখানে প্রেম, পরিবার, মর্যাদা এবং ন্যায়ের মতো থিমগুলো কেন্দ্রীয় বিষয়। তুর্কি উৎপাদনগুলো তাদের উচ্চ উৎপাদন মানের জন্যও পরিচিত। যেখানে নয়নাভিরাম দৃশ্যায়ন, শক্তিশালী অভিনয় আন্তর্জাতিক নাটকগুলোকে চ্যালেঞ্জ করে এগিয়ে যাচ্ছে।


তুর্কি নাটকগুলোর বিদেশে সাফল্য অস্বীকার করার উপায় নেই এবং উৎপাদন সংস্থাগুলো এই স্বীকৃতি অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছে। যার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি লন্ডনের গোল্ডেন গ্লোব বিশেষ অনুষ্ঠানে তুরস্কের সিরিজ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ওজিএম পিকচার্স প্রশংসিত হয়। এ-র প্রতিষ্ঠাতা অনূর গ্যুভেনাতাম নিজেও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ১৩ অক্টোবর সোহো মিউস হাউসে অনুষ্ঠিত হওয়া এই অনুষ্ঠানে গোল্ডেন গ্লোবের সভাপতি হেলেন হোহনে এবং অনূর গ্যুভেনাতাম একসাথে অতিথিদের স্বাগত জানান। এই সন্ধ্যায় তুর্কি সিরিজগুলো কীভাবে বিশ্ব মঞ্চে জায়গা করে নিচ্ছে সে নিয়ে একটি প্রদর্শনী হয়।


হেলেন হোহনে মঞ্চে অনূর গ্যুভেনাতামকে তুর্কি বিনোদন শিল্পের একজন অগ্রদূত হিসেবে বর্ণনা করেন। গ্যুভেনাতাম তার বক্তৃতায় জানান, তার ওজিএম পিকচার্স এখন ইংরেজি ভাষার কন্টেন্ট তৈরিতে মনযোগ দিয়েছে। ইউরোপ আমেরিকার বাজার ধরতেই তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছে। আগামী সপ্তাহে তিনি নিউ ইয়র্কে আমেরিকান তুর্কি সোসাইটির একটি গালা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। সেখানে তিনি মার্কিন বাজারে তুর্কি টিভি সিরিজের আরও প্রসার ঘটানোর পরিকল্পনা নিয়ে হাজির হবেন।


উল্লেখ্য, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তুর্কি টেলিভিশন সিরিজের জনপ্রিয়তা এবং সফলতা ক্রমবর্ধমান। তাদের অনন্য গল্প বলার শৈলী, আবেগের গভীরতা এবং উচ্চ উৎপাদন মান আন্তর্জাতিক দর্শকদের হৃদয় জয় করেছে।
শীর্ষনিউজ