Image description

তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট কায়েস সাঈদ যিনি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেছেন এবং প্রধান বিরোধী দল আন নাহদার নেতাকর্মীদের গণ-গ্রেফতার ও দমন-পীড়ন চালিয়েছিলেন, সেই তার বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া সাবের বিন চৌচান নামের এক এক্টিভিস্টকে ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) চৌচানের আইনজীবী ওসামা বাসুলজা সংবাদমাধ্যমকে ক্ষমা প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর পক্ষ থেকে সমালোচনার ঝড় উঠায় কর্তৃপক্ষ সাবের বিন চৌচানকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছে। তার জন্য সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। গতকাল রাতেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।কারাগার থেকে বেরিয়ে তিনি তার পরিবারের সাথে ছিলেন।

তার ভাই জামাল চৌচান সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছেন যে, তার ভাই সাবের চৌচানকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

অপরদিকে মানবাধিকার গোষ্ঠী অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও এক বিবৃতিতে বলেছে যে, ফেসবুক এক্টিভিস্ট সাবের চৌচানকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্টের সাধারণ ক্ষমা পেয়ে মৃত্যুদণ্ড থেকে তিনি নিষ্কৃতি পেয়েছেন।

চৌচানের আইনজীবী ওসামা বাসুলজা সংবাদমাধ্যমকে আরো জানান, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে তার মক্কেল সাবের চৌচানকে একটি ফেসবুক পোস্টের কারণে গ্রেফতার করেছিলো প্রেসিডেন্ট কায়েস সাঈদের স্বৈরাচারী সরকার। গত বুধবার (১ অক্টোবর) তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় দেশের পূর্বাঞ্চলের নাবেউল আদালত। গত শুক্রবার এর বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে জানানো হয় যে, চৌচান আপিল প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এর পরপরই প্রেসিডেন্টের সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা আসে।

তিনি আরো জানান, তার বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট কায়েস সাঈদ, বিচার মন্ত্রী ও বিচার বিভাগকে অপমান এবং মিথ্যা সংবাদ ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছিলো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমমে দেওয়া তার কিছু পোস্টকে সরকার বিরোধী ও উস্কানিমূলকও সাব্যস্ত করা হয়েছিলো।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২৫ জুলাই তিউনিসিয়ার নব্য স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট কায়েস সাঈদ তার প্রধানমন্ত্রী হিশাম মাশিশিকে প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসে ডেকে নিয়ে ক্ষমতাচ্যুতিতে বাধ্য করেন। সরকার ভেঙ্গে দিয়ে সংসদ বাতিল করে দেন এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নিজ কাঁধে তুলে নেন। সংসদ, রাষ্ট্রপতি ও সরকারি ভবন এলাকাগুলো মিলিটারি ট্যাংক দিয়ে ঘিরে ফেলেন।

তিউনিসিয়ায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা আল জাজিরার অফিসেও অভিযান চালান এবং দেশটির জাতীয় টেলিভিশনের প্রধানকে বরখাস্ত করেন। ২৬ জুলাই দেশজুড়ে ১ মাসের কারফিউও জারি করেছিলেন।

তৎকালীন সরকারের প্রধান বিরোধী দল আন নাহদার প্রধান ও সংসদের স্পিকার রশিদ আল ঘানুশী কায়েস সাঈদের এধরণের কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করে একে বিপ্লব এবং সংবিধান বিরুদ্ধ কার্যক্রম বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। যার প্রেক্ষিতে তাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা শুরু হয়। জিজ্ঞাসাবাদের নামে সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে বিভিন্ন সময় তুলে নিয়ে গিয়ে আটক রাখা হয়। ডজন খানেক মামলা দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের এপ্রিলে পরিশেষে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

ইসলাম সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিতর্কিত এই বর্ষীয়ান রাজনীতিকের বন্দীদশা এখনো চলমান।

স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট কায়েস সাঈদ ঘানুশীর দল আন নাহদাকে তিউনিসিয়ার নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করেন। তার বিরুদ্ধে দূর্নীতি, অর্থ-পাচার ও ইরাক এবং সিরিয়ার ইসলামী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তার অভিযোগ করে থাকেন।

তার ভাষ্যমতে, রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে সংসদ ভেঙ্গে দেওয়াকে সংসদের সর্বশেষ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আন-নাহদা অভ্যুত্থান বলে অভিযোগ করে থাকে।

এমনকি বিশেষ ক্ষমতাকে অভ্যুত্থানের নাম দিয়ে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলতে নিরাপত্তা বাহিনীদেরও উসকানি দিচ্ছে বলে অভিযোগ আরোপ করেন ঘানুশী ও তার দলের বিরুদ্ধে।

সূত্র: আল জাজিরা