Image description

জাঁকজমকপূর্ণ রাজকীয় আতিথেয়তা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বুধবার বৃটেন সফর শুরু করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট হিসেবে লন্ডনে এটি তার দ্বিতীয় সফর। ট্রাম্পের এই সফর ঐতিহাসিক সফর বলে অভিহিত করেছে পশ্চিমা মিডিয়াগুলো। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের সফরকে কেন্দ্র করে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বৃটেন সরকার। কেননা, দেশটির বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছে গণমাধ্যমটি। এদিকে এই সফরে প্রযুক্তি খাতে বিপুল বিনিয়োগের ঘোষণা এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর করার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

রয়টার্স বলছে, লন্ডনের অদূরে অবস্থিত বার্কশায়ার কাউন্টিতে অবস্থিত উইন্ডসর প্রাসাদে যান ট্রাম্প ও তার স্ত্রী মেলানিয়া। এটি বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো ও বৃহত্তম সচল দুর্গ। প্রায় ১০০০ বছর ধরে এটি বৃটিশ রাজপরিবারের বাসস্থান। ট্রাম্পকে বরণ করতে এখানে রাজকীয় লাল গালিচা সংবর্ধনা, ঘোড়ায় টানা গাড়ির শোভাযাত্রা, বন্দুক স্যালুট, সামরিক বাহিনীর ফ্লাইপাস্ট এবং এক রাজকীয় ভোজসভার আয়োজন করা হয়েছে। বৃটিশ সরকার জানিয়েছে, এটি জীবন্ত ইতিহাসে কোনো রাষ্ট্রীয় সফরের জন্য সবচেয়ে বড় সামরিক আনুষ্ঠানিকতা।

ট্রাম্প নিজেকে ‘রাজতন্ত্র-অনুরাগী’ হিসেবে পরিচয় দেন। প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নন, বরং প্রথম কোনো নির্বাচিত রাজনীতিবিদ হিসেবে দুইবার বৃটিশ সম্রাটের আমন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় সফরে বৃটেন গিয়েছেন ট্রাম্প। যা নিয়ে তিনি বেশ উচ্ছ্বসিত। বৃটেনে পৌঁছানোর পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তিনি বৃটেনকে ভালোবাসেন।  কেননা, এটি তার কাছে বিশেষ একটি জায়গা। 
বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার ট্রাম্পের এই ভালোবাসাকে কাজে লাগিয়ে দুই দেশের বিশেষ সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করতে চাইছেন। তার সরকার অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর করা, শত শত কোটি ডলারের বিনিয়োগ নিশ্চিত করা, শুল্ক নিয়ে আলোচনা এবং ইউক্রেন ও ইসরাইল ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ওপর চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করবে। ইতিমধ্যে এই সফরের ফলস্বরূপ দুই দেশের মধ্যে একটি নতুন প্রযুক্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর আওতায় মাইক্রোসফট, এনভিডিয়া, গুগল এবং ওপেনএআই-এর মতো সংস্থাগুলো আগামী কয়েক বছরে বৃটেনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং বেসামরিক পারমাণবিক শক্তিতে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

শুল্ক নিয়ে আরও অগ্রগতির আশা করছেন স্টারমার। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস ছাড়ার সময় ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, বাণিজ্যিক আলোচনার ওপর জোর দেবেন তিনি। কেননা, এর মাধ্যমে বৃটেন চুক্তিগুলো আরও পরিমার্জন করার চেষ্টা করবে। তিনি আরও বলেন, তারা (বৃটেন) আরও ভালো চুক্তি পেতে চায়, তাই আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলবো। কিন্তু স্টারমার যতই রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে ট্রাম্পকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করুন না কেন, তার সামনে বেশ কিছু বিপদ আছে। জনমত জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্প বৃটেনে খুব অজনপ্রিয়। স্টারমার নিজেও তার নিজের সমর্থন এবং অর্থনৈতিক সংকটের কারণে চাপের মুখে আছেন। তাই তাকে দেখাতে হবে যে, রাজকীয় এই কৌশল ফলপ্রসূ হচ্ছে।

প্রয়াত যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টাইন সম্পর্কিত অস্বস্তিকর প্রশ্নও সামনে আসতে পারে। গত সপ্তাহে স্টারমার এপস্টাইনের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কারণে পিটার ম্যান্ডেলসনকে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বৃটেনের রাষ্ট্রদূত পদ থেকে সরিয়ে দেন। এটি স্টারমার এবং ট্রাম্পÑ উভয়ের জন্যই প্রশ্নের জন্ম দিতে পারে। 

উইন্ডসরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও, মঙ্গলবার সেখানে বিক্ষোভ হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, বিক্ষোভ থেকে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছেন তারা। উইন্ডসর দুর্গের একটি টাওয়ারে ট্রাম্পের পাশে এপস্টাইনের ছবি প্রদর্শন করেছে বিক্ষোভকারীরা। যদিও সে সময় ট্রাম্প উইন্ডসরে ছিলেন না।

এদিকে বুধবারও লন্ডনে ট্রাম্পবিরোধী বৃহৎ বিক্ষোভ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যার জন্য ১৬০০ পুলিশ অফিসার মোতায়েন করা হয়েছে। এই সফর নিয়ে সাধারণ জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ ট্রাম্পের সফরে ক্ষুব্ধ, আবার কেউ এটিকে স্মার্ট রাজনীতি এবং বৃটেনের জন্য ভালো মনে করছেন।