Image description

দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাত এবং লন্ডনে উপহার পাওয়া দুটি ফ্ল্যাটের তথ্য গোপন করায় ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন বৃটেনের সিটি এবং অর্থমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক। তার আরেকটি পরিচয়- তিনি বাংলাদেশের পতিত সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি এবং শেখ রেহানার মেয়ে।

বৃটেনের মিডিয়াগুলোতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, টিউলিপ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ দুই ব্যক্তির কাছ থেকে পাওয়া উপঢৌকনের তথ্য গোপন করেছেন। যার একটি বোন আজমিনার নামে দেয়া হলেও সেটিও ব্যবহার করেছেন তিনি।

এছাড়াও বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর শাসনামলের সঙ্গে জড়িত সম্পদ ব্যবহার এবং তা পাওয়ার অভিযোগে পদত্যাগ করেছেন বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যম ব্লুমবার্গ। 

এতে বলা হয়েছে, টিউলিপের মন্ত্রিত্ব ছাড়ার বিষয়ে তার লেখা চিঠি প্রকাশ করেছেন বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার। সেখানে টিউলিপ বলেছেন- ‘এটা স্পষ্ট যে অর্থমন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে আমার ভূমিকা অব্যাহত রাখা সরকারের কাজে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। তবুও আমি আপনাকে (প্রধামন্ত্রীকে) আশ্বস্ত করতে চাই আমি সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করেছি।’ 

টিউলিপের খালা শেখ হাসিনার শাসনামলে আত্মসাত হওয়া অর্থের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ থেকে লাভবান হওয়ার অভিযোগ ওঠার পর তিনি তার সরকারের আর্থিক পরিষেবা সংক্রান্ত দপ্তরে কাজ করছিলেন। তবে এতে তীব্র চাপের মুখে ছিলেন তিনি। বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট খাতের নীতি, ব্যাংকিং, ফিনটেক, পুঁজিবাজার এবং আর্থিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছিলেন। 

তবে হাসিনার দুর্নীতির সঙ্গে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় পদত্যাগের ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে পড়েন টিউলিপ। এরপর স্টারমারের নিরপেক্ষ তদন্তকারী লরি ম্যাগনাসের কাছে আত্মপক্ষ সমর্থন করেন তিনি। তদন্তকারীর রায় প্রকাশের পরই পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন হাসিনার ভাগ্নি। 

এই পদত্যাগ টিউলিপের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ভিত্তিতে প্রকাশিত খবরের ইতি টানবে বলে আশা করছেন স্টারমার। তবে ব্লুমবার্গ বলছে, গণমাধ্যমে ক্রমাগত খবর প্রকাশিত হওয়ার পর দিন দিন পদত্যাগের চাপে মুহ্যমান হয়ে পদ ছেড়েছেন টিউলিপ।

সংবাদমাধ্যমটি আরও বলছে, গত বছর নির্বাচনে ভূমিধস জয় পাওয়ার পর থেকে ক্রমাগতভাবে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছেন স্টারমার ও তার দল। ইতিমধ্যেই টিউলিপের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন এমা রেনল্ডস। এর আগে লন্ডনের ব্যাংকিং সেক্টরে প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান দ্য সিটি ইউকে-এর প্রধান লবিস্টের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর নিরপেক্ষ তদন্তকারী লরি ম্যাগনাস বলেছেন, টিউলিপ বৃটেনের মন্ত্রীদের নীতি লঙ্ঘন করেননি। তবে ‘দুঃখজনক’ বিষয় হচ্ছে- বাংলাদেশে টিউলিপের পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ তার সুনামকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। তার সঙ্গে তার সরকারও এ ঝুঁকি এড়াতে পারে  না। এমন পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্টারমারকে লরি ম্যাগনাস টিউলিপের দায়িত্বগুলো বিবেচনা করার পরামর্শ দিয়েছেন। 

স্টারমার বলেছেন, তিনি ‘দুঃখের সঙ্গে’ টিউলিপের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন এবং ম্যাগনাসের পর্যালোচনায় টিউলিপের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

টিউলিপকে লেখা স্টারমারের চিঠিতে বলা হয়েছে, বৃটেনের পরিবর্তনের জন্য চলমান বিভ্রান্ত এড়িয়ে দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে আপনি (টিউলিপ) যে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সে জন্য ভবিষ্যতে আপনার জন্য সকল দরজা খোলা থাকবে।

স্টারমারের একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন টিউলিপ। উত্তর লন্ডনে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার পাশেই টিউলিপের এলাকা। বাংলাদেশে অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগেই মূলত পদত্যাগের চাপে পড়ে পদ ছাড়লেন টিউলিপ। গত বছর একটি পুরোনো ইস্যুতে জালিয়াতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়ে পদ ছেড়েছিলেন সাবেক পরিবহন মন্ত্রী লুইস হাই। 

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে টিউলিপ ও তার পরিবারের চার সদস্যের বিরুদ্ধে রাশিয়ার অর্থায়নে পরিচালিত একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাতের অভিযোগের তদন্ত চলছে। গত ডিসেম্বরে দুর্নীতির এই অভিযোগের তদন্তে যুক্ত হয় টিউলিপ সিদ্দিকের নাম। এরপর তদন্তের অংশ হিসাবে তদন্তকারী কর্মকর্তারা দেশের বড় ব্যাংকগুলোকে সিদ্দিকের সাথে সম্পর্কিত অ্যাকাউন্টের লেনদেনের বিবরণ জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

৪২ বছর বয়সী টিউলিপ বৃটেনের আর্থিক খাতের দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্বে ছিলেন। টিউলিপ সিদ্দিক বৃটেনের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির সদস্য, এমপি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ- তিনি ২০১৩ সালে বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছিলেন, যেখানে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছিল। এ বিষয়ে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে।