পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিলে সই করার মুহূর্তের সেই বিখ্যাত ছবিটি এতদিন পর্যন্ত ভারতের সেনাপ্রধানের কার্যালয়ে ছিল। তবে গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর ছবিটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। সেখানে স্থাপন করা হয়েছে নতুন আরেকটি চিত্রকর্ম।ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পণের ছবিটি সরিয়ে ফেলার প্রায় এক মাস পর এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী।গতকাল মঙ্গলবার উপেন্দ্র দ্বিবেদী বলেন, ‘ভারতের গৌরবময় ইতিহাসের তিনটি অধ্যায় রয়েছে। এগুলো হচ্ছে ব্রিটিশ যুগ, মুঘল যুগ এবং তার আগের সময়। সশস্ত্র বাহিনীর দর্শনের সঙ্গে ঐতিহাসিক সংযোগ তৈরি করতে আগের ছবিটি সরানো হয়েছে।’আগের ছবির জায়গায় নতুন যে চিত্রকর্ম প্রতিস্থাপন করা হয়েছে তার নাম ‘ফিল্ড অব ডিডস’ বা ‘করম ক্ষেত্র’। এর অর্থ হচ্ছে ‘কর্মক্ষেত্র’।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন চিত্রকর্মটি ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে। চিত্রকর্মটিতে সশস্ত্র বাহিনীকে ধর্মের রক্ষক, জাতির মূল্যবোধের রক্ষক এবং প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত একটি একীভূত বাহিনী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।নতুন এই চিত্রকর্মটি এঁকেছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ২৮ মাদ্রাজ রেজিমেন্টের কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল থমাস জ্যাকব।চিত্রটির ব্যাকগ্রাউন্ডে তুষারে ঢাকা পাহাড়, ডান দিকে লাদাখের প্যাংগং লেক এবং বাঁ দিকে (হিন্দু পুরাণে উল্লেখিত পক্ষীশ্রেষ্ঠ ও বিষ্ণুর বাহন) কৃষ্ণের রথ এবং মধ্যখানে রণকৌশলের দিকপাল চাণক্যের (রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতি বিষয়ে প্রাচীন ভারতের এক দিকপাল) সরব উপস্থিতি রয়েছে। পাশাপাশি, আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম যেমন ট্যাংক, অল-টেরেইন ভেহিকল, পেট্রল বোট, দেশীয় লাইট কমব্যাট হেলিকপ্টার এবং অ্যাপাচি অ্যাটাক হেলিকপ্টারের চিত্রও প্রদর্শিত হয়েছে।
ভারতের সেনাপ্রধান বলেন, ‘নতুন চিত্রকর্মটি বর্তমান বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিয়ে আঁকা হয়েছে। বিশেষত ভারতের উত্তর দিক (চীন) থেকে আসা চ্যালেঞ্জের জন্য সেনাবাহিনীর প্রস্তুতির প্রতিফলন এটি।’সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী আরও জানান, ১৯৭১ সালের আত্মসমর্পণের ছবিটি একেবারে সরিয়ে ফেলা হয়নি। সেনাপ্রধানের দুটি লাউঞ্জ রয়েছে। অপর লাউঞ্জ, যেটি মানেকশ সেন্টার নামে পরিচিত, সেখানে ছবিটি রাখা হয়েছে।পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক ছবিতে দেখা যায়, পাকিস্তানের লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ কে নিয়াজি আত্মসমর্পণের দলিলে সই করছেন। তার পাশে বসা ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান ও বাংলাদেশ–ভারত যৌথ বাহিনীর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা। তাদের পেছনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বাংলাদেশের কমান্ডার এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার, ভাইস অ্যাডমিরাল কৃষ্ণন, এয়ার মার্শাল দেওয়ান, লেফটেন্যান্ট জেনারেল স্বাগত সিং এবং মেজর জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব।