
ভারতের প্রাচীন গণমাধ্যম সামনা-এর সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, নেপালের অস্থিরতা থেকে ভারতের শিক্ষা নেওয়া উচিত। এই অস্থিরতার কারণ হলো বেকারত্ব এবং মানুষের মধ্যে জমে থাকা ক্ষোভ। এটি ভারতের জন্যও বিপদজনক, কারণ ভারতেও একই ধরনের সমস্যা যেমন কর্মসংস্থান হ্রাস এবং গণতন্ত্রের দুর্বলতা রয়েছে।
এই সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোতেও একই ধরনের আঞ্চলিক অস্থিরতা দেখা গেছে। মহারাষ্ট্রে প্রকাশিত মারাঠি ভাষার সংবাদপত্রটি ভারতের বৈদেশিক নীতির সমালোচনা করে বলেছে যে, নেপালের চীনের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে। নেপালের ভূখণ্ডের দাবি এবং সাম্প্রতিক প্রতিবাদগুলোও ভারতের উদ্বেগের কারণ।
বুধবার সামনা পত্রিকায় প্রকাশিত ওই সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, নেপালের ‘আগুন’ মূলত বেকারত্ব এবং ক্ষোভের স্ফুলিঙ্গ থেকে তৈরি হয়েছে এবং ভারত এর থেকে একটি ‘শিক্ষা’ নিতে পারে। এতে সতর্ক করা হয়েছে যে, বেকারত্ব, ‘গণতন্ত্রের ধ্বংস,’ এবং ক্রমবর্ধমান জাতি ও ধর্মের রাজনীতি দেশটির জন্য খুবই বিপজ্জনক।
সামনার সম্পাদকীয়তে বলা হয়, ভারতে কর্মসংস্থান ধ্বংস হয়েছে। ৮০ কোটি মানুষকে সরকারের দেওয়া বিনামূল্যে পাঁচ থেকে দশ কেজি 'রেশন'-এর উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। মোদি-শাহ গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে নির্বাচনে জিতছেন। গণতন্ত্রের সকল স্তম্ভ যেন ভেঙে পড়ছে। ধর্ম এবং জাতিগত রাজনীতি চরমে পৌঁছেছে। এই সমস্ত অসুস্থতা দেশের জন্য বিপজ্জনক।
বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান এবং অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোতে ঘটে যাওয়া আগের অস্থিরতা ও প্রতিবাদের দিকে ইঙ্গিত করে সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ক্ষুধা, বেকারত্ব এবং দুর্নীতির সমস্যা সমাধান করা হয়নি, যার ফলে সংসদ ‘জনগণের কাছে অকেজো’ হয়ে পড়েছে।
সামনার লেখাটিতে বলা হয়েছে, ‘সীমান্তে অবস্থিত প্রায় প্রতিটি দেশে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়েছে। একই পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানেও। জনগণ শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে কারণ দুর্নীতি অসহনীয় হয়ে উঠেছিল। যখন জনগণের মনে আত্মসম্মানের স্ফুলিঙ্গ জ্বলে ওঠে, তখন তা দাবানল হয়ে ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগে না। তখন জনগণ বন্দুক এবং কামানকেও ভয় পায় না।’
নেপালের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে না পারার জন্য দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করে সম্পাদকীয়তে বলা হয়, ‘আজ নেপালের প্রধানমন্ত্রী প্রথমে চীনে এবং তারপর পাকিস্তানে যান। এটি ভারতের পররাষ্ট্র নীতির ব্যর্থতা। বর্তমানে শত শত চীনা শিক্ষক নেপালে রয়েছেন এবং নেপালের জনগণ তাদের কাছ থেকে চীনা ভাষা শিখছে। আগে নেপালের রঙ ছিল গেরুয়া। এখন এটি সম্পূর্ণরূপে উজ্জ্বল লাল হয়ে গেছে এবং ভারত সরকার এই পরিবর্তন থামাতে পারেনি।’’
নেপালে তরুণ এবং শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে ‘জেন-জি’ প্রতিবাদ বিস্ফোরণ আকারে ছড়িয়ে পড়ে, অতিদ্রুত যা একটি ব্যাপক আন্দোলনে রূপ নেয়। সরকারের কাছ থেকে জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতার দাবিতে শুরু হয় এই আন্দোলন। ৮ সেপ্টেম্বর থেকে কাঠমান্ডু এবং পোখরা, বুটওয়াল ও বীরগঞ্জের মতো অন্যান্য প্রধান শহরগুলোতে এই প্রতিবাদ শুরু হয়। সরকার কর রাজস্ব এবং সাইবার নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে প্রধান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর এই প্রতিবাদ শুরু হয়। এই ক্ষোভের ভিত্তিতে প্রতিবাদকারীরা সরকারে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি এবং পক্ষপাতিত্বের অবসান দাবি করছে।
উত্তেজনা বাড়ার সাথে সাথে পরিস্থিতি দ্রুতই খারাপের দিকে যায়। নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে অন্তত ১৯ জন নিহত এবং ৫০০ জন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঠমান্ডুসহ কয়েকটি শহরে কারফিউ জারি করা হয়। অভ্যুত্থানের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করে পালিয়ে যান নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে. পি. শর্মা অলি।