পৃথিবীর ইতিহাসে বহুবার কিয়ামতের নিদর্শন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত এসব আলামতের মধ্যে অন্যতম হলো মধ্যপ্রাচ্যের ঐতিহাসিক ফোরাত নদীকে ঘিরে এক অলৌকিক ভবিষ্যৎবাণী। বলা হয়েছে, নদীটি শুকিয়ে যাবে এবং তার তলদেশ থেকে প্রকাশ পাবে এক বিশাল স্বর্ণের পাহাড়, যা নিয়ে শুরু হবে সংঘাত, যুদ্ধ এবং ভয়াবহ প্রাণহানি।
সাম্প্রতিক সময়ে ফোরাত নদীর পানি নাটকীয়ভাবে কমে যাওয়ায় এই ভবিষ্যৎবাণী আবারও উঠে এসেছে আলোচনায়। পরিবেশগত সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন ও রাজনৈতিক টানাপোড়েনে নদীটির পানির স্তর দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। অনেক এলাকায় নদী প্রায় শুকিয়ে গেছে। ফলে মুসলিম বিশ্বজুড়ে প্রশ্ন উঠছে, এটি কি তবে কিয়ামতের আলামত?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে সতর্ক করে বলেছেন, “ফোরাত নদী শুকিয়ে যাবে এবং এর নিচে একটি স্বর্ণের পাহাড় প্রকাশ পাবে। তখন মানুষ তা নিয়ে যুদ্ধ করবে। প্রতি একশ জনের মধ্যে নিরানব্বই জন নিহত হবে। প্রত্যেকে বলবে, যদি আমি বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি হতাম।”
ফোরাত নদী তুরস্ক থেকে উৎপন্ন হয়ে সিরিয়া ও ইরাক অতিক্রম করে পারস্য উপসাগরে পতিত হয়। হাজার বছরের পুরনো সভ্যতার অংশ এই নদী আরব বিশ্বের অন্যতম প্রধান পানির উৎস। কিন্তু বর্তমানে খরা ও মানবসৃষ্ট সংকটের কারণে নদীটির অস্তিত্বই হুমকির মুখে।
ইসলামী আলেমদের মতে, হাদিসে উল্লেখিত “স্বর্ণের পাহাড়” নিয়ে ভিন্ন ব্যাখ্যা রয়েছে। কেউ বলেন, এটি হবে বাস্তব স্বর্ণ। কেউ ব্যাখ্যা করেন, এটি মূল্যবান খনিজ সম্পদের প্রতীক। আবার কেউ কেউ মনে করেন, এর ইঙ্গিত হতে পারে “কালো স্বর্ণ” অর্থাৎ তেলের দিকে। তবে অধিকাংশ মুহাদ্দিসের মতে, হাদিসে সরাসরি “স্বর্ণ” শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে বলে এটিকে প্রতীকী নয়, বরং বাস্তব অর্থেই গ্রহণ করতে হবে।
বিখ্যাত হাদিস ব্যাখ্যাকার ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উল্লেখ করেছেন, ফোরাত নদীর এই স্বর্ণের পাহাড় প্রকাশ কিয়ামতের বড় নিদর্শনগুলোর একটি এবং এটি ইমাম মাহাদীর আগমনের পূর্বে ঘটবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ভবিষ্যৎবাণী কেবল ভয়ের বার্তা নয়, বরং আত্মসমালোচনারও সুযোগ। দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করে ঈমানকে মজবুত করা, আমল বাড়ানো এবং আখিরাতের প্রস্তুতি গ্রহণ করার ওপর জোর দিচ্ছেন আলেমরা।
