
ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হিসেবে আলাস্কায় বসেছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত সোমবার হোয়াইট হাউজে আবারও একাধিক বৈঠকে অংশ নেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং ইউরোপের শীর্ষ নেতারা।
আলাস্কা বৈঠকের মূল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল কিয়েভকে পূর্বাঞ্চলের শিল্পাঞ্চল দনবাস ছেড়ে দিতে রাজি করানো। ২০২২ সালে মস্কোর সামরিক অভিযানের অন্যতম লক্ষ্যও ছিল দনবাসের দখল।
দনবাসের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক প্রদেশকে একত্রে বলা হয়। কয়লা ও লৌহ খনিজে সমৃদ্ধ এই অঞ্চলটি ইউক্রেনের শিল্পাঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র। শুধু দেশের নয়, দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপেরও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ খনি ও শিল্প এলাকা। যদিও মূল অংশ ইউক্রেনে, তবে একটি ছোট অংশ রাশিয়ার ভূখণ্ডেও রয়েছে।
পুতিনের কাছে দনবাসের গুরুত্ব অপরিসীম। ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ারের বিশ্লেষকরা দোনেৎস্ককে রক্ষণশীলভাবে দূর্গের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এখানে ইউক্রেনের সেনারা বহু স্তরের প্রতিরক্ষা বলয় গঠন করেছেন।
সেন্টার ফর ইউরোপিয়ান পলিসি অ্যানালাইসিসের লেখক এলিনা বেকেতোভা জানিয়েছেন, দনবাস হারালে ইউক্রেন বড় ধরনের সংকটে পড়বে এবং রাশিয়ার সেনারা খারকিভ ও দনিপ্রো অঞ্চলের দিকে সহজেই অগ্রসর হতে পারবে।
জেলেনস্কিও উল্লেখ করেছেন, অঞ্চল বিনিময় মানে ভবিষ্যতে অন্যান্য অঞ্চলের ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণের সম্ভাবনা তৈরি করা।
দনবাসের ইতিহাসও এর গুরুত্বকে প্রমাণ করে। এখানে রুশভাষীর জনগোষ্ঠী সংখ্যাগরিষ্ঠ। পাবলিক ইন্টারন্যাশনাল ল অ্যান্ড পলিসি অনুসারে, ১৯১৭-১৯২১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে দনবাস ছিল রাশিয়ান সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের কেন্দ্র। উনিশ শতকের শেষের দিকে কয়লাখনি ও কারখানায় কাজের জন্য রুশভাষী শ্রমিকদের নিয়ে আসা হয়। পরে রাশিয়া-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন ঘোষণা করে। যুদ্ধ শুরুর আগের ২০২২ সালে পুতিনও এই স্বীকৃতি দেন এবং রুশভাষীদের রক্ষার অঙ্গীকার করেন।
বর্তমানে দনবাসের প্রায় ৭০ শতাংশ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। রাশিয়া ক্রিমিয়া, লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক জনগণপ্রজাতন্ত্র এবং খেরসনকে নিজেদের নাগরিক হিসেবে গণ্য করছে। জেলেনস্কি জানিয়েছেন, রাশিয়া বাকি ৩০ শতাংশও দখল করতে চায়।
দনবাসের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক গুরুত্বের কারণে জেলেনস্কি আলাস্কা বৈঠকের আগে ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। জার্মানি, যুক্তরাজ্য সফর করেছেন এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। ট্রাম্পের সঙ্গে আসন্ন বৈঠকে ইউরোপীয় কমিশনের প্রধানও অংশ নেবেন। আলোচনায় যুদ্ধবিরতি এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার শর্ত যাতে রাশিয়ার পক্ষে না যায় তা নিয়েও গুরুত্ব দেওয়া হবে।
পুতিন দনবাসেই থেমে থাকবেন কি না তা অনিশ্চিত। বিভিন্ন সময়ে তিনি ইউক্রেনের অন্য অংশ দখলের ইঙ্গিত দিয়েছেন। অনুগত সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলতে পারে—এমনই মত অনেক ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা ও পশ্চিমা বিশ্লেষকের। তবে কিছু অর্থনৈতিক ও সামরিক সীমাবদ্ধতা পুতিনকে অন্তত কিছুদিন দনবাস নিয়েই সীমাবদ্ধ রাখতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।