
সৌদি আরব বুধবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর তথাকথিত “গ্রেটার ইসরায়েল” সমর্থনকারী বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
মঙ্গলবার আই২৪ নিউজ-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেন, তিনি “গ্রেটার ইসরায়েল”-এর ভাবনার সঙ্গে “খুবই যুক্ত”।
“গ্রেটার ইসরায়েল” বলতে বোঝানো হয় এমন এক সম্প্রসারণবাদী পরিকল্পনা, যেখানে পূর্ব জেরুজালেম, পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা, সিনাই উপদ্বীপ, গোলান মালভূমি এবং আশপাশের কিছু আরব দেশের অংশ অন্তর্ভুক্ত থাকে।
সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তারা ইসরায়েলের “বসতি স্থাপন ও সম্প্রসারণের” এসব পরিকল্পনা পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করছে। মন্ত্রণালয় আরও বলে, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ফিলিস্তিনিদের তাদের নিজ ভূমিতে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক ও আইনি অধিকার আছে।
বিবৃতিতে সতর্ক করে বলা হয়, ইসরায়েলের এই প্রকাশ্য লঙ্ঘন আন্তর্জাতিক আইনকে দুর্বল করছে, অন্যান্য দেশের সার্বভৌমত্ব ভঙ্গ করছে এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে।
গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসি) মহাসচিব জাসেম আলবুদাইউইও এ বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে বলেন, এটি জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের সরাসরি লঙ্ঘন এবং আরব রাষ্ট্রগুলোর সার্বভৌমত্বের ওপর স্পষ্ট আঘাত। তিনি সতর্ক করে দেন, এমন মন্তব্য আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য সরাসরি হুমকি এবং জিসিসি আরব দেশগুলোর ভৌগোলিক অখণ্ডতা বিনষ্টের যেকোনো প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করে।
আলবুদাইউই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানান, এসব “উসকানিমূলক” বক্তব্যের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিতে এবং এমন পদক্ষেপ ঠেকাতে, যা উত্তেজনা বাড়িয়ে শান্তির সম্ভাবনা নষ্ট করতে পারে।
আরব লীগও নেতানিয়াহুর মন্তব্যকে “তীব্রভাবে নিন্দা” জানিয়ে বলেছে, এটি আরব রাষ্ট্রগুলোর সার্বভৌমত্বের প্রতি অবজ্ঞা এবং আরবদের সম্মিলিত নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি। সংস্থাটি একে “ঔপনিবেশিক বিভ্রম”-ভিত্তিক সম্প্রসারণবাদী মানসিকতার প্রতিফলন বলে আখ্যা দিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে এমন চরমপন্থী বক্তব্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও নেতানিয়াহুর মন্তব্যকে বিপজ্জনক ও উসকানিমূলক বলে নিন্দা জানায়। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সুফিয়ান কুদাহ বলেন, ইসরায়েলি নেতাদের এই “অবাস্তব কল্পনা” জর্ডান বা আরব দেশগুলোর ওপর প্রভাব ফেলবে না এবং ফিলিস্তিনিদের বৈধ ও অবিচ্ছেদ্য অধিকার ক্ষুণ্ণ করতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, এসব বক্তব্য ইসরায়েলি সরকারের চরমপন্থার পরিচয় দেয় এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও বৈশ্বিক শান্তি রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
এদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বুধবার জানায়, তারা গাজা উপত্যকায় নতুন এক সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। কয়েক দিন আগেই ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজার সবচেয়ে বড় শহর দখলের আহ্বান জানিয়েছিল। ইসরায়েলের ২২ মাসের যুদ্ধ ইতিমধ্যেই ৬১ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ নিয়েছে এবং ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি করেছে।