Image description
 

দক্ষিণ ককেশাসে চলমান ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ইরান আবারও জানিয়েছে যে তারা আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। 

 

এ অঞ্চলের কৌশলগত গুরুত্ব ও দক্ষিণ ককেশাসের সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্তের কারণে তেহরান বিদেশি হস্তক্ষেপ রোধ ও আঞ্চলিক স্বার্থ রক্ষায় কূটনৈতিক সংলাপ ও যৌথ নিরাপত্তা কাঠামোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে ইরানের অবস্থান জানতে, মেহর নিউজের সঙ্গে কথা বলেন দেশটির সাবেক কূটনীতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোহসেন পাকাঈন।

দক্ষিণ ককেশাসের বর্তমান নিরাপত্তা চিত্র

মোহসেন পাকাঈন বলেন, কারাবাখ আজারবাইজানের নিয়ন্ত্রণে ফেরার পর দক্ষিণ ককেশাসে নতুন নিরাপত্তা কাঠামো তৈরি হচ্ছে, যেখানে ‘শান্তির ভাষ্য’ প্রাধান্য পাচ্ছে। ২০২২ সালের অক্টোবরে প্রাগে ইউরোপীয় রাজনৈতিক সম্প্রদায়ের বৈঠকের পর আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান ও তৎকালীন ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট শার্ল মিশেল এক যৌথ বিবৃতিতে জাতিসংঘ সনদে অঙ্গীকার, পারস্পরিক ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি এবং ১৯৯১ সালের আলমাটি ঘোষণার প্রতি প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

আলমাটি ঘোষণায় সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের পর স্বাক্ষরকারী দেশগুলো, যার মধ্যে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া ছিল, একে অপরের সীমান্ত ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা স্বীকার করে। এর ফলে কারাবাখ আজারবাইজানের নিয়ন্ত্রণে ফেরে এবং দেশটি জাঙ্গাজুর করিডোরে আর্মেনিয়ার সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে— যা ইরান-আর্মেনিয়া সীমান্ত ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনাকে নাকচ করে দেয়। বর্তমানে দুই দেশ সরাসরি শান্তিচুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে, যেখানে কোনো মধ্যস্থতাকারী নেই।

জাঙ্গাজুর করিডোরের ভূরাজনৈতিক প্রভাব

পাকাঈনের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য ইরানকে দুর্বল ও বিচ্ছিন্ন করা হলেও ইরানের আরাস নদী বরাবর ৪০০ কিলোমিটারের বেশি সীমান্ত রয়েছে, যা দক্ষিণ ককেশাসে সবচেয়ে দীর্ঘ। ‘এ অঞ্চলে ইরানের প্রভাব সবচেয়ে বেশি, তাই কোনো বিদেশি শক্তি ইরানের বিরুদ্ধে বিশেষ উদ্যোগ নিতে পারবে না,’ বলেন তিনি।

তিনি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র এখানে সরাসরি কোনো সামরিক সংঘর্ষে জড়াবে না, যেমনটি ইউক্রেনে করেনি; বরং রাশিয়াকে চাপে ফেলতে আঞ্চলিক দেশগুলোকে উসকে দেবে। ‘মূল লক্ষ্য হলো রাশিয়াকে ককেশাসে বিচ্ছিন্ন করা,’ বলেন পাকাঈন। তবে রাশিয়া যদি সক্রিয় না হয়, ইরান একাই যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা ঠেকাতে সক্ষম।

 

 

 

ইরান-আর্মেনিয়া সম্পর্ক কোনদিকে?

সম্প্রতি আর্মেনিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর তেহরান সফর প্রসঙ্গে পাকাঈন বলেন, ‘আমরা আর্মেনিয়া, আজারবাইজান ও রাশিয়ার সঙ্গে পরামর্শে আছি। আর্মেনিয়া-আজারবাইজানের শান্তি প্রতিষ্ঠাকে স্বাগত জানিয়ে এবং যোগাযোগ পথ খুলে দেওয়ার পক্ষে মত জানিয়ে আমরা স্পষ্ট করেছি, এই করিডোর যেন কোনো ভূরাজনৈতিক পরিবর্তন বা ইরানের যোগাযোগ পথ বিচ্ছিন্ন না করে।’

আর্মেনীয় পক্ষ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে তারা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় শান্তি, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং ইরান-আর্মেনিয়ার পারস্পরিক স্বার্থকে গুরুত্ব দেবে। পাকাঈন আশা প্রকাশ করেন, আর্মেনিয়া কোনো সামরিক বা নিরাপত্তা বাহিনীর হস্তক্ষেপ এড়িয়ে চলবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য প্রভাব প্রতিহত করবে।

আজারবাইজানের উদ্যোগ ঠেকাতে ইরানের বিকল্প পরিকল্পনা

পাকাঈন জানান, ‘আমরা প্রথমেই আজারবাইজান, রাশিয়া, আর্মেনিয়া ও এমনকি তুরস্কের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনায় বসব এবং যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতির ঝুঁকি তুলে ধরব। একই সঙ্গে আমরা চেষ্টা করব আর্মেনিয়া যেন বর্তমান শান্তি পরিস্থিতি নষ্ট করার মতো কোনো পদক্ষেপ না নেয়।’