Image description

ফিলিস্তিনির গাজায় খাদ্য ও ত্রাণবাহী চারটি ট্রাক উল্টে গিয়ে কমপক্ষে ২০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন বহু মানুষ। হামাস পরিচালিত গাজা সিভিল ডিফেন্স সংস্থা জানায়, মঙ্গলবার এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।

 

স্থানীয় কর্মকর্তাদের দাবি, ইসরাইলি সেনাবাহিনী ত্রাণবাহী গাড়িগুলোকে একটি ‘অনিরাপদ সড়ক’ দিয়ে পাঠায়, যার ফলে ট্রাকগুলো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অপেক্ষমাণ জনতার উপর উল্টে পড়ে।

বুধবার (৬ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে সৌদি গেজেট।

খাদ্য সংকটে দিন কাটানো হাজার হাজার মানুষ সেদিন ওই স্থানে জড়ো হয়েছিলেন। ত্রাণবাহী গাড়িগুলোর দিকে ছুটে যান অনেকেই, কেউ কেউ গাড়ির ওপর উঠে পড়েন, এতে চালকেরা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফার বরাতে জানানো হয়, সড়কটি ছিল অসম ও ক্ষতবিক্ষত, আর সেখানেই এ দুর্ঘটনা ঘটে। গাজা সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানান, ‘‘ত্রাণের জন্য অপেক্ষমাণ শত শত মানুষের ভিড়ে দুর্ঘটনাটি ঘটে। এতে ২০ জন নিহত এবং বহু আহত হয়েছেন।’

গাজা সরকারের মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে জানায়, ‘সম্প্রতি সীমিত সংখ্যক ত্রাণ ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও দখলদার ইসরাইল ইচ্ছাকৃতভাবে নিরাপদ পথের ব্যবস্থা করছে না। তারা চালকদের এমন সব সড়কে চালাতে বাধ্য করছে, যেখানে ক্ষুধার্ত মানুষ ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছে।’

‘এর ফলে বহু হতাশ মানুষ ও দল বেঁধে থাকা স্থানীয় গ্যাং হঠাৎ ট্রাকগুলোর দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে, মালামাল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে এবং পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে,’ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

গাজার মধ্যাঞ্চলের একটি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, মঙ্গলবার রাত থেকেই বিপুলসংখ্যক হতাহতকে হাসপাতালে আনা হচ্ছে। চিকিৎসাসেবায় হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁদের।

স্থানীয় পরিবহন সংস্থা জানিয়েছে, ইসরাইলের অনুমতিক্রমে প্রথমবারের মতো বেসরকারিভাবে পণ্য আমদানির অংশ হিসেবে ওই ২৬টি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করছিল। কিন্তু রাস্তায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, কেউ কেউ রকেটচালিত গ্রেনেড ছোড়ার ঘটনাও ঘটায় বলে একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়।

এই ঘটনার মধ্যেই জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা হুঁশিয়ারি দিয়েছে, গাজায় দুর্ভিক্ষ এবং রোগবালাই ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। ইসরাইলি নিষেধাজ্ঞা ও সহায়তার ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজায় খাদ্যসংকট এখনো মারাত্মক আকারে বিরাজ করছে। ইসরাইলি নীতিমালা এবং চলমান বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির কারণে সীমান্ত থেকে ত্রাণ তোলা কঠিন হয়ে পড়েছে।

বুধবার অন্তত তিনজন মানুষ অপুষ্টিজনিত কারণে মারা গেছেন বলে আল-জাজিরাকে জানিয়েছে চিকিৎসা সূত্র। উত্তর গাজার আল-শিফা হাসপাতালে হিবা ইয়াসের আবু নাজি নামের এক শিশুর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। একই কারণে এক নবজাতক ও জাবালিয়া এলাকার এক প্রাপ্তবয়স্কর মৃত্যুর খবরও জানানো হয়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত অনাহার ও অপুষ্টিজনিত কারণে অন্তত ১৮৮ জন মারা গেছেন, যার মধ্যে ৯৪ জনই শিশু।