Image description

গাজায় চলমান যুদ্ধ বন্ধে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছেন প্রায় ৬০০ জন সাবেক ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ও শিন বেতের সাবেক প্রধানরাও রয়েছেন।

সোমবার (৪ আগস্ট) ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি জানায়, সাবেক এই কর্মকর্তারা ট্রাম্পকে লেখা খোলা চিঠিতে দাবি করেছেন, হামাস এখন আর ইসরায়েলের জন্য কোনো কৌশলগত হুমকি নয়।

চিঠিতে তারা বলেন, “বেশিরভাগ ইসরায়েলিই আপনার ওপর আস্থা রাখে এবং বিশ্বাস করে, নেতানিয়াহু ও তার সরকারকে সঠিক পথে পরিচালনা করার ক্ষমতা আপনার রয়েছে। আপনি এই যুদ্ধ বন্ধ করতে পারেন, জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে পারেন এবং সবার দুর্ভোগ লাঘব করতে পারেন।”

এই আহ্বান এমন সময়ে এসেছে, যখন জিম্মি বিনিময় আলোচনায় অচলাবস্থার মধ্যে নেতানিয়াহু নতুন করে সামরিক অভিযান সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নিচ্ছেন।

চিঠিতে আরও বলা হয়, “গাজার যুদ্ধ বন্ধ করুন। সাবেক আইডিএফ জেনারেল, মোসাদ, শিন বেত, পুলিশ ও কূটনীতিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ‘কমান্ডার্স ফর ইসরায়েল’স সিকিউরিটি’ (CIS)-এর পক্ষ থেকে আমরা আপনার প্রতি এই অনুরোধ জানাচ্ছি। আপনি লেবাননে যেটা করেছেন, এবার গাজায় সেটাই করুন।”

চিঠিতে সই করা বিশিষ্টদের মধ্যে রয়েছেন: মোসাদের সাবেক প্রধান তামির পারদো, শিন বেতের সাবেক প্রধান আমি আয়ালন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাক, সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোশে ইয়ালন, 

আমি আয়ালন বলেন, “শুরুতে এটি প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধ ছিল। পরে আমাদের সকল সামরিক লক্ষ্য অর্জিত হয়। এখন আর এটিকে শুধুই যুদ্ধ বলা যায় না।”

চিঠির পেছনে রয়েছে ক্রমবর্ধমান মানবিক বিপর্যয়।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা জানিয়েছে, গাজায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ চলছে। জাতিসংঘ সমর্থিত সংস্থাগুলোর মতে, সেখানে “সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ের দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি” সৃষ্টি হয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৯৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৪ জন নিহত হয়েছেন ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে। পাশাপাশি, ৯৩ শিশুসহ অন্তত ১৮০ জন অপুষ্টি ও অনাহারে মৃত্যুবরণ করেছে।

সম্প্রতি হামাস ও ইসলামিক জিহাদ প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, দুই ইসরায়েলি জিম্মি চরম দুর্বল ও অপুষ্ট। ভিডিওটি ইসরায়েলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।

জবাবে নেতানিয়াহু জিম্মিদের পরিবারকে আশ্বস্ত করে বলেন, “জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।”

তবে ইসরায়েলি সরকারের এক কর্মকর্তা দাবি করেন, নেতানিয়াহু কূটনৈতিক পথ নয়, বরং “সামরিক বিজয়” দিয়ে জিম্মিদের মুক্ত করতে চান। এ অবস্থানে উদ্বেগ জানিয়ে জিম্মি পরিবারদের একটি সংগঠন বলেছে,

“নেতানিয়াহু ইসরায়েল ও জিম্মিদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।”

যদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখনো এ বিষয়ে সরাসরি কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি, তবে সম্প্রতি তিনি স্বীকার করেন,

“গাজায় প্রকৃতপক্ষে অনেক মানুষ না খেয়ে আছে।”

এর মাধ্যমে তিনি নেতানিয়াহুর পূর্বোক্ত মন্তব্য — “গাজায় কেউ ক্ষুধার্ত নয়”— এর বিরোধিতা করেন।

তবে, ট্রাম্প আদৌ নেতানিয়াহুর ওপর চাপ প্রয়োগ করবেন কি না, বা করলেও কিভাবে করবেন — তা এখনও স্পষ্ট নয়।