Image description
ইউনিসেফের সতর্কবার্তা

গাজায় কৃত্রিমভাবে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে ইসরায়েল। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ এরই মধ্যে জানিয়েছে, গাজায় প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন অনাহারে রয়েছেন। এরই মধ্যে গতকাল শনিবার অনাহারজনিত কারণে ১৭ বছর বয়স্ক আতেফ আবু খাতের মারা গেছে। গতকাল আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এক দিনে গাজায় অনাহারে আরও সাত ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। গাজার আশ শিফা হাসপাতাল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। নিহতের বাবা আলজাজিরাকে জানান, যুদ্ধের আগেও সুস্থ-সবল ছিল আবু খাতের। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর খেতে না পেরে ধুঁকে ধুঁকে মরেছে সে। তিনি জানান, শেষ পর্যন্ত কোনো চিকিৎসাই তার শরীরে কার্যকর হচ্ছিল না। শরীরে স্যালাইন দেওয়া হলেও তার ভগ্নস্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের লক্ষণ মেলেনি।

জানা গেছে, গাজায় অন্তত ৩ লাখ ২০ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগছে। সামান্য খাবারের জন্য জীবনঝুঁকি নিতে শুরু করেছেন ফিলিস্তিনিরা। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত রুট ব্যবহার করে ত্রাণ পৌঁছানোর ক্ষেত্রে নানা রকম বাধা রয়েছে। তবে এসব দাবি বাতিল করে দিয়েছে ইসরায়েল। তারা জানিয়েছে, ত্রাণ সঠিকভাবেই সরবরাহ করা হচ্ছে। এ জন্য তারা ত্রাণ সংস্থাগুলোর গাফিলতির অভিযোগ তুলছে। গাজায় এখন বিতর্কিত ত্রাণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনই (জিএইচএফ) নিয়মিত ত্রাণ সরবরাহ করছে। কিন্তু জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্রগুলো যেন মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে গত দুই দিনের ব্যবধানে ১০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও কয়েকশ।

গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে ইউনিসেফের মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর টেড চাইবান জানান, গাজার মানুষ এখনো বড় ধরনের খাদ্যসংকটে ভুগছে এবং তাদের অনেকেই খাবারের জন্য জীবন ঝুঁকিতে ফেলছেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, গাজায় কয়েক মাস ধরে টিকে থাকার মতো ন্যূনতম উপকরণের অভাবও চলমান সংকটকে আরও গভীর করে তুলেছে। এ সংকট কাটাতে ‘মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবাহ’ নিশ্চিত করতেই হবে। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ যেসব পথ ব্যবহার করতে আমাদের বলছে, সেগুলো প্রায়ই অপ্রতুল, বিপজ্জনক, যানজটে ভরা কিংবা চলাচলের অযোগ্য। আমরা একটি বড় প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছি। আমাদের দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। না হলে লাখ লাখ শিশু না খেয়ে মারা যাবে।’

গাজায় কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ নিয়ে সোচ্চার হচ্ছে গোটা বিশ্ব। খোদ ইসরায়েলেই বাড়ছে প্রতিবাদ। এবার গাজায় গণহত্যা প্রসঙ্গে মুখ খুললেন পুরস্কারপ্রাপ্ত শান্তিবাদী ইসরায়েলি লেখক ডেভিড গ্রসম্যান। ইতালীয় দৈনিক লা রিপাবলিকাতে শুক্রবার প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে গ্রসম্যান বলেন, “বহু বছর ধরে আমি ‘গণহত্যা’ শব্দটি ব্যবহার করা থেকে বিরত থেকেছি। কিন্তু এখন যা দেখছি, এবং যাদের সঙ্গে কথা বলেছি তাদের অভিজ্ঞতা শোনার পর, আমি আর না বলে থাকতে পারছি না।” তিনি আরও বলেন, “হলোকাস্টের ইতিহাস থাকার পরও এখন ‘ইসরাইল’ এবং ‘অনাহার’ শব্দ দুটি একসঙ্গে উচ্চারণ করতে হচ্ছে—এটা খুবই ধ্বংসাত্মক।” সম্প্রতি ইসরায়েলের শীর্ষ মানবাধিকার সংগঠনও গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনকে ‘গণহত্যা’ বলে অভিহিত করে।

এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, গাজায় ধারাবাহিক হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। গত এক দিনে ইসরায়েলি হামলায় ৮৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৬০ হাজার ৩৩২ জন ফিলিস্তিনি। বিবৃতিতে বলা হয়, গত এক দিনে আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৫৫৪ জন। এ নিয়ে ইসরায়েলি হামলায় মোট আহতের সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ৪৭ হাজার ৬৪৩। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, অনেক মরদেহ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছে। সড়ক ও আশপাশের এলাকায় পড়ে থাকা অনেকের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। কারণ উদ্ধারকর্মীরা সেখানে যেতে পারছেন না।

ইসরায়েলের ওপর স্লোভেনিয়ার অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা: গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনকে গণহত্যা আখ্যা দিয়ে বিশ্বজুড়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া বাড়ছে। এরই অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে ফ্রান্স, কানাডা ও পর্তুগাল। এবার ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে ইসরায়েলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে স্লোভেনিয়া। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য দেশগুলোর মধ্যে প্রথমবারের মতো এমন সিদ্ধান্ত নিল মধ্য ইউরোপের এ রাষ্ট্রটি। গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট গোলোব এ ঘোষণা দেন। এর আগে গত জুলাইয়ের শুরুতে ইসরায়েলের দুই কট্টরপন্থি মন্ত্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল দেশটি।